উত্তর : এ মর্মে বর্ণিত হাদীছ জাল। যেমন-
عَنْ عَلِىّ بن أَبِيْ طَالِبُ ﷺ قَالَ لَا جُمُعَةَ وَلَا تَشْرِيْقَ إِلَّا فِىْ مِصْرٍ جَامِعٍ
আলী ইবনু আবূ তালীব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘শহর ছাড়া জুমু‘আহ ও তাশরীক নেই’। শায়খ আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছের সনদ দুর্বল (সিলসিলা যঈফাহ, হা/৯১৭); শায়খ শু‘আইব আল-আরনাউত্ব (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এর সনদ দুর্বল (তাখরীজু শারহিস সুন্নাহ, ৪/২১৯ পৃ.); ইমাম ইবনে কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছটি ছহীহ নয় (আল-মুগনী, ৩/২০৮ পৃ.); ইবনুল ক্বাইসারানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, হাদীছটি মাওকূফ। এর সনদে আবু ইসরাইল ইসমাইল নামক রাবী মিথ্যাবাদী এবং পরিত্যাক্ত (যাখীরাতুল হুফ্ফায, ৫/২৬৪৭; আল-কামিল ফিয যু‘আফা, ১/৪৬৯; বাইহাক্বী, সুনানুল কুবরা, হা/৫৮২৩; আল-আছার হা/৬০)।
অতএব এই জাল হাদীছের প্রতি আমল করা যাবে না। বরং পক্ষান্তরে জমহূর আলেম তথা মালিকী, শাফিঈ হাম্বালী মাযহাবত্রয় এবং ইমাম ইবনু হাযম (রাহিমাহুল্লাহ)-এর মতানুযায়ী, ‘জুমু‘আর ছালাত আদায় করার জন্য শহর শর্ত নয়, বরং গ্রামেও জায়েয’ (শারহু মুখতাছার খালীল, ২/৭৬; আল-মাজমূঊ লিন নাবাবী, ৪/৫০৫; আল-মুগনী, ২/২৪৪-২৪৬)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ! জুমু‘আর দিনে যখন ছালাতের জন্য ডাকা হয় তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে ধাবিত হও এবং কেনা-বেচা ত্যাগ কর, এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমারা জানতে’ (সূরা আল-জুমু‘আহ: ৯)। শায়খ আবু আব্দুর রহমান আল-আযীমাবাদী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এই আহ্বান সর্ব সাধারণের জন্য, এখানে শহর ও গ্রাম উভয়ই শামিল’ (আওনুল মা‘বূদ, ৩/২৮৪ পৃ.)। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন, ‘গ্রামে ও শহরে জুমু‘আহর ছালাত’ নামে (অধ্যায় নং-১১, অনুচ্ছেদ নং-১১)। অতঃপর তিনি নিম্নোক্ত হাদীছটি বর্ণনা করেন। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘রাসূল (ﷺ)-এর মসজিদে জুমু‘আর ছালাত অনুষ্ঠিত হবার পর প্রথম জুমু‘আর ছালাত অনুষ্ঠিত হয় বাহরাইনে ‘জুওয়াছা’ নামক স্থানে অবস্থিত আব্দুল ক্বাইস গোত্রের মসজিদে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৮৯২)। ‘জুওয়াছা’ বাহরাইনের একটি গ্রামের নাম। অতএব প্রমাণিত হল গ্রামে জুমু‘আর ছালাত আদায় করা যাবে (ফাৎহুল বারী, ২/৩৮০; শারহুস সুন্নাহ, ৪/২১৯; আওনুল মা‘বূদ, ৩/২৮০ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : আবূ সাঈদ মোল্লা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।