উত্তর : কল্যাণের আশায় বা আরোগ্য লাভের উদ্দেশ্যে শাখা ধোয়া পানি পান করা হারাম। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘জিন-পরী, শয়তান, বদনযর বা চোখ লাগা থেকে আরোগ্য লাভের জন্য বাচ্চাদের আশেপাশে রসূন, ম্যাচের কাঠি, শামুক, কড়ি, শঙ্খ ইত্যাদি রাখা, লটকানো বা পরিধান করা শিরকের অন্তর্ভুক্ত। এগুলো পূর্ববর্তী মুশরিকদের আমলের ন্যায়’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ২৮/২৯২ পৃ.)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, তাহলে তোমরা ভেবে দেখেছ কি? আল্লাহ আমার অনিষ্ট চাইলে তোমরা তাঁকে ছাড়া যাদেরকে আহ্বান কর, তারা কি সেই অনিষ্ট দূর করতে পারবে? অথবা তিনি আমার প্রতি অনুগ্রহ করতে চাইলে তারা কি সেই অনুগ্রহকে রোধ করতে পারবে?’ (হে নবী!) আপনি বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। নির্ভরকারীরা তাঁরই উপর নির্ভর করে থাকে’ (সূরা আয-যুমার : ৩৮)। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলাই লাভ-ক্ষতি ও কল্যাণ-অকল্যাণের একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী। তাঁর একচ্ছত্র ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করা ও কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে তাঁর সমতুল্য মনে করা স্পষ্ট শিরক।
আমাদের উচিত আরোগ্য লাভের জন্য বৈধ চিকিৎসা করা অথবা ঝাড়-ফুঁক করা। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা এমন কোন ব্যাধি অবতীর্ণ করেননি, যার ঔষধ সৃষ্টি করেননি’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৬৭৮; নাসাঈ, সুনানুল কুবরা, হা/৬৮৬৫, ইবনু মাজাহ, হা/৩৪৩৯)। জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘প্রত্যেক রোগের জন্য ঔষধ রয়েছে। সুতরাং যখন রোগের জন্য সঠিক ঔষধ ব্যবহৃত হয়, তখন আল্লাহ তা‘আলার হুকুমে রোগী রোগমুক্ত হয়ে যায়’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২২০৪; ছহীহ ইবনু হিব্বান, হা/৬০৬৩)। অনুরূপভাবে বদনযর ও জিন-শয়তানের প্রভাব থেকে মুক্তির জন্য সকাল-সন্ধ্যায় বৈধ ঝাড়-ফুঁক করা এবং সকাল ও সন্ধ্যাকালীন যিকর-আযকারের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘কারো ওপর বদনযর লাগলে, কোন বিষাক্ত প্রাণী দংশন করলে এবং পাঁজরে খুঁজলি উঠলে রাসূল (ﷺ) ঝাড়ফুঁক করতে অনুমতি দিয়েছেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৭৩৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২১৯৫-২১৯৬; ইবনু মাজাহ, হা/৩৫১২; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৩৪৫)। বিশেষ করে সন্তান-সন্ততির নিরাপত্তার জন্য নিম্নোক্ত দু‘আটি পড়তে হবে। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, নবী (ﷺ) হাসান ও হুসাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-এর জন্য এই বলে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন-
أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ
‘আমি তোমাদের দু’জনের জন্য আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালিমাসমূহের মাধ্যমে প্রত্যেক শয়তান, ক্ষতিকর কীট-পতঙ্গ ও বিষাক্ত প্রাণী থেকে এবং সকল প্রকার বদনযর থেকে মুক্তি চাইছি’। অতঃপর তিনি বলতেন, তোমাদের পিতাও (ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) ইসমাঈল এবং ইসহাক উভয়ের জন্য এ দু‘আ পড়ে আশ্রয় চাইতেন)’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩৩৭১; আবূ দাঊদ, হা/৪৭৩৭)। এছাড়াও সকাল-সন্ধ্যায় সূরা ফাতিহা, সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক, সূরা নাস এবং আয়াতুল কুরসী পড়ে বাচ্চাকে ঝাড়ফুঁক করা উচিত।
প্রশ্নকারী : হিজবুল্লাহ বাহার, নারায়ণগঞ্জ।