উত্তর : সফর মাসকে কেন্দ্র করে অনেক মিথ্যা ও ভিত্তিহীন কথা সমাজে প্রচলিত আছে। এমনকি দৈনিক পত্রিকাতেও এই মিথ্যা কথাগুলো প্রচার করে থাকে। শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন, ‘সফর মাসের কুসংস্কার ও বিদ‘আতগুলোকে সংক্ষিপ্তাকারে জানার জন্য কয়েকটি পয়েন্ট সামনে রাখা অতীব যরূরী। যথা- (১) আরবীয় জাহিলিয়্যাতের যুগে সফর মাস ও তার বিরোধিতায় ইসলামী বিধান: জাহিলিয়্যাতের যুগে আরবরা সফর মাসকে কেন্দ্র করে দু’টি ঘৃণিত কাজ করত। যেমন (ক) তারা নিজেদের সুবিধার্থে সফর মাসকে ত্বরান্বিত বা বিলম্বিত করত। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘লোকেরা যিলহজ্জ মাসে ‘উমরাহ করাকে দুনিয়ার সবচেয়ে ঘৃণ্য পাপের কাজ বলে মনে করত। হারামের মাস হওয়ায় মুহাররাম মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ ছিল, কিন্তু তারা মুহাররাম মাসের স্থলে সফর মাসে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিষিদ্ধ মনে করত। তারা বলত, উটের পিঠের ক্ষত ভাল হলে, রাস্তার মুসাফিরের পদচিহ্ন মুছে গেলে এবং সফর মাস অতিক্রান্ত হলে ‘উমরাহ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তি ‘উমরাহ করতে পারবে। নবী (ﷺ) ও তাঁর ছাহাবীগণ যিলহজ্জ মাসে উমরাহ করে এই জঘন্য কুসংস্কারকে দূর করেন (ছহীহ বুখারী, হা/১৫৬৪; ছহীহ মুসলিম, হা/১২৪০)।
(খ) তারা এই মাসকে অশুভ ও কুলক্ষণে মনে করত। শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সফর মাসকে অশুভ, অকল্যাণকর অথবা বালা-মুছীবতের মাস মনে করা ইসলামী আক্বীদার ঘোর পরিপন্থী। এটা কুসংস্কার। রাসূল (ﷺ) তাদের এই কুসংস্কারের প্রতিবাদ করে বলেন, রোগে সংক্রমণ নেই, শুভ-অশুভ আলামত বলে কিছু নেই, কোন ভূত প্রেত বা অতৃপ্ত আত্মা নেই এবং সফর মাসের অশুভত্বের কোন অস্তিত্ব নেই’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৭০৭, ৫৭৫৭; ছহীহ মুসলিম হা/২২২০)। অথচ এর পরেও মুসলিম সমাজে অনেকের মধ্যে পূর্ববর্তী যুগের এ সকল কুসংস্কার থেকেই গেছে। এ মাসকে কেন্দ্র করে ধোঁকাবাজরা জাল বর্ণনা তৈরি করেছে। তারা জালিয়াতি করে রাসূল (ﷺ)-এর নামে বলেছে, এই মাস বালা মুছীবতের মাস। এই মাসে এত লক্ষ এত হাজার বালা নাযিল হয়। এই মাসেই আদম (আলাইহিস সালাম) ফল খেয়েছিলেন। এ মাসেই হাবীল নিহত হন। এ মাসেই নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর ক্বওম ধ্বংস হয়। এ মাসেই ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-কে আগুনে ফেলা হয়। এ মাসের আগমনে রাসূল (ﷺ) ব্যথিত হতেন। এই মাস চলে গেলে খুশী হতেন। তিনি বলতেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে সফর মাস অতিক্রান্ত হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করবে, আমি তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করার সুসংবাদ প্রদান করব’ ইত্যাদি ইত্যাদি। এছাড়াও তারা আরো অনেক কথা বানিয়েছে। মুহাদ্দিছগণ একমত যে, সফর মাসের অশুভত্ব ও বালা মুছীবত বিষয়ক সকল কথাই ভিত্তিহীন, মিথ্যা (মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ২/১১৩-১১৫ পৃ.)।
(২) সফর মাস সংক্রান্ত মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীছ : ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এ মাসের কুসংস্কার ও করণীয় সম্পর্কিত সমস্ত হাদীছ জাল। এই মাসের অমুক দিনে এই হয়, অমুক দিনে সেই হয় ইত্যাদি ইত্যাদি। বলা হয়, কেউ যদি সফর মাসের ১ম রাত্রিতে মাগরিবের পরে বা এশার পরে চার রাক‘আত নফল ছালাত আদায় করে, অমুক অমুক সূরা বা আয়াত এতবার পাঠ করে, তবে সে বিপদ থেকে রক্ষা পাবে, এত পুরস্কার পাবে ইত্যাদি। এগুলো সবই ভিত্তিহীন, বানোয়াট কথা (আল-মানারুল মুনীফ, পৃ. ৬৪; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২২৪০২৫)।
প্রশ্নকারী : মুবারক, দিনাজপুর।