উত্তর : ফকীর-মিসকীন শ্রেণীর মানুষকে ফিদইয়া দিবে। নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, ‘সে ব্যক্তি প্রকৃত মিসকীন নয়, যাকে এক-দু’লোকমা ফিরিয়ে দেয় (যথেষ্ট হয়) বরং সে-ই প্রকৃত মিসকীন যার কোন সম্পদ নেই, অথচ সে চাইতে লজ্জাবোধ করে অথবা লোকদেরকে আঁকড়ে ধরে যাচ্ঞা করে না’ (ছহীহ বুখারী হা/১৪৭৬,; ছহীহ মুসলিম, হা/১০৩৯)। আর ইমাম ইবনু হাযম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ফক্বীর বলতে বুঝায় যার কোন মাল-সম্পত্তি নেই’ (আল-মুহাল্লা, ৬/১৪৮ পৃ.)। এই মিসকীনের বালিগ তথা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া শর্ত নয়। বরং যে ছোট শিশু খাবার খেতে পারে তাকেও ফিদিয়া দেয়া যাবে। দুগ্ধপোষ্য শিশুকে ফিদিয়া দেয়া যাবে (আল-মুগনী, ১৩/৫০৮; আল-ইনছাফ, ২৩/৩৪২; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ, ৩৫/১০১-১০৩ পৃ.)। তাই মিসকীনের সন্তান-সন্ততি, স্ত্রী ও পরিবারবর্গ যাদের ভরণপোষণ দেয়া তার উপর ওয়াজিব, তারাও এই সংখ্যার অন্তর্ভুক্ত হবে- যখন তারা তাদের যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু পাবে না এবং এই মিসকীন ব্যতীত তাদের উপর খরচ করার আর কেউ না থাকে। সেজন্য কোন মিসকীনকে যাকাতের সম্পদ থেকে ততটুকু দেয়া হয় যা তার নিজের জন্য ও তার পরিবারের জন্য যথেষ্ট হয় (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎয়া নং-৬৬৮৮৬)। আর ফক্বীর ও মিসকীনকে ততটুকু পরিমাণ যাকাত দিতে হবে যতটুকু তাদের নিজের জন্য ও তাদের পরিবারের জন্য পূর্ণভাবে যথেষ্ট হয় (রাউযুল মুরবি, ৩/৩১১ পৃ.)।
প্রত্যেক দিনের পরিবর্তে একজন করে মিসকীনকে খাদ্যদ্রব্য হতে অর্ধ ছা‘ (দেড় কেজি) পরিমাণ খাবার প্রদান করতে হবে। যেমন চাল, খেজুর বা অন্যকিছু। আর যদি এর সাথে কোন তরকারী বা গোশত দেয়া হয় তবে সেটা আরো উত্তম। অথবা খাবার বানিয়ে মিসকীনদেরকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানোর ব্যবস্থাও করা যায় (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৬৬৮৮৬)। ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আর যে বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি ছিয়াম পালনে অক্ষম সে মিসকীন খাওয়াবে। যেমন আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বৃদ্ধ হওয়ার পর ছিয়াম পালনে অক্ষম হয়ে পড়লে তিনি এক বছর অথবা দু’বছর প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন দরিদ্র ব্যক্তিকে রুটি ও গোশত খেতে দিতেন এবং ছিয়াম ত্যাগ করতেন’ (তা‘লীকু ছহীহিল বুখারী, হা/৪৫০৫-এর অধ্যায়; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৪৯৯৪৪)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তাকে প্রতিদিনের বদলে একজন মিসকীনকে অর্ধ ছা‘ স্থানীয় খাবার খাওয়াতে হবে। যেমন খেজুর, চাল বা অন্য কোন খাদ্যদ্রব্য। ওজন হিসাবে যার পরিমাণ হল প্রায় দেড় (১.৫) কিলোগ্রাম।
নবী করীম (ﷺ)-এর একদল ছাহাবী এই মর্মে ফাতাওয়া দিয়েছেন, যাঁদের মাঝে ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)ও রয়েছেন। আর যদি সে ব্যক্তি হতদরিদ্র হয় অর্থাৎ মিসকীন খাওয়াতে সক্ষম না হয়, তবে তার উপর অন্যকিছু বর্তাবে না। উল্লেখিত এই ফিদিয়া একজন মিসকীনকেও দেয়া যেতে পারে, আবার একাধিক মিসকীনকেও দেয়া যেতে পারে। মাসের শুরুতেও দেয়া যেতে পারে, মাঝখানেও দেয়া যেতে পারে, আবার শেষেও দেয়া যেতে পারে’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৫/২০৪ পৃ.)। শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সুতরাং স্থায়ী রোগে আক্রান্ত রোগী, অতিশয় বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাদের মধ্যে যারা ছিয়াম পালনে অক্ষম, তাদের উপর প্রতিদিনের ছিয়ামের পরিবর্তে একজন মিসকীন খাওয়ানো ওয়াজিব। সেটা খাদ্য দ্রব্য দান করার মাধ্যমে হোক অথবা রামাযান মাসের দিনের সমান সংখ্যক মিসকীনকে দাওয়াত করে খাওয়ানোর মাধ্যমে হোক। ঠিক যেমনটি আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বৃদ্ধ হওয়ার পর করেছেন। তিনি ৩০ জন মিসকীনকে একত্রে দাওয়াত করে খাওয়াতেন। এতে তাঁর এক মাসের ছিয়ামের কাফফারা হয়ে যেত (ফাতাওয়াউছ ছিয়াম, পৃ. ১১১)।
খাদ্যের পরিবর্তে সমমূল্যের অর্থ দ্বারা ফিদইয়া প্রদান করা যাবে না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা স্পষ্টভাবে খাদ্যের কথা উল্লেখ করেছেন (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৬৬৮৮৬)। শায়খ ছালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘যেমনটি আমি পূর্বেই উল্লেখ করেছি যে, অর্থকড়ি প্রদানের মাধ্যমে ইত্ব‘আম তথা মিসকীন খাওয়ানোর বিধান আদায় হবে না। মিসকীনকে খাদ্য খাওয়ানো বা প্রদান করা হবে স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য দিয়ে। প্রতিদিনের ছিয়ামের পরিবর্তে স্থানীয় এলাকায় প্রচলিত খাদ্যদ্রব্যের অর্ধ ছা‘ প্রদান করতে হবে। অর্ধ ছা‘ এর পরিমাণ প্রায় ১.৫ কেজি। তাই যে পরিমাণের কথা আমরা উল্লেখ করেছি সেই পরিমাণ স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য দিয়ে আপনাকে কাফ্ফারা দিতে হবে, অর্থ দিয়ে নয়। যেহেতু আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, وَ عَلَی الَّذِیۡنَ یُطِیۡقُوۡنَہٗ فِدۡیَۃٌ طَعَامُ مِسۡکِیۡنٍ ‘আর যাদের জন্য ছিয়াম রাখা কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য হল এর পরিবর্তে ফিদিয়া স্বরূপ একজন মিসকীনকে খাদ্য প্রদান করা’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৮৪)। এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা পরিষ্কারভাবে খাদ্যের কথা উল্লেখ করেছেন’ (আল-মুনতাক্বা মিন ফাতাওয়া শায়খ ছালিহ আল-ফাওযান, ৩/১৪০ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : মোখলেছুর রহমান, সাতক্ষীরা।