উত্তর : ইসলামে সূদভিত্তিক অর্থনীতিকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। এমনটি রাসূল (ﷺ) সূদখোর, দাতা, সাক্ষী ও লেখকের প্রতি অভিশাপ করেছেন (সূরা আলে ইমরান : ১৩০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৭-১৫৯৮)। এজন্য উক্ত পরিস্থিতিতে সূদী কারবারের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়ার কারণে দ্রুত তওবাহ করা আবশ্যক। এছাড়া বেশি-বেশি ইস্তিগফার, আমলে ছালেহ, ছালাত আদায় ও ছাদাক্বাহ ইত্যাদি সম্পাদন করা যরূরী। বিশুদ্ধ তাওবার মাধ্যমে গুনাহ মাপ হয় এবং পাপগুলো নেকীতে পরিবর্তন করে দেয়া হয় (সূরা আল-ফুরক্বান : ৬৮-৭০; সূরা ত্বোহা : ৮২; সূরা আয-যুমার : ৫৩; ইবনু মাজাহ, হা/৪২৫০, সনদ হাসান)। আর সূদী ঋণ থেকে তওবাহ করার পদ্ধতি হল, ‘সূদী ঋণগ্রহীতার উপর অপরিহার্য হল আল্লাহ তা‘আলার নিকট কঠোরভাবে তওবাহ করা। নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। এই ধ্বংসাত্মক ও মহাপাপে পুনরায় লিপ্ত না হওয়ার দৃত প্রতিজ্ঞা করা। অতঃপর সূদী ঋণের মূলধন পরিশোধ করা অপরিহার্য। আর হারাম সূদ পরিশোধ করা অপরিহার্য নয়। কারণ গ্রহীতার কাছ থেকে সূদ গ্রহণ করা ঋণদাতার জন্য হারাম হবে। কিন্তু যদি অশান্তি, বিশৃঙ্খলা ও ক্ষতির আশঙ্কা করেন, তবে তওবাহ ও ঘৃণার সাথে ঋণ পরিশোধ করবে (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৬০১৮৫)।
শরী‘আতের দৃষ্টিতে ঋণগ্রহীতার অবস্থা দুইভাগে বিভক্ত। যথা : (১) এমন ঋণগ্রহীতা, যারা ঋণ পরিশোধ করার ইচ্ছা রাখে না, বরং তারা ঋণের টাকা আত্মসাৎ করার পরিকল্পনায় থাকে। (২) এমন ঋণগ্রহীতা, যারা বাধ্যগত কারণে ঋণ নিয়েছে এবং ঋণ পরিশোধের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করে চলেছে। হাদীছের মধ্যে ঋণ পরিশোধ না করার যে ভয়াবহতা ও শাস্তির কথা বলা হয়েছে, তা মূলত ঐ ঋণগ্রহীতার জন্য যারা ঋণ পরিশোধ করার সদিচ্ছা রাখে না। যেমন আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, ‘মুমিন ব্যক্তির রূহ ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত তার ঋণের সাথে বন্ধক অবস্থায় থাকে’ (তিরমিযী, হা/১০৭৮; ইবনু মাজাহ, হা/২৪১৩, সনদ ছহীহ)। পক্ষান্তরে যারা ঋণ পরিশোধ করার দৃঢ় সংকল্প করার পরও অপারগ, তারা ইনশাঅল্লাহ ছাড় পেয়ে যাবে। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অপারগ ও অক্ষম অবস্থায় মারা গেছে, আশা করা যায় যে, সে ঐ শাস্তির আওতাধীন হবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আল্লাহ কারো উপর এমন কোন দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না যা তার সাধ্যাতীত’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৮৬)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যদি (ঋণগ্রহীতা) অভাবগ্রস্ত হয়, তাহলে তাকে সচ্ছল হওয়া পর্যন্ত অবকাশ দাও। আর যদি ঋণ মাফ করে দাও, তাহলে তা তোমাদের জন্য আরও উত্তম, যদি তোমরা উপলব্ধি কর’ (সূরা আল-বাক্বারাহ : ২৮০)। অনুরূপভাবে যে ব্যক্তি ঋণ পরিশোধের সৎ নিয়ত রাখে, কিন্তু তা পরিশোধ করতে না পেরে-ই মারা গিয়েছে, তাকেও আল্লাহ তা‘আলা ঐরূপ শাস্তির সম্মুখীন করবেন না। নবী করীম (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষের মাল (ধার) নেয় পরিশোধ করার উদ্দেশ্যে, আল্লাহ তা‘আলা তা আদায়ের ব্যবস্থা করে দেন। আর যে ব্যক্তি তা নেয় বিনষ্ট ও আত্মসাৎ করার নিয়তে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ধ্বংস করে দেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৩৮৭; ইবনু মাজাহ, হা/৫৯৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/৯৪০৭; মাজমূউ ফাতাওয়া ইিবনি বায, ২০/২২৯ পৃ.)।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) উপরিউক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, ‘পরিশোধ করার সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি নিঃস্ব ও অপারগ অবস্থায় মারা গিয়েছে, আশা করা যায় যে, আল্লাহ তা‘আলা তার পক্ষ থেকে আদায়ের ব্যবস্থা করে দেবেন’ (আল-ইখতিয়ারাত, পৃ. ১৬৬; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৮৩৩০০)।
প্রশ্নকারী : সূচনা আখতার, ময়মনসিংহ।