সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ০২:০৬ পূর্বাহ্ন
উত্তর : প্রথমতঃ এমন প্রত্যেক জিনিস যা মানুষের সুবিধার্থে শুধু কল্যাণকর কাজে ব্যবহৃত হয়, তার সার্ভিসিং বা মেরামতের কাজ করা নিশ্চিতরূপে বৈধ। যেমন ফ্রিজ, এসি, রাইস কুকার ইত্যাদি এবং এর মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করাও হালাল হবে। কেননা আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনি পৃথিবীর সব কিছুই তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেছেন’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৯)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, احْرِصْ عَلَى مَا يَنْفَعُكَ ‘যা তোমার জন্য কল্যাণকর তা অর্জনে তুমি আগ্রহী হও’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৬৪; ইবনু মাজাহ, হা/৭৯, ৪১৬৮)।

দ্বিতীয়তঃ এমন প্রত্যেক জিনিস যা হারাম কাজে ব্যবহৃত হয় অথবা হালালের তুলনায় হারাম কাজে ব্যবহৃত হওয়ার পরিমাণটাই বেশি। সেই সমস্ত জিনিস তৈরি করা, মেরামত করা ও ক্রয়-বিক্রয় করা সবই হারাম’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৩/১০৯ পৃ.)। আলেমগণ টিভি ও রেডিও সম্পর্কে ঘোষণা করেছেন যে, এ সমস্ত যন্ত্রপাতি ও পণ্যসামগ্রীর মাধ্যমে যা কিছু সম্প্রচার করা বা দেখানো হয় তার কিছু হারাম এবং কিছু হালাল। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে এ সমস্ত যন্ত্রগুলো হারাম জিনিস দর্শন ও শ্রবণ করার কাজেই ব্যবহার করা হয়ে থাকে, আর এটাই বাস্তবতা। সেইজন্য সকল মুসলিমের উচিত এমন প্রত্যেক জিনিসের সার্ভিসিং বা মেরামতের কাজ থেকে বিরত থাকা যা ন্যায়ের তুলনায় অন্যায় কাজেই বেশি ব্যবহৃত হয় (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২৬/২৭৩ পৃ.)। কেননা তা অন্যায় ও পাপাচারে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত। অথচ আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ায় পরস্পর সহযোগিতা কর এবং মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে অত্যধিক কঠোর’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ২)। উপরিউক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং অন্যায়, অসৎ ও হারাম কাজে সাহায্য, সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন’ (তাফসীর ইবনু কাছীর, ২/১২; তাফসীরে কুরতুবী, ৬/৪৬-৪৭ পৃ.)। অতএব প্রত্যেক মুসলিমের উচিত বৈধ ও উৎকৃষ্ট পন্থায় উপার্জন করার প্রচেষ্টা করা এবং পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন উপার্জনের পথ অন্বেষণ করা। নিঃসন্দেহে মোবাইল টিভি ও রেডিও মেরামত করা পবিত্র কাজ নয়। কেননা এ সমস্ত যন্ত্রগুলোর সিংহভাগ হারাম কাজে ব্যবহৃত হয় (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২৬/২৭৪-২৭৫ ও ১৪/৪২০ পৃ.)।

শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও তাকওয়ায় পরস্পর সহযোগিতা কর এবং মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ আযাব প্রদানে অত্যধিক কঠোর’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ২)। অতএব টিভি, রেডিওর পণ্যসামগ্রী মেরামত করা, অতঃপর তার মালিকের সেগুলোকে নিষিদ্ধ জিনিস দর্শন ও শ্রবণের কাজে ব্যবহার করা, নিশ্চিতরূপে এগুলো হারাম কাজে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হিদায়াত ও সৎপথের দিকে আহ্বান করে, তাঁর জন্য সে পথের অনুসারীদের প্রতিদানের সমপরিমাণ প্রতিদান রয়েছে। এতে তাদের প্রতিদান হতে সামান্যতমও হ্রাস করা হবে না। আর যে ব্যক্তি বিভ্রান্তি ও অশ্লীলতার দিকে আহ্বান করে, তার উপর সে পথের অনুসারীদের পাপের অনুরূপ পাপ বর্তাবে। এতে তাদের পাপরাশি সামান্য পরিমাণও লঘু করা হবে না’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৭৪)। সুতরাং এই ধরনের কাজ করা আপনার জন্য জায়েয নয়। তাই অন্য কোন কাজ অন্বেষণ করাই উত্তম হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আর যে কেউ আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য (উত্তরণের) পথ করে দেবেন এবং তিনি তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রিযিক দান করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে তার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট’।  তিনি আরো বলেন, ‘আর যে আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ্‌ তার জন্য তার কাজকে সহজ করে দেন’ (সূরা আত-ত্বালাক্ব : ২,৩,৪; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৪০৪৭২, ৩৯৭৪৪)।

