উত্তর : কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মধ্যে সাতটি আসমান ও সাতটি যমীনের কথা বর্ণিত হয়েছে। কুরআনুল কারীমের মধ্যে সাত আসমানের কথা একাধিকবার বর্ণিত হয়েছে। যেমন সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৯; সূরা ইউনুস : ৩; সূরা বানী ইসরাঈল : ৪৪; সূরা আল-মুমিনুন : ১৭; সূরা আস-সাজদাহ : ৫; সূরা আল-ফুস্সিলাত : ১২; সূরা আল-মুলক : ৩; সূরা আন-নূহ : ১৫। এছাড়া ছহীহ বুখারীতে মি‘রাজের বিবরণ সম্পর্কিত হাদীছেও এর বিস্তারিত বর্ণনা পাওয়া যায় (ছহীহ বুখারী, হা ৩৮৮৭, ৩২০৭, ৩৩৯৩, ৩৪৩০, ৫৬০৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬৪)। পক্ষান্তরে সাতটি যমীনের কথা কুরআনুল কারীমের মধ্যে ইঙ্গিতপূর্ণ বা সাঙ্কেতিকভাবে শুধু একবার বর্ণিত হয়েছে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ্, যিনি সৃষ্টি করেছেন সাত আসমান এবং অনুরূপ যমীনও (সূরা আত-ত্বালাক্ব : ১৩)। তাফসীরকারকগণ বলেন,
وَمِنَ الْأَرْضِ مِثْلَهُنَّ" أي خلق من الأرض مثل عدد السماوات سبع أرضين، بكيفية لا يعلمها إلا الله.
‘অনুরূপ পরিমাণ যমীনও’ অর্থাৎ সাতটি আসমানের মত সাতটি যমীনও সৃষ্টি করেছেন। যার আকৃতি-প্রকৃতি সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ ব্যতীত কারোর কোন স্বচ্ছ ধারণা নেই। কেউ কেউ এর অর্থ করেছেন, সাতটি প্রদেশ। তবে এ কথা সঠিক নয়। বরং যেভাবে উপর্যুপরি সাতটি আসমান রয়েছে, অনুরূপ সাতটি যমীনও রয়েছে’ (তাফসীরে ইবনু কাছীর, ৮/১৫৬; তাফসীরে কুরতুবী, ১৮/১৭৬; আল-জাওয়াবুছ ছহীহ ইবনু তাইমিয়্যাহ, ১/৪২৯; তাফসীরে ইবনু জারীর, ২৩/৭৭-৮২; তাফসীরে সা‘দী, পৃ. ৮৭২; তাফসীরে ইবনু আত্বিয়্যাহ, ৫/৩২৮ পৃ.)। তবে হাদীছের মধ্যে এর প্রমাণ বিদ্যমান। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেছেন, مَنْ ظَلَمَ قِيْدَ شِبْرٍ مِنَ الْأَرْضِ طُوِّقَهُ مِنْ سَبْعِ أَرَضِيْنَ ‘যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জমি অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করবে, ক্বিয়ামতের দিন সাত তবক যমীনকে তার গলায় ঝুলিয়ে দেয়া হবে‘ (ছহীহ বুখারী, হা/২৪৫৩, ৩১৯৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬১২)। অন্য বর্ণনায় নবী (ﷺ) বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে কারোর জমির সামান্যতম অংশও আত্মসাৎ করবে, خُسِفَ بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِلَى سَبْعِ أَرَضِيْنَ ‘ক্বিয়ামতের দিন তাকে সাত তবক যমীনের নিচ পর্যস্ত ধসিয়ে দেয়া হবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৪৫৪, ৩১৯৬)। রাসূল (ﷺ) কোন গ্রাম বা শহরে প্রবেশের সময় নিম্নোক্ত দু‘আটি পাঠ করতেন।
اَللَّهُمَّ رَبَّ السَّمَاوَاتِ السَّبْعِ وَمَا أظْلَلْنَ وَرَبَّ الْأرَضِيْنِ السَّبْعِ وَمَا أَقْلَلْنَ
‘হে আল্লাহ! সাত আসমান এবং তা যা কিছু ছায়া দিয়ে রেখেছে তার প্রতিপালক! সাত যমীন এবং তা যা ধারণ করে রেখেছে তার প্রতিপালক!...‘ (ছহীহুল মুসনাদ, হা/৫০৯; সুনানুল কুবরা লিন নাসাঈ, হা/৮৭৭৫; আল-মুসতাদরাক লিল হাকিম, হা/২৪৮৮; ইবনু খুযাইমাহ, হা/২৫৬৫; ইবনু হিব্বান, হা/২৭০৯, সনদ ছহীহ)।
কেউ কেউ এটাও বলেন যে, প্রত্যেক যমীনে ঐ রকমই পয়গম্বর রয়েছেন, যে রকম পয়গম্বর তোমাদের যমীনে এসেছেন। যেমন আদমের মত আদম, নূহের মত নূহ। ইবরাহীমের মত ইবরাহীম। ঈসার মত ঈসা। কিন্তু এ কথা কোন ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত নয়।
প্রশ্নকারী : মামুন, কানসাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।