উত্তর : পারবে না৷ দাবা বা পাশা খেলাকে ইসলাম সম্পর্ণরূপে হারাম ঘোষণা করেছে। নবী (ﷺ) বলেছেন, مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدَشِيْرِ فَكَأَنَّمَا صَبَغَ يَدَهُ فِيْ لَحْمِ خِنْزِيْرٍ وَدَمِهِ ‘যে ব্যক্তি পাশা খেলল, সে যেন তার হাত শূকরের গোশতেও রক্তে রঙিন করে তুলল’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২২৬০)। অন্যত্র তিনি বলেন, مَنْ لَعِبَ بِالنَّرْدِ فَقَدْ عَصَى اللهَ وَرَسُوْلَهُ ‘যে ব্যক্তি পাশা খেলল সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করল’ (আবূ দাঊদ, হা/৪৯৩৮)। ফক্বীহগণ বলেছেন, ‘পাশা বা দাবার ন্যায় এমন প্রত্যেক খেলা যা গুটি দিয়ে খেলা হয় তা হারাম’ (আল-মুগনী, ১৩/১৫৪-১৫৫; আল ইনছাফ, ১২/৫২-৫৩ পৃ.)।
উপমহাদেশীয় সমাজে প্রচলিত দাবা, লুডু ও ক্যারাম তিনটি খেলাই গুটি দিয়ে খেলা হয়। এগুলো পাশারই সমগোত্রীয় খেলা অর্থাৎ দাবা-লুডু-ক্যারাম একই খেলা। তাই এই জাতীয় সমস্ত খেলাই ইসলামে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। এর মধ্যে জুয়া থাকুক বা না থাকুক, সর্বাবস্থায় তা হারাম। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইমাম আবূ হানীফা ও ইমাম আহমদ ইবনু হাম্বল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘দাবা বা পাশা খেলোয়ারকে সালাম দিবে না। কারণ সে প্রকাশ্যে জঘন্য পাপে লিপ্ত’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া, ৩২/২৪৫ পৃ.)।
কোন খেলা নিষিদ্ধ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণসমূহ হলো-
(১) আল্লাহ তা‘আলার হক্ব আদায়ের সময় খেলা-ধুলা করা: সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার অধিকার বিনষ্ট করে কোন প্রকার খেলা-ধুলা করা যাবে না। যেমন, ছালাতের সময় কোন প্রকারের খেলা-ধুলা ও বিনোদন করা যাবে না (সূরা আন-নিসা: ১০৩; সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৩৮; ছহীহ বুখারী, হা/৫২৭, ২৭৮২)। উপরিউক্ত আলোচনা থেকে প্রমাণিত হয় যে, ছালাতের সময় খেলা-ধুলা করা বা দেখা সম্পূর্ণরূপে হারাম। অথচ ক্রীড়া প্রেমিরা বিভিন্ন টুর্নামেন্টের নামে প্রায়শই ছালাত ত্যাগ করে, যা ইসলামের দৃষ্টিতে ঘোরতর অপরাধ।
(২) এমন প্রত্যেক খেলা যা মানুষের মধ্যে ছালাত ও আল্লাহর যিকির সম্পর্কে উদাসীনতা তৈরি করে তা হারাম হিসাবেই বিবেচিত হবে (সূরা আন-নূর: ৩৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৩৭৪)।
(৩) এমন খেলা যাতে শরীরিক কোন উপকার নেই, শুধু সময়ের অপচয় হয়, তা নিষিদ্ধ (তিরমিযী, হা/২৪১৬-২৪১৭)।
(৪) পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা: শরী‘আতের বিধি-বিধান মেনে পোশাক পরিধান করতে হবে। হাফ-প্যান্ট, স্কিন-টাইট ও বিধর্মীদের পোশাক পরিধান করা যাবে না৷ পুরুষের জন্য উরু বা জঙ্ঘা আবৃত করা অপরিহার্য। যেমন জারহাদ (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) তাঁর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন আর তখন তাঁর উরু উন্মুক্ত অবস্থায় ছিল। রাসূল (ﷺ) তাঁকে বললেন, তোমার উরু ঢেকে রাখ, কেননা এটাও আভরণীয় অঙ্গ (তিরমিযী, হা/২৭৯৮; আবূ দাঊদ, হা/৪০১৪)।
(৫) পবিত্র কুরআনুল কারীমের মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা মুমিনের অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, وَ الَّذِیۡنَ هُمۡ عَنِ اللَّغۡوِ مُعۡرِضُوۡنَ ‘মুমিন তো তাঁরাই যারা অনর্থক কথা ও কর্ম থেকে বিমুখ’ (সূরা আল-মুমিনূন: ৩)। (৬) গুটির মাধ্যমে খেলা নিষিদ্ধ (ছহীহ মুসলিম, হা/২২৬০; আবূ দাঊদ, হা/৪৯৩৯; ইবনু মাজাহ, হা/৩৭৬৩)।
প্রশ্নকারী : নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক।