উত্তর : নাফস্ বা প্রবৃত্তির অনুসরণ করার ক্ষতি অত্যধিক। খেয়াল-খুশি, কামনা-বাসনা মানুষের সবচেয়ে বড় শত্রু। তাই যে কোন শত্রুর তুলনায় কামনা-বাসনার বিরুদ্ধে কঠিনভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া প্রতিটি মুমিনের উপর অপরিহার্য। আবূ হাযিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, قَاتِلْ هَوَاكَ أَشَدَّ مِمَّا تُقَاتِلُ عَدُوَّكَ ‘তুমি তোমার শত্রুর বিরুদ্ধে যেভাবে যুদ্ধ কর, তার থেকেও অত্যধিক কঠোরভাবে তোমার প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর’ (হিলয়াতুল আওলিয়া, ৩/২৩১ পৃ.)। এই খেয়াল-খুশিই সকল অশান্তি ও বিশৃঙ্খলার মূল এবং সকল বিপদ-আপদের কারণ। ইমাম সুফিয়ান ছাওরী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, يَا نَفْسُ تُوْبِىْ فَإِنَّ الْمَوْتَ قَدْ حَانَا * وَاعْصِ الْهَوَى فَالْهَوَى مَا زَالَ فَتَّانَا ‘হে মন! তুমি তওবা কর। কেননা মরণ তো অতি নিকটে। আর খেয়াল-খুশির অবাধ্য হবে। কেননা খেয়াল-খুশি তো সব সময় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী’ (কিতাবু মাজমু‘আতিল ক্বাছাইদিল যুহ্দিয়্যাত, ২/৯৫ পৃ.)।
আল্লাহ তা‘আলা প্রবৃত্তির দাসত্ব সম্পর্কে বলেন, اَرَءَیۡتَ مَنِ اتَّخَذَ اِلٰـہَہٗ ہَوٰىہُ ؕ اَفَاَنۡتَ تَکُوۡنُ عَلَیۡہِ وَکِیۡلًا ‘আপনি কি দেখেন না তাকে, যে তার প্রবৃত্তি ও কামনা-বাসনাকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি আপনি তার কর্মবিধায়ক হবেন’ (সূরা আল-ফুরক্বান : ৪৩)। তিনি আরো বলেন, ‘আপনি কি লক্ষ্য করেছেন তাকে, যে তার খেয়াল-খুশীকে নিজের উপাস্য করে নিয়েছে? আল্লাহ জেনেশুনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কর্ণে ও হৃদয়ে মোহর মেরে দিয়েছেন এবং তার চোখের ওপর রেখেছেন পর্দা। অতএব আল্লাহ মানুষকে বিভ্রান্ত করার পর কে তাকে পথনির্দেশ করবে? তবুও কি তোমরা উপদেশ গ্রহণ করবে না’? (সূরা আল-জাছিয়া : ২৩)।
প্রবৃত্তির অনুসরণকারীর বিধান ক্ষেত্র বিশেষে পরিবর্তিত হয়, কখনো তা কুফরী অথবা শিরকে আকবার হিসাবে বিবেচিত হয়, কখনো তা শিরকে আছগার হিসাবে বিবেচিত হয়। আবার কখনো তা কাবীরা গুনাহ হিসাবে বিবেচিত হয়, কিংবা কখনো তা ছাগীরা গুনাহ হিসাবে বিবেচিত হয়। যদি কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ ব্যক্তিকে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অস্বীকার করা অথবা তাঁকে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করা অথবা তাঁর থেকে বিমুখ হয়ে যাওয়ার মত ভয়াবহ গুনাহের দিকে ধাবিত করে, তবে সে মুশরিক এবং এটি শিরকে আকবার হবে। যেমনটি সূরা ফুরক্বান ও জাছিয়ার আয়াতে বর্ণিত হয়েছে। অনুরূপভাবে কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ যদি ব্যক্তিকে এমন গুনাহের দিকে ধাবিত করে যেগুলোর ‘শিরকে আকবার অথবা কুফরে আকবার’ হওয়ার বিষয়টি শারঈ দলীল দ্বারা প্রমাণিত। যেমন মৃত ব্যক্তির কাছে কোন কিছু চাওয়া অথবা তাকে প্রয়োজন পূরণকারী ও দুঃখ-কষ্ট নিবারণকারী মনে করা অথবা ছালাত ত্যাগ করা অথবা যিনা-ব্যভিচার ও মদ পান করাকে হালাল মনে করা ইত্যাদি। যদি কুপ্রবৃত্তির অনুসরণকারী আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি বা বস্তুর কসম খায় অথবা লোক দেখানোর জন্য কাজ করে, তবে সে মুশরিক কিন্তু এটি শিরকে আছগার হবে। কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ যদি ব্যক্তিকে বিদ‘আতের দিকে ধাবিত করে, তবে সে বিদ‘আতী। কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ যদি ব্যক্তিকে কাবীরা গুনাহের দিকে ধাবিত করে, যেমন যিনা-ব্যভিচার ও মদ পান করা ইত্যাদি, তবে সে ফাসিক্ব, পাপাচারী, দুরাচারী। আর কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ যদি ব্যক্তিকে ছাগীরা গুনাহের দিকে ধাবিত করে, তবে সে অবাধ্য, পাপী (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১৪৫৪৬৬)।
প্রশ্নকারী : ইমরান ফরহাদ, চট্টগ্রাম।