উত্তর : যে ব্যক্তি মদপানের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত থাকার পরও স্বেচ্ছায় মদপান করেছে, এমন নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির ত্বালাক্ব সংঘটিত হয়ে যাবে। কেননা গুনাহের কারণে তার বুদ্ধিমত্তা লোপ পেয়েছে। সুতরাং তাকে সতর্ক করার জন্য এবং তার শাস্তি স্বরূপ ত্বালাক্ব সংঘটিত হয়ে যাবে (কানযুদ দাক্বাঈক্ব, পৃ. ২৬৯; ফাতাওয়া আল-হিন্দিয়্যাহ, ১/৩৫৩ পৃ.; হাশিয়াতু ইবনে আবিদীন, ৩/২৪০; আল-কাফী, ২/৫৭১; আশ-শারহুল কাবীর, ২/৩৬৫; রাওযাতুত্ব ত্বালিবীন, ৮/২৩, ৬২; আল-মুবদি‘, ৭/২৩৩; কাশশাফুল ক্বিনা‘, ৫/২৩৪; শারহু মুনতাহাল ইরাদাত, ৩/৭৪; নায়নুল আওত্বার, ৬/২৮০; আল-মুগনী, ৭/২৮৯ পৃ.)।
তবে হানাফী, শাফিঈ ও হাম্বালী মাযহাবের একাংশ, যাহিরী মাযহাব এবং সালাফে ছলিহীনের একাংশের মতানুযায়ী ত্বালাক্ব সংঘটিত হবে না (আল-বানায়াতু শারহিল হিদায়াহ, ৫/৩০১; আল-মুহাল্লা, ৯/৪৭১; সুবুলুস সালাম, ২/২৬৫; মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ৩৩/১০২ পৃ.)। তাদের দলীল হল আল্লাহ তা‘আলার নিম্নোক্ত বাণী:
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَقۡرَبُوا الصَّلٰوۃَ وَ اَنۡتُمۡ سُکٰرٰی حَتّٰی تَعۡلَمُوۡا مَا تَقُوۡلُوۡنَ
‘হে মুমিনগণ! নেশাগ্রস্ত অবস্থায় তোমরা ছালাতের নিকটবর্তী হয়ো না, যতক্ষণ না তোমরা যা বল তা বুঝতে পার...’ (সূরা আন-নিসা : ৪৩)। আল্লাহ তা‘আলা নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির কথাকে গ্রহণযোগ্য করেননি। কেননা সে কী বলে তা নিজেই জানে না। যেমন, মাইয ইবনু মালিক নবী (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাকে পবিত্র করুন। আমি যিনা করে ফেলেছি। রাসূল (ﷺ) তাঁর ছাহাবীদের জিজ্ঞেস করলেন, সে কি পাগল? ছাহাবীরা বললেন, জি-না, সে পাগল নয়। অতঃপর তিনি জিজ্ঞেস করলেন, সে কি মদ্যপান করেছে? তখন এক ব্যক্তি দণ্ডায়মান হল এবং তার মুখ শুকে দেখল, সে তার মুখ থেকে মদের গন্ধ পেল না। বর্ণনাকারী বলেন, এরপর রাসূল (ﷺ) ঐ ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি যিনা করেছ? প্রতি উত্তরে সে বলল, জী- হ্যাঁ। অতএব রাসূল (ﷺ) তার প্রতি (ব্যভিচারের শক্তি প্রদানের) নির্দেশ দিলেন। এরপর তাকে পাথর নিক্ষেপ করা হল... (ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৯৫)।
এই হাদীছ প্রমাণ করে যে, যদি সে মদ্যপ অবস্থায় থাকত, তাহলে তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হত না। সুতরাং নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির ত্বালাক্বও সংঘটিত হবে না। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, তৃতীয় খলীফা উছমান ইবনু আফফান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেছেন, ‘নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির ত্বালাক্ব সংঘটিত হয় না’। ইবনুল মুনযির (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ছাহাবীদের মধ্যে কোন একজন ছাহাবী উছমান (রাযিয়াল্লাহু আনহু) ও ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর এই মতের বিরোধিতা করেননি। যে ব্যক্তি নেশাগ্রস্ত সে তো পাগল অথবা ঘুমন্ত ব্যক্তির আওতাধীন (মাজাল্লাতুল বুহূছিল ইসলামিয়্যাহ্ ৩২/২৫২; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ, ২৯/১৮; আল-ইনছাফ, ৮/৪৩৩ পৃ.)। অসংখ্য আলেম যেমন শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম, শায়খ ইবনে বায, শায়খ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুমুল্লাহ) ও শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) দ্বিতীয় মতটিকেই প্রাধান্য দিয়েছেন। অর্থাৎ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ত্বালাক্ব সংঘটিত হবে না (মাজমুউল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ৩৩/১০২; ইগাছাতুল লাহফান, পৃ. ২৬; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ র্দাব ইবনে বায, ২২/৪০; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ র্দাব ইবনে উছাইমীন, ১০/৩৭২;)।
প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ যায়েদ, লক্ষ্মীপুর।