উত্তর : যে অপরাধে দণ্ডবিধি, মৃত্যুদণ্ড, ক্বিছাছ বা প্রতিশোধের হুকুম আছে, এমন অপরাধ শনাক্ত করার ক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্টের উপর নির্ভর করা যাবে না। কারণ এটি সন্দেহ থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়। তবে যেগুলোর ক্ষেত্রে দণ্ডবিধি নেই সেগুলো শনাক্ত করার জন্য ডিএনএ টেস্টের উপর নির্ভর করা বৈধ।
‘ইসলামী সম্মেলন সংস্থা’র অধীনস্থ ‘ইসলামী ফিক্বাহ একাডেমী’ এবং ‘মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগে’র অধীনস্থ ‘ইসলামী ফিক্বাহ বোর্ড’-এর অধিনে এ ব্যাপারেও বেশ কয়েকবার সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত প্রকাশ করা হয়েছে। যেমন, পবিত্র মক্কা নগরীতে ২৬/১০/১৪২১-২২ হিজরী মোতাবেক ১০/০১/২০০২-৫ খ্রিষ্টাব্দে ডিএনএ টেস্ট (DNA TEST) সম্পর্কে ‘মুসলিম ওয়ার্ল্ড লিগে’র অধীনস্থ ‘ইসলামী ফিক্বাহ একাডেমী’র ষষ্ঠদশ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয় (ক্বারারু মাজমাঈল ফিক্বহী আল-ইসলামী রাবিত্বাতুল ‘আলাম আল-ইসলামী, সিদ্ধান্ত নং ৯৫, ৭/১৬ পৃ.)। ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে এ সম্পর্কে ‘ইসলামী সম্মেলন সংস্থা’র অধীনস্থ ‘ইসলামী ফিক্বাহ একাডেমী পরিষদে’র পরিচালনায় একটি ‘আন্তর্জাতিক ইসলামিক ফিক্বহ সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল (ক্বারারু মাজমাঈল ফিক্বহী আল-ইসলামী-মুনাযযামাতুত তা‘আউন আল-ইসলামী, সিদ্ধান্ত নং ১৯৪, ২০/৯ পৃ.)। উলামা, বিশেষজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারদের উপস্থিতিতে ডিএনএ টেস্ট (DNA TEST)-এর ব্যাপারে উলামা পরিষদ যে সিদ্ধান্তে উপনীত হন তার মধ্যে একটি হল- শারঈ পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান ও বিবাদের নিষ্পত্তি না হলে, সহায়ক হিসাবে- يجوز الاعتماد على البصمة الوراثية في مجال إثبات النسب في الحالات التنازع ونحوها ‘মতবিরোধ ও বিবাদের সময় পিতৃ পরিচয় প্রমাণ করার জন্য ডিএনএ টেস্টের উপর নির্ভর করা বৈধ’ (মুগনীউল মুহতাজ, ৩/৩০৪ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২১৯৬৬০)।
আরো বলা হয় যে, لا مانع شرعًا من الاعتماد على البصمة الوراثية في التحقيق الجنائي ‘অপরাধ বা অপরাধী শনাক্তকরণে ডিএনএ টেস্টের উপর নির্ভর করার ব্যাপারে কোন শারঈ নিষেধাজ্ঞা নেই। এমন অপরাধ যাতে হদ্দ (দণ্ডবিধি, মৃত্যুদণ্ড) বা ক্বিছাছ নেই, এমন অপরাধের শনাক্ত করার জন্য সহায়ক হিসাবে ডিএনএ টেস্টের উপর নির্ভর করা বৈধ। কিন্তু এমন অপরাধ যাতে দণ্ডবিধি, মৃত্যুদণ্ড বা ক্বিছাছ আছে, এ সকল অপরাধের ক্ষেত্রে ডিএনএ টেস্টের উপর নির্ভর করা বৈধ হবে না। কারণ এটি সন্দেহ থেকে পুরোপুরি মুক্ত নয়। আর হদ্দ বা ক্বিছাছ ধারণার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয় না, বরং এর জন্য সুস্পষ্ট সাক্ষ্য বা স্বীকারোক্তি যরূরী। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আমি যদি কাউকে সাক্ষ্য প্রমাণ ছাড়া রজম (পাথরের আঘাতে হত্যা) করতাম, তবে অবশ্যই অমুক নারীকে রজম করতাম। কারণ তার কথাবার্তায় ও দৈহিক বেশভূষায় এবং যারা তার কাছে যাতায়াত করে তাদের থেকেই অশ্লীলতা প্রকাশ পেয়েছে’ (ইবনু মাজাহ, হা/২৫৫৯, ২৫৬০; ছহীহ বুখারী, হা/৫৩১০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৯৭; নাসাঈ, হা/৩৪৭০; আহমাদ, হা/৩০৯৬)।
বহু গ্রন্থের প্রণেতা ও বিশিষ্ট আইনজ্ঞ উস্তায ড. মুহাম্মাদ জাবর আল-আলফী বলেন, ‘সাধারণ অপরাধ ও গুনাহ নির্ধারণে ডিএনএ টেস্টের উপর নির্ভর করা বৈধ। এর নির্ভরযোগ্যতা প্রায় ৯৯.৯৯৯৯%। কিন্তু হদ্দ বা ক্বিছাছমূলক অপরাধ বা গুনাহ প্রতিষ্ঠা করণার্থে এর উপর নির্ভর করা যাবে না। যেমন যিনা, ব্যভিচার, চুরি ইত্যাদি’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৮৮২৮৯; ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-৪৪৯৪৮৫)।
প্রশ্নকারী : আবরার জামীল, সাতক্ষীরা।