দৈনন্দিন পঠিতব্য দু‘আ সমূহ
-ইখলাছ ডেস্ক
দু‘আ ও যিকিররাতে শয্যা গ্রহণের দু‘আ
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রাত্রিতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন অনেকগুলো দু‘আ পাঠ করতেন। যেমন,
দু‘আ-১ : রাতে শয্যা গ্রহণের সময় সূরা আল-ইখলাছ, সূরা আল-ফালাক্ব ও সূরা আন-নাস পড়া। এসময় দু’হাতের তালু একত্রিত করে তাতে ‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’, ‘কুল আ‘ঊযু বিরব্বিল ফালাক্ব’ ও ‘কুল আ‘ঊযু বিরব্বিন নাস’ পড়ে ফুঁ দেয়া। অতঃপর সেই দু’হাত দ্বারা তিনবার স্বীয় শরীরের মাথা থেকে শুরু করে চেহারা এবং শরীরের যতটুকু সম্ভব মুছে ফেলা (ছহীহ বুখারী, হা/৫০১৭; মিশকাত, হা/২১৩২)।
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ অবস্থায়ও অুনরূপ করতেন (ছহীহ বুখারী, হা/৫৭৪৮)। সূরা তিনটি নিম্নরূপ :
(১)
قُلۡ ہُوَ اللّٰہُ اَحَدٌ -اَللّٰہُ الصَّمَدُ -لَمۡ یَلِدۡ وَ لَمۡ یُوۡلَدۡ – وَ لَمۡ یَکُنۡ لَّہٗ کُفُوًا اَحَدٌ
(১) অর্থ : ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, তিনিই আল্লাহ একক (ও অদ্বিতীয়), আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, (সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী); তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি, এবং কেউই তাঁর সমকক্ষ নয়’ (সূরা আল-ইখলাছ : ১-৪)।
(২) قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ الۡفَلَقِ – مِنۡ شَرِّ مَا خَلَقَ – وَ مِنۡ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ – وَمِنۡ شَرِّ النَّفّٰثٰتِ فِی الۡعُقَدِ – وَ مِنۡ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ
(২) অর্থ : ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, আমি আশ্রয় চাচ্ছি ঊষার স্রষ্টার, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে, অনিষ্ট হতে অন্ধকার রাত্রির যখন তা আচ্ছন্ন হয়; এবং গিরায় ফুঁকদানকারীণির এবং হিংসুকের অনিষ্ট হতেও যখন সে হিংসা করে’ (সূরা আল-ফালাক্ব : ১-৫)।
(৩) قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ النَّاسِ – مَلِکِ النَّاسِ – اِلٰہِ النَّاسِ – مِنۡ شَرِّ الۡوَسۡوَاسِ الۡخَنَّاسِ – الَّذِیۡ یُوَسۡوِسُ فِیۡ صُدُوۡرِ النَّاسِ – مِنَ الۡجِنَّۃِ وَ النَّاسِ
(৩) অর্থ : ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, আমি আশ্রয় চাচ্ছি মানুষের প্রতিপালকের, যিনি মানবম-লীর বাদশাহ। যিনি মানবম-লীর প্রকৃত মা‘বূদ। আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে, যে লোকদের অন্তরে কুমন্ত্রণার উদ্রেক করে। জিনের মধ্য হতে এবং মানুষের মধ্য হতে’ (সূরা আন-নাস : ১-৬)।
ফযীলত
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, ‘কুলহু ওয়াল্ল-হু আহাদ’ কুরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান (ছহীহ মুসলিম, হা/৮১১; মিশকাত, হা/২১২৭)।
যে ব্যক্তি সূরা ইখলাছ পাঠ করতে ভালবাসে। আল্লাহ তা‘আলাও তাকে ভালবাসেন (ছহীহ বুখারী, হা/৭৩৭৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৮১৩; মিশকাত, হা/২১২৯)। এই সূরা তাকে জান্নাতে পৌঁছে দেয় (তিরমিযী, হা/২৯০১; মিশকাত, হা/২১৩০, সনদ ছহীহ) এবং জান্নাতকে ওয়াজিব করে দেয় (মুওয়াত্ত্বা মালেক, হা/৭০৯; তিরমিযী, হা/২৮৯৭; নাসাঈ, হা/৯৯৪; মিশকাত, হা/২১৬০, সনদ ছহীহ)।
‘কুল হুওয়াল্ল-হু আহাদ’ শেষ পর্যন্ত দশবার তেলাওয়াত করলে, তার জন্য আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করেন’ (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৫৬৪৮; সনদ হাসান; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৫৮৯)।
‘কুল আ‘ঊযু বিরব্বিল ফালাক্ব’ ও ‘কুল আ‘ঊযু বিরব্বিন নাস’ মর্যাদাসম্পন্ন সূরা (ছহীহ মুসলিম, হা/৮১৪; মিশকাত, হা/২১৩১)।
প্রবল ঝড় ও ঘোর অন্ধকারের সময় ‘কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিল ফালাক্ব’ ও ‘কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিন নাস’ দ্বারা আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করতে হয়। কেননা এই সূরাদু’টি আশ্রয় প্রার্থনা করার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম (আবূ দাঊদ, হা/১৪৬৩; মিশকাত, হা/২১৬২, সনদ ছহীহ)।
সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে সূরা ইখলাছ, সূরা ফালাক্ব ও সূরা নাস তেলাওয়াত করা উচিত। কেননা এই সূরাগুলো যে কোন বিপদাপদের মোকাবিলায় যথেষ্ট হবে (تَكْفِيْكَ مِنْ كُلِّ شَىْءٍ) (আবূ দাঊদ, হা/৫০৮২; তিরমিযী, হা/৩৫৭৫, সনদ হাসান ছহীহ)।
আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাওয়া জন্য ‘কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিল ফালাক্ব এবং ‘কুল আ‘ঊযু বিরাব্বিন নাস’ সবচেয়ে উত্তম সূরা (মুসনাদে আহমাদ, হা/১৭৪৯১; নাসাঈ, হা/৯৫৩, ৫৪৩৯; মিশকাত, হা/২১৬৪, সনদ ছহীহ)।
দু‘আ-২ : সূরা আল-কাফিরূন পড়া।[১]
ফযীলত
‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কা-ফিরূন’ পড়া কুরআনের এক-চতুর্থাংশের সমান।[২]
এই সূরা শিরক হতে মুক্ত রাখে।[৩]
(চলবে ইনশাআল্লাহ)
[১]. আবূ দাঊদ, হা/৫০৫৫; তিরমিযী, হা/৩৪০৩; দারেমী, হা/৩৪২৭; মিশকাত, হা/২১৬১।
[২]. তিরমিযী, হা/২৮৯৩, ২৮৯৪; সনদ হাসান।
[৩]. আবূ দাঊদ, হা/৫০৫৫; তিরমিযী, হা/৩৪০৩; দারেমী, হা/৩৪২৭; মিশকাত, হা/২১৬১।
প্রসঙ্গসমূহ »:
দু‘আ