উত্তর : যদি কোন নারী হায়েয অবস্থায় মীক্বাত অতিক্রম করেন এবং তিনি হজ্জ পালনে ইচ্ছুক হন তাহলে তিনি মীক্বাত থেকে ইহরাম বাঁধবেন। এরপর তিনি মক্কায় এসে হজ্জের যাবতীয় আমল সম্পাদন করবেন; শুধু বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফ ব্যতীত। তিনি হায়েয থেকে পবিত্র হয়ে এ আমল দু’টি পালন করার জন্য রেখে দিবেন। ইহরাম বাঁধার পর ত্বাওয়াফ করার পূর্বে যার হায়েয শুরু হয়েছে তিনিও এভাবে করবেন। আর যার ত্বাওয়াফ করার পর হায়েয শুরু হয়েছে তিনি হায়েয অবস্থাতেই ছাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সাঈ করবেন। এ প্রসঙ্গে সঊদী আরবের স্থায়ী কমিটির আলেমগণকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বলেন, ‘হায়েয হজ্জ আদায়ে প্রতিবন্ধক নয়। হায়েয অবস্থায় যে নারী ইহরাম বাঁধেন তিনি হজ্জের সকল আমল সম্পাদন করবেন; শুধু বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফ করা ব্যতীত। তাঁর হায়েয শেষ হওয়ার পর ও গোসল করার পর তিনি বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফ করবেন। নিফাসগ্রস্ত নারীর হুকুমও একই রকম। যদি হায়েযগ্রস্ত নারী হজ্জের রুকনসমূহ আদায় করেন তাহলে তার হজ্জ ছহীহ হবে’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমা, ১১/১৭২-১৭৩ পৃ.)।
শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যে নারী হজ্জ আদায় করতে চান তার জন্য ইহরাম না বেঁধে মীক্বাত অতিক্রম করা জায়েয হবে না; এমনকি সে নারী যদি হায়েযগ্রস্ত হন তবুও। কেননা তিনি হায়েযগ্রস্ত হলেও ইহরাম বাঁধবেন এবং তার ইহরাম বাঁধা শুদ্ধ হবে। কারণ নবী (ﷺ) যখন বিদায় হজ্জ পালনের উদ্দেশ্যে যুলহুলাইফাতে অবস্থান করছিলেন, তখন আবূ বকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর স্ত্রী আসমা বিনতে উমাইস (রাযিয়াল্লাহু আনহা) সন্তান প্রসব করলেন। তখন তিনি নবী (ﷺ)-এর কাছে লোক পাঠালেন: তিনি কী করবেন? তখন তিনি বললেন, আপনি গোসল করে নিন, একটা কাপড় বেঁধে নিন এবং ইহরাম বাঁধুন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১২১৮; ইবনু মাজাহ, হা/৩০৭৪)। নিফাসের রক্ত হায়েযের রক্তের ন্যায়।
তাই যে ঋতুবতী নারী উমরা কিংবা হজ্জ পালনের উদ্দেশ্য নিয়ে মীক্বাত পার হচ্ছে আমরা তাকে বলব, ‘আপনি গোসল করে নিন এবং একটা কাপড় বেঁধে নিন এবং ইহরাম বাঁধুন। استثفار শব্দটির অর্থ হচ্ছে- লজ্জাস্থানের উপরে একটা কাপড় বেঁধে নিবে। এরপর হজ্জ কিংবা উমরার ইহরাম করবে। কিন্তু সে নারী মক্কায় পৌঁছার পর পবিত্র হওয়ার আগে বায়তুল্লাহতে আসবে না এবং ত্বাওয়াফ করবে না। যেহেতু আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) যখন উমরা পালনকালে হায়েযগ্রস্ত হলেন নবী (ﷺ) তাকে বলেন, ‘একজন হাজী যা যা করে তুমিও তা তা করবে তবে, পবিত্র হওয়ার আগে বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফ করবে না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১২১১)।
ছহীহ বুখারীর অপর বর্ণনাতে আছে যে, আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেছেন, ‘তিনি যখন পবিত্র হয়েছেন তখন তিনি বায়তুল্লাহ ত্বাওয়াফ করেছেন ও ছাফা-মারওয়া সাঈ করেছেন’ (আবূ দাঊদ, হা/১৭৮৫, সনদ ছহীহ)। এতে প্রমাণিত হয় যে, কোন নারী যদি হায়েয অবস্থায় ইহরাম বাঁধেন কিংবা ত্বাওয়াফ করার আগে তার মাসিক শুরু হয় তাহলে তিনি পবিত্র হওয়া ও গোসল করার আগে ত্বাওয়াফ করবেন না এবং ছাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ (প্রদক্ষিণ) করবেন না। আর তিনি যদি পবিত্র অবস্থায় ত্বাওয়াফ করে থাকেন, কিন্তু ত্বাওয়াফ শেষ করার পর তার মাসিক শুরু হয় সেক্ষেত্রে তিনি উমরার আমল চালিয়ে যাবেন এবং ছাফা-মারওয়ার মাঝে সাঈ করবেন; এমনকি হায়েয অবস্থা সত্ত্বেও। তিনি মাথার চুল ছোট করে উমরার কাজ সমাপ্ত করবেন। কেননা ছাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ে সাঈ করার ক্ষেত্রে পবিত্রতা শর্ত নয় [সিত্তূনা সুয়ালান ফিল হায়যি, সুআল নং-০৫৪)।
প্রশ্নকারী : উম্মে হাবীবা, নারায়ণগঞ্জ।