উত্তর : বিশুদ্ধ নিয়তে শর্তহীনভাবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সৎ ও আল্লাহভীরু কমিটি দ্বারা পরিচালিত মসজিদে জমি বা সম্পদ ওয়াক্বফ করতে হবে। সাক্ষীর উপস্থিতিতে জমির মালিকানা হস্তান্তর করে নির্দিষ্ট মসজিদের নামে রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে। মৌখিকভাবে দান করাতে নানাবিধ সমস্যা হতে পারে। যেমন শয়তান যে কোন মুহূর্তে মানুষের আন্তরিক ইচ্ছাকে পরিবর্তন করে দিতে পারে বা ওয়ারিছগণ পরবর্তীতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই রেজিস্ট্রি করে দিতে হবে। তাছাড়া দান নিঃশর্ত হতে হবে। মসজিদ কর্তৃপক্ষ মসজিদ সংশ্লিষ্ট যেকোন কাজে উক্ত সম্পত্তি থেকে লব্ধ আয়-ব্যয় করতে পারবেন। প্রয়োজনে মসজিদের ইমাম বা মুওয়াযযিনের বেতনও দিতে পারেন (ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৭তম খণ্ড, পৃ. ৩১; আশ-শারহুল মুমতি‘, ১০তম খণ্ড, পৃ. ৫৫)। আর যদি কোন মসজিদের আয় মসজিদের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি হয়, তখন অতিরিক্ত আয় অন্য মসজিদের কাজে লাগানো জায়েয। যেহেতু অতিরিক্ত আয় একই ধরনের ওয়াক্বফের কাজে লাগানো হচ্ছে। এমনকি মসজিদের ওয়াক্বফ সম্পত্তির অতিরিক্ত আয় গরীবদের মাঝে বণ্টন করাও জায়েয’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং ১৩৭২০)।
আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন মদীনায় আগমন করলেন, তখন মসজিদ নির্মাণের নির্দেশ দিলেন এবং তিনি বললেন, ‘হে বানূ নাজ্জার! মূল্য নির্ধারিত করে তোমাদের এ বাগানটি আমার নিকট বিক্রি করে দাও’। তারা বললেন, না, আল্লাহর কসম! মহান আল্লাহ ব্যতীত কারো কাছে আমরা এর মূল্য চাই না’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৭৭১, ২৭৭৪, ৪২৮, ১৮৬৮, ২৭৭৯, ৩৮৩২; ছহীহ মুসলিম, হা/৫২৪)।
অন্য হাদীছে এসেছে, ইবনু ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ওমর ইবনু খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) খায়বার এলাকায় কিছু জমি লাভ করেন। তিনি আল্লাহ্র রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, আমি এমন একটি উত্তম জমি পেয়েছি, যা ইতিপূর্বে কখনো পাইনি। আপনি এ সম্পর্কে আমাকে কী নির্দেশ দিচ্ছেন? তিনি বলেন, তুমি ইচ্ছা করলে আসল জমিটি ওয়াক্বফ করে তার উৎপন্ন ছাদাক্বাহ করতে পার। সুতরাং ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) উক্ত জমিটি অসহায়-দরিদ্র, আত্মীয়-স্বজন, গোলাম মুক্ত, আল্লাহর পথে, অতিথি ও পথিকদের জন্য এ শর্তে ছাদাক্বাহ করলেন যে, আসল জমি বিক্রয় করা যাবে না, কাউকে দান করা যাবে না এবং কেউ এর ওয়ারিছ হবে না। তবে যে এর মুতাওয়াল্লী হবে তার জন্য তা থেকে সঙ্গত পরিমাণ খেতে বা বন্ধু-বান্ধবকে খাওয়ানোতে কোন দোষ নেই। তবে এ থেকে সঞ্চয় করা যাবে না (ছহীহ বুখারী, হা/২৭৭২, ২৭৩৭, ২৭৭৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৩২-১৬৩৩; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৩৭২০)।
প্রশ্নকারী : আব্দুন নূর, দিঘীরহাট কলেজ, সাপাহার, নওগাঁ।