উত্তর : প্রথমত উক্ত প্রশ্নের উত্তর জানার মাঝে কী ফায়েদা রয়েছে, সেটা উপলব্ধি করা উচিত। তাছাড়া আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে হাওয়াকে আদম (আলাইহিস সালাম)-এর স্ত্রী হিসাবে উল্লেখ করেছেন (সূরা আল-বাক্বারাহ : ৩৫)। তাই তাঁদের বিয়ে ও স্বামী-স্ত্রীর হওয়ার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে বড় সাক্ষ্য ও দলীল। আমাদের জন্য এতটুকু জানাই যথেষ্ট। কে তাদের বিয়ে পড়িয়েছেন, মোহরানা কত ছিল এ মর্মে ছহীহ কোন দলীল পাওয়া যায় না। বক্তাদের মুখে যে সমস্ত কাহিনী শুনা যায়, সেগুলো সব সনদ বিহীন বানোয়াট কথা।
যেমন- ‘আল-মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়াহ’ কিতাবে এসেছে যে,
أن الله سبحانه لما خَلق آدمَ خلق له حواءَ من ضِلَع من أضلاعه اليسرى وهو نائم فلما استيقظ ورآها سكَن إليها ومدّ يده إليها فمنعته الملائكةُ حتى يؤدِّي مهرَها فقال وما مهرُها؟ قالوا تصلِّي على محمد صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثلاثَ مرات
‘মহা পবিত্র আল্লাহ তা‘আলা আদম (আলাইহিস সালাম)-কে সৃষ্টি করলেন। অতঃপর যখন তিনি ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলেন তখন তার বাম পাঁজরের একটি হাড় থেকে হাওয়াকে সৃষ্টি করলেন। তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে হাওয়াকে দেখে তিনি মনে প্রশান্তি অনুভব করলেন। তাই তাঁকে স্পর্শ করার জন্য হাত বাড়ালে ফেরেশতাগণ তাকে মোহর পরিশোধ না করা পর্যন্ত স্পর্শ করতে নিষেধ করলেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর মোহর কী? ফেরেশতাগণ বললেন, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি ৩ বার দরূদ পাঠ করুন’।
ইবনুল জাওযী (মৃ. ৭৯৫ হি.) তার ‘সালওয়াতুল আহযান’ কিতাবে উল্লেখ করেছেন,
أنها لما سمعتْ كلام الملائكة طلبت مَهرها من آدم فسأل ربَّه كم يُعطيها؟ فقال صل على حبيبي محمد بن عبد الله عشرين مرة ففعل. وجاء في بعض الروايات- أن اللهَ زوّجه إيّاها وخطب في ذلك خطبة
‘হাওয়া (আলাইহিস সালাম) ফেরেশতাদের কথোপকথন শোনার পর আদম (আলাইহিস সালাম) থেকে তার মোহর চাইলেন। তখন তিনি আল্লাহ তা‘আলাকে জিজ্ঞেস করলেন, কত মোহর দিবেন? আল্লাহ তা‘আলা বললেন, ‘তুমি আমার হাবিব মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর উপর ২০ বার দরূদ পাঠ কর’। তিনি তাই করলেন। অন্য বর্ণনায় এসেছে, স্বয়ং আল্লাহই আদম-হাওয়া (আলাইহিমাস সালাম)-এর বিয়ে পড়িয়েছেন এবং বিয়েতে খুত্ববা পাঠ করেছেন (আহমাদ ইবনু মুহাম্মাদ আল-কাসত্বালানী (৮৫১-৯২৩ হিঃ), আল-মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়াহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৭৬)।
কিন্তু উক্ত কাহিনীর কোন সনদ নেই। অন্য এক জায়গায় ১০০ বার দরূদ পড়ার কথাও এসেছে। আরও বলা হয়েছে, ৭০ বার দরূদ পাঠ করার পর তার নিঃশ্বাস শেষ হওয়ায় আল্লাহ তা‘আলা ৩০ বার দরূদ পড়া বাকি রেখেছেন। আর সেখান থেকেই মোহরকে দু’ভাগ করা হয়েছে। একভাগ নগদ আর একভাগ বাকি। বিশিষ্ট মুহাদ্দিছ আল্লামা শায়খ রশিদ রেযা বলেন, ما ذُكِرَ في ذلك كذب صريح لا حاجة لإطالة الكلام في رده ‘এ ব্যাপারে যে সব কথা বলা হয়েছে সেগুলো স্পষ্টই মিথ্যাচার। সুতরাং তার জবাব দেয়ার জন্য লম্বা আলোচনার প্রয়োজন নেই’।
মোহরের বিষয়ে এক হাজার বার দরূদ পড়ার কথাও এসেছে। আবার শত বা হাজারের বর্ণনায় এক শ্বাসে পড়ে শেষ করার শর্তও রয়েছে। এমন কথাও আছে যে, আদম (আলাইহিস সালাম) সত্তর বা পাঁচশ বার পর্যন্ত একশ্বাসে পড়তে পেরেছেন। তারপর আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, এটা মহরে মুয়াজ্জাল (বিয়ের সময় তাৎক্ষণিক আদায়যোগ্য মহর) আর বাকি মহর তোমার দায়িত্বে রইল পরে আদায় করতে হবে। এগুলো কোনটার পক্ষেই হাদীছ নেই। সুতরাং এসব বর্ণনার প্রতি ভ্রুক্ষেপ করারও প্রয়োজন নেই (আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়াহ, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫০, বুসতানুল ওয়ায়িজীন, পৃ. ৪৭৮, ই‘আনাতুত ত্বালিবীন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৯৫; ফাতাওয়া আযহার, ৮ম খণ্ড, পৃ. ১৩১)।
প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ, বগুড়া।