উত্তর :উক্ত দাবী সঠিক নয়। খুৎবা স্ব স্ব জাতির ভাষায় দিতে হবে। কারণ খুত্ববার উদ্দেশ্য হচ্ছে উপদেশ দেয়া, শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণ করা। তাই খুৎবা উপস্থিত লোকদের ভাষায় না হলে তো সেটি অর্জিত হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِہٖ لِیُبَیِّنَ لَہُمۡ ‘আমি প্রত্যেক রাসূলকে তাঁর স্বজাতির ভাষায় পাঠিয়েছি। তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য’ (সূরা ইবরাহীম : ৪)। তবে অন্য ভাষার কোন বিজ্ঞ আলেম আগমন করলে তিনি খুৎবা তার ভাষায় প্রদান করবেন আর স্থানীয় আলেম সেটা মুছল্লীদের জন্য অনুবাদ করে বুঝিয়ে দিবেন। এটাই শারঈ নিয়ম। শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এ বিষয়ে সঠিক অভিমত হচ্ছে উপস্থিত মুছল্লীগণ যে ভাষা বুঝে, খত্বীবের জন্য সেই ভাষাতেই খুত্ববাহ দেয়া জায়েয। যদি উপস্থিত লোকজন আরবীয় না হয় এবং আরবী ভাষা না জানে, তাহলে খত্বীব তাদের ভাষাতে খুত্ববাহ দিবেন। কেননা এটাই হচ্ছে তাদেরকে বুঝানোর মাধ্যম। খুত্ববার উদ্দেশ্য হচ্ছে বান্দাদের কাছে আল্লাহর আদেশ ও নিষেধসমূহের বিবরণ দেয়া, তাদেরকে উপদেশ দেয়া, দিকনির্দেশনা দেয়া। তবে কুরআনের আয়াতগুলো আরবীতে বলা আবশ্যকীয়। অতঃপর উপস্থিত লোকদের ভাষায় তাফসীর করা। খুত্ববাহ স্থানীয় ভাষায় হওয়ার দলীল হচ্ছে আল্লাহর বাণী, ‘আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি। তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য’ (সূরা ইবরাহীম : ৪)। আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, বায়ান হতে হবে সম্বোধিতরা যে ভাষা বুঝে সে ভাষায়। এর আলোকে খত্বীব অনারবী ভাষায় খুত্ববাহ দিতে পারেন। (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ র্দাব, প্রশ্নোত্তর নং-৯৮৪; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১১২০৪১)।
শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘খুবই স্পষ্ট এবং অধিক নিকটবর্তী অভিমত হচ্ছে এ সম্পর্কে অবস্থাভেদে ভিন্ন ভিন্ন অভিমত দেয়া। সুতরাং বলা হবে যদি মসজিদের অধিকাংশ উপস্থিতি অনারব হয়, যারা আরবী বুঝে না, তাহলে অনারবী ভাষায় খুত্ববাহ দিতে কোন আপত্তি নেই। কিংবা আরবী ভাষায় খুত্ববাহ দিয়ে পরে এর অনুবাদ পেশ করা। আর যদি অধিকাংশ উপস্থিতি আরবী ভাষা বুঝেন এবং মোটামুটি ভাবটুকু তারা আয়ত্ত্ব করতে পারেন, তাহলে উত্তম হচ্ছে আরবী ভাষায় খুত্ববাহ দেয়া এবং নবী করীম (ﷺ)-এর আদর্শের বিপরীত না করা। বিশেষতঃ সালাফগণ এমন সব মসজিদে খুত্ববাহ দিতেন যেখানে অনারবরা থাকত। কিন্তু এমন কোন উদ্ধৃতি নেই যে, তারা খুত্ববাহ অনুবাদ করতেন। কারণ তখন আধিপত্য ছিল ইসলামের এবং নেতৃত্ব ছিল আরবী ভাষার। পক্ষান্তরে অন্য ভাষায় খুত্ববাহ দেয়া জায়েয হওয়ার পক্ষে শরী‘আতে একটি দলীল রয়েছে। তা হল আল্লাহর বাণী, وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِہٖ لِیُبَیِّنَ لَہُمۡ ‘আর আমি প্রত্যেক রাসূলকে তাঁর স্বজাতির ভাষাভাষী করে পাঠিয়েছি। তাদের কাছে পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য। (সূরা ইবরাহীম : ৪)।
অনুরূপভাবে ছাহাবায়ে কিরাম যখন পারস্য, রোম ইত্যাদি অনারব দেশে অভিযান পরিচালনা করেছেন তখন তারা অনুবাদকদের মাধ্যমে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দেয়ার পূর্বে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেননি’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১২/৩৭২ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : শাকিল আহমাদ, খিলগাঁও, ঢাকা।