উত্তর : যদি সম্ভব হয় এবং বড় কোন ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে, তাহলে আযানের পর জামা‘আতের উদ্দেশ্যে রওনা দিবেন এবং ফিরে এসে কাজে যোগদান করবেন। কারণ একাকী ছালাত আদায় করা জায়েয নয়, বরং জামা‘আতের সঙ্গে ছালাত আদায় করা অপরিহার্য। আর যদি এমন চাকরি হয় যে, সেখান থেকে কোথাও যাওয়া সম্ভব নয়, বরং সেখানেই সারাক্ষণ উপস্থিত থাকতে হয়, যেমন তত্ত্বাবধায়ক বা পাহারাদারের ডিউটি অথবা এ জাতীয় অন্য কোন দায়িত্ব, যেখানে তাকে যে নির্দিষ্ট কাজের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে, সেই কাজের সঙ্গেই সর্বদা লেগে থাকতে হয়। কারণ তার অনুপস্থিতিতে বৃহৎ কোন ক্ষতি বা মারাত্মক কোন বিপদ ঘটে যেতে পারে। এক্ষেত্রে তারা তাদের কর্মস্থলেই ছালাত আদায় করবেন (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ্ র্দাব, ইবনু বায অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, https://binbay.org.sa/fatwas/18256/)।
শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, কিছু লোকের ছালাত আদায় করতে যাওয়া আর প্রয়োজনে কিছু লোকের কর্মস্থলে উপস্থিত থাকা দোষনীয় নয়। যখন তাদের সাথীরা ফিরে আসবেন তখন বাকিরা ছালাত আদায় করবেন। কেননা যদি তারা সকলেই একসঙ্গে মসজিদে গমন করেন তাহলে কাজটা বন্ধ হয়ে যাবে, যেহেতু কাজটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তাই ফেলে রেখে বা বন্ধ করে যাওয়াটা উচিত হবে না। এক্ষেত্রে তারা নির্ধারিত চৌহদ্দির মধ্যেই ছালাত আদায় করবেন। কেননা দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করা অপরিহার্য, তার ক্ষতিকরণ জায়েয নয়। সম্ভব হলে একজন ইমামের পিছনে সমস্ত কর্মী ছালাত আদায় করবেন, আর যদি সম্ভব না হয় তাহলে প্রত্যেক বিভাগের কর্মীরা আলাদা আলাদা জামা‘আত করবেন’ (লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, লিক্বা নং-১৪ ও ১৯)। শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, যদি কর্তৃপক্ষ কর্মস্থলে উপস্থিত থাকার ও কাজ জারী রাখার নির্দেশ প্রদান করেন। সেক্ষেত্রে আপনাদের মাসজিদে যাওয়ার অর্থ কর্মবিরতি। সুতরাং যারা এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাদের জন্য মসজিদের জামা‘আত থেকে দূরে থাকা দোষনীয় নয়।
বরং তারা চেষ্টা করবে কর্মস্থানেই জামা‘আতের সঙ্গে ছালাত আদায় করার। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তাহলে একাকী ছালাত আদায় করবেন। ফিক্বাহ বিশেষজ্ঞদের মতানুযায়ী যে সমস্ত কারণে জামা‘আত ত্যাগ করা যায়, তার মধ্যে একটি হল, ‘প্রয়োজনীয় জীবনোপকরণের ও জীবিকা অর্জনের ভয়ে’ (কাশ্শাফুল ক্বিনা, ১/৪৯৬ পৃ.; মাত্বালিবু আওলান নূহা ফী শারহি গায়াতুল মুনতাহা, ১/৭০২ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৭২৮৯৫, ২১২৫৪২)। ‘ইসলাম ওয়েব’ এর আলেমগণ বলেন, ‘কিছু আলেম বলেছেন, মালিক, কর্মনির্বাহী বা আধিকারিকরা অনুমতি না দিলে শ্রমিকরা জামা‘আত ত্যাগ করতে পারেন’ (ইসলাম ওয়েব, ফাতাওয়া নং ১৩০৮৯৮)। শরী‘আত সম্মত কারণে বাড়িতে একাকী বা জামা‘আত সহকারে ছালাত আদায় করলেও ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাকে সৎ নিয়তের কারণে পূর্ণ ছাওয়াব প্রদান করবেন (আশ-শারহুল মুমতি’, ৪/৩২৩ পৃ.)। কারণ রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘মানুষ অসুস্থ হলে অথবা সফরে থাকলে তার আমলনামায় তাই লেখা হয়, যা সে সুস্থ অবস্থায় বা বাড়ীতে থাকলে লেখা হত’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৯৯৬; আবূ দাঊদ, হা/৩০৯১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৯৬৭৯, ১৯৭৫৩)।
শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সিকিউরিটি গার্ড, বডিগার্ড অথবা অন্য কারোর জন্যই ছালাতকে তার নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বিলম্ব করা জায়েয নয়। কেননা আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, اِنَّ الصَّلٰوۃَ کَانَتۡ عَلَی الۡمُؤۡمِنِیۡنَ کِتٰبًا مَّوۡقُوۡتًا ‘নির্ধারিত সময়ে ছালাত আদায় করা মুমিনদের জন্য অবশ্য কর্তব্য’ (সূরা আন-নিসা ১০৩)। অর্থাৎ ছালাতকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফরয করা হয়েছে, এখানে নির্ধারিত সময় বলতে, আল্লাহ কর্তৃক প্রত্যেক ছালাতের জন্য নির্ধারিত ওয়াক্তসমূহকে বোঝানো হয়েছে। যা কিতাব ও সুন্নাতের অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং তাকে পাহারায় থাকাকালীন ছালাত আদায় করতে হবে, যেমনটি মুসলিমরা নবী করীম (ﷺ)-এর সাথে শত্রুদের বিরুদ্ধে লাইনে দাঁড়িয়ে ভয়ের মধ্যে ছালাত আদায় করেছিলেন। আল্লাহই উত্তম তাওফীক্ব দাতা (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ১০/৩৮০ পৃ.)। উক্ত আলোচনা থেকে প্রতিভাত হয় যে, তত্ত্বাবধায়ক বা পাহারাদারের ডিউটি, অথবা এ জাতীয় কোন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে জামা‘আত ত্যাগ করা দোষনীয় নয়। কিন্তু ছালাতকে তার নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আদায় করতে হবে। কোন অবস্থাতেই ওয়াক্ত অতিবাহিত করা যাবে না।
প্রশ্নকারী : আরিফ আহমাদ, ঢাকা।