উত্তর : ‘সালাফ’ শব্দের আভিধানিক অর্থ পূর্ববর্তী, পূর্বসূরী, অগ্রবর্তী, অগ্রণী, পূর্বপুরুষ ইত্যাদি (সূরা আয-যুখরুফ : ৫৬; সূরা আন-নিসা : ২৩; লিসানুল আরাব, ৯ম খণ্ড, পৃ. ১৫৯)। পারিভাষিক অর্থে, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর যুগের সৎব্যক্তিগণ, ছাহাবীগণ ও তাবিঈগণকে সালাফ বলা হয়। আর যারা নিষ্ঠার সাথে তাঁদের অনুগমন করেন, তাঁদের পথ ও পদ্ধতির উপর অটল থাকেন এবং তাঁদের পদাঙ্কানুসরণ করেন, তাঁদেরকেই ‘সালাফী’ বলা হয়। অতএব সালাফী মানহাজ বলতে বুঝায়, ‘পূর্বসূরীদের তরীকা অর্থাৎ ছাহাবী ও তাবিঈগণ যে পথ, পদ্ধতি ও রীতি-নীতির উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন’।
আল্লামা সাফ্ফারীনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘সালাফদের মানহাজ বলতে উদ্দেশ্য হল- যে আদর্শের উপর ছাহাবায়ে কিরাম, তাবিঈগণ ও তাবি‘-তাবিঈগণ ছিলেন এবং দ্বীনের সেই ইমামগণ, যাদের ইমাম হওয়ার ব্যাপারে সাক্ষী প্রদান করা হয়েছে, দ্বীনে তাঁদের বিশাল মর্যাদা বিদিত হয়েছে এবং তাঁদের বাণীকে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকল যুগের মানুষই সাদরে গ্রহণ করেছে। তারা নয়, যাদেরকে বিদ‘আতী আখ্যায়িত করা হয়েছে অথবা যারা অসন্তোষজনক উপাধি নিয়ে প্রসিদ্ধ হয়েছে। যেমন খাওয়ারিজ, রাওয়াফিয, ক্বাদারিয়্যাহ, মুরজিআহ, জাবারিয়্যাহ, জাহমিয়্যাহ, মুতাযিলাহ, কারামিয়্যাহ প্রভৃতি সম্প্রদায় (লাওয়ামিঊল আনওয়ার, ১ম খণ্ড, পৃ. ২০)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যেসব মুহাজির ও আনছার ঈমান আনয়নে অগ্রবর্তী এবং প্রথম, আর যেসব লোক সরল অন্তরে তাদের অনুগামী, আল্লাহ তাঁদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁরাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। আর তিনি তাঁদের জন্য তৈরি করেছেন জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, সেখানে তাঁরা চিরস্থায়ী হবে। এ তো মহাসাফল্য’ (সূরা আত-তওবাহ : ১০০)। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, خَيْرُ النَّاسِ قَرْنِيْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ثُمَّ الَّذِيْنَ يَلُوْنَهُمْ ‘আমার যুগের লোকেরাই সর্বোত্তম ব্যক্তি। অতঃপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী (অর্থাৎ ছাহাবীরা)। অতঃপর যারা তাঁদের নিকটবর্তী (অর্থাৎ তাবিঈরা)’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৬৫২, ৩৬৫১, ৬৪২৯, ৬৬৫৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫৩৩, ২৬৩৪, ২৬৩৫, ২৫৩৬)।
শাইখুল ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ইমাম আবুল মুযাফফর সাম‘আনী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, ‘আমরা সুন্নাতের অনুসরণ করতে আদিষ্ট হয়েছি এবং বিদ‘আত হতে আমাদেরকে নিষেধ ও তিরস্কার করা হয়েছে। সুতরাং আহলুস সুন্নাহর প্রতীক হল, সালাফে ছালিহীনের অনুসরণ করা এবং প্রত্যেক নব উদ্ভূত ও বিদ‘আতকে বর্জন করা’ (ছাওনুল মানত্বিত্ব, পৃ. ১৫৮)। অর্থাৎ যে ব্যক্তি ছাহাবায়ে কিরাম, তাঁদের অনুগামী তাবিঈন, তাঁদের অনুগামী তাবি‘-তাবিঈন ও দ্বীনের ইমামগণের অনুসরণ করে ছহীহ হাদীছের সিদ্ধান্তকে মাথা পেতে গ্রহণ করে, কুরআন ও হাদীছকে তাঁদের বুঝ অনুযায়ী বোঝে এবং সেই মত আমল করে। তাওহীদে, আক্বীদায়, ইবাদতে, আচার-আচরণে, দাওয়াত ও তাবলীগে, শুধু তাঁদেরই অনুসরণ করে, সেই হল প্রকৃত ‘সালাফী’। সেই-ই হল সালাফী মানহাজ ও আদর্শের অনুসারী।
প্রশ্নকারী : হাবীবুর রহমান, নবাবগঞ্জ, দিনাজপুর।