ইসলামী শরী‘আতের স্থিরীকৃত নীতিমালাসমূহের মধ্যে রয়েছে যে, إذا اجتَمَع الحلالُ والحرامُ غُلِّبَ الحرامُ ‘যখন কোন বিষয়ে হালাল ও হারামের মাস‘আলা একত্রিত হয়, তখন হারামের মাসআলা প্রাধান্য পায় অর্থাৎ সেটাকে হারাম বলে গণ্য করতে হবে)’। নবী (ﷺ) বলেন, ‘নিশ্চয় হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট। আর উভয়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়, অনেক লোকই সেগুলো জানে না। যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক বিষয় থেকে দূরে থাকে সে তার দ্বীন ও মর্যাদাকে নিরাপদে রাখে, আর যে লোক সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হবে সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়বে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫২; ছহীহ মুসলিম হা/১৫৯৯)। তিনি আরো বলেন, دَعْ مَا يَرِيْبُكَ إِلَى مَا لَا يَرِيْبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِيْنَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيْبَةٌ ‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। যেহেতু সত্য হল শান্তি ও স্বস্তি এবং মিথ্যা হল দ্বিধা-সন্দেহ’ (তিরমিযী, হা/২৫১৮, সনদ ছহীহ)।


প্রশ্নকারী : তানভীর, কালীগঞ্জ, সাতক্ষীরা।




প্রশ্ন (২০) : জনৈক আলেম বলেন, ‘কোন ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় যতবার মসজিদে যাবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে ততবার মেহমানদারীর সামগ্রী তৈরি করে রাখেন’। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩০) : সমাজে প্রচলিত আছে যে, সফর মাসের শেষ বুধবারে সালাম অর্থাৎ শান্তির আয়াতগুলো লিপিবদ্ধ করে পানির পাত্রে সেটি রাখলে, অতঃপর সেই পানি পান করলে বরকত হাসিল হয়। এতে বিপদাপদ দূরীভূত হয়। উক্ত ধারণা কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) : মৃত ব্যক্তির নামে খাওয়ানো, চার দিন পর দু‘আ অনুষ্ঠান, চল্লিশা উৎযাপন, মৃত্যু বার্ষিকী উৎযাপন ইত্যাদির মাধ্যমে কি মৃত ব্যক্তি শাস্তিপ্রাপ্ত হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৩) : তাওহীদ ৩ প্রকার। তাওহীদে রুবূবিয়্যাহ, উলূহিয়্যাহ, আসমা ওয়াছ ছিফাত। এভাবে তাওহীদের প্রকার করা ও এই নামগুলো কখন থেকে ব্যবহার করা শুরু হয়েছে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩০) : কিছু বাড়ি আছে যেখানে কল এবং গৃহস্থালির বাসনপত্র সোনার তরল দিয়ে প্রলেপ দেয়া আছে, সেগুলো নেয়া এবং ব্যবহার করা কি হারাম? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৩) : ওয়াইফাই লাইন যদি শেয়ারে নেয়া হয়। তন্মধ্যে কেউ ইন্টারনেটে হারাম কাজ করে এবং কেউ ভালো কাজ করে। এমতাবস্থায় খারাপ কাজের পাপের ভাগ কি সবাইকে নিতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : মহিলার পেটে বাচ্চা থাকলে কি ত্বালাক্ব পতিত হয়? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪৪) : কবরে লাশকে কিভাবে রাখতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৫) : প্রচলিত আছে যে, যারা হজ্জ বা উমরা করতে গিয়ে মারা যাবে তারা জান্নাতী। উক্ত দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৩) : জুমু‘আর খুৎবাহ বসে বসে দেয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৯) : মসজিদের বারান্দায় ই‘তিকাফ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : জনৈক ব্যক্তির জখম ছিল, সে আত্মহত্যা করল। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, আমার বান্দা তার প্রাণ নিয়ে আমার সাথে তাড়াহুড়া করল। কাজেই আমি তার উপর জান্নাত হারাম করে দিলাম (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৬৪)। প্রশ্ন হল- যেখানে আল্লাহ তা‘আলা জান্নাত হারাম করে দিলেন, সেখানে বলা হয়, ‘সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী নয়’। উক্ত বক্তব্যের সঠিক ব্যাখ্যা কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