উত্তর : প্রথমতঃ শরী‘আতে একই সঙ্গে তিন ত্বালাক্ব দেয়ার কোন বিধান নেই। তাই এটা হাদীছ বিরোধী। তাই এক সঙ্গে তিন তালাক দিলেও এক তালাক গণ্য হবে। এজন্য নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফিরিয়ে নেয়া যাবে।
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ﷺ قَالَ كَانَ الطَّلَاقُ عَلَى عَهْدِ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ وَأَبِيْ بَكْرٍ وَسَنَتَيْنِ مِنْ خِلَافَةِ عُمَرَ طَلَاقُ الثَّلَاثِ وَاحِدَةً فَقَالَ عُمَرُ بْنُ الْخَطَّابِ إِنَّ النَّاسَ قَدِ اسْتَعْجَلُوْا فِيْ أَمْرٍ قَدْ كَانَتْ لَهُمْ فِيْهِ أَنَاةٌ فَلَوْ أَمْضَيْنَاهُ عَلَيْهِمْ. فَأَمْضَاهُ عَلَيْهِمْ
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ﷺ)-এর যুগে এবং আবু বাকর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগে ও ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর খিলাফাতের প্রথম দু’বছর পর্যন্ত তিন ত্বালাক্ব এক ত্বালাক্ব¡ বলে গণ্য হত। পরে ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বললেন, লোকেরা একটি বিষয়ে অতি ব্যস্ততা দেখিয়েছে যাতে তাদের জন্য ধৈর্যধারণের ও সুযোগ গ্রহণের অবকাশ ছিল। এখন যদি বিষয়টি তাদের জন্য কার্যকর সাব্যস্ত করে দিই..। সুতরাং তিনি তা তাদের জন্য কার্যকারী করলেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৭২; আবূ দাঊদ, হা/২২০০)।
উল্লেখ্য, ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে শুরু করে ওমর (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর যুগ পর্যন্ত তিন ত্বালাক্বকে এক ত্বালাক্ব গণনা করা হত। অতঃপর মানুষের মধ্যে ত্বালাক্ব প্রদানের প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ধমকী স্বরূপ এক বৈঠকে প্রদত্ত তিন ত্বালাক্বকে তিন ত্বালাক্ব হিসাবেই গণ্য করার নির্দেশ জারি করা হয়। যা ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক ও সাময়িক (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২০/১৬৩-১৬৪)।
عن سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ أَخْبَرَ أَنَّهُ سَمِعَ ابْنَ عَبَّاسٍ قَالَ إِذَا حَرَّمَ الرَّجُلُ عَلَيْهِ امْرَأَتَهُ فَهْىَ يَمِيْنٌ يُكَفِّرُهَا وَقَالَ ( لَقَدۡ کَانَ لَکُمۡ فِیۡ رَسُوۡلِ اللّٰہِ اُسۡوَۃٌ حَسَنَۃٌ )
সাঈদ ইবনু জুবায়র (রাহিমাহুল্লাহ) বর্ণনা করেন যে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে বলতে শুনেছেন, কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে নিজের জন্য হারাম ঘোষণা করলে তা কসম সাব্যস্ত হবে, তার কাফফারাহ আদায় করবে। তিনি আরো বলেছেন, তোমাদের জন্য রাসূলুলাহ (ﷺ)-এর মধ্যে উত্তম আদর্শ রয়েছে (ছহীহ মুসলিম, হা/১৪৭৩; ছহীহ বুখারী, হা/৫২৬৬)।
আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আবূ রুকানাহ তাঁর স্ত্রীকে একসঙ্গে তিন ত্বালাক্ব প্রদান করেন। অতঃপর তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েন। সুতরাং নবী (ﷺ) তাঁর স্ত্রীকে ফিরিয়ে দিলেন এবং বললেন, ‘এটা এক ত্বালাক্ব’ (আবূ দাঊদ, হা/২১৯৬; মাজমূঊ ফাতাওয়া লিইবনি বায, ২২/১৩১ পৃ.; ২১/২৭৪ ও ৩৯৯ পৃ.; আওনুল মা‘বূদ, ৬/১৩৮ পৃ.; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৩৭৮; মাজমূঊল ফাতাওয়া লিইবনি তাইমিয়্যাহ, ৩৩/৮৫ পৃ.)। অতএব উক্ত আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, এক মাজলিসে বা এক সঙ্গে তিন ত্বালাক্ব দিলে মূলত তা এক ত্বালাক্ব হিসাবে গণ্য হবে।
এক ত্বালাক্ব দেয়ার পর যদি ইদ্দতকাল (অর্থাৎ তিন তুহুর বা তিন মাস) অতিবাহিত হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে ত্বালাক্বপ্রাপ্তা স্ত্রীকে নতুন বিবাহের মাধ্যমে ফিরিয়ে নেয়া জায়েয। এক্ষেত্রে স্ত্রীর সম্মতি, অভিভাবক এবং দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতি এবং নতুন মোহরানা অপরিহার্য’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২০/২৩৫-২৩৬; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ্ লিইবনে বায, ২২/৩১৫-৩১৭; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২২৩৫৭২)। এ প্রসঙ্গে হাসান (রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত যে, মা‘কীল ইবনু ইয়াসার (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর বোন এক ব্যক্তির বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। সে তাকে ত্বালাক্ব দিয়েছিল। অতঃপর তাকে ফিরিয়ে না নিয়ে তার থেকে দূরে অবস্থান করতে থাকে, আর এভাবেই তার ইদ্দতকাল অতিবাহিত হয়ে গেল, পরক্ষণেই সে আবার তার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাল। মা‘কীল (রাযিয়াল্লাহু আনহু) এতে খুবই রাগান্বিত হলেন এবং তিনি বললেন, সময় থাকতে ফিরিয়ে নিল না, এখন আবার প্রস্তাব পাঠাচ্ছে! তিনি বিয়ের ব্যাপারে তাদের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন। এরপর আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতটি অবতীর্ণ করেন,
وَ اِذَا طَلَّقۡتُمُ النِّسَآءَ فَبَلَغۡنَ اَجَلَہُنَّ فَلَا تَعۡضُلُوۡہُنَّ اَنۡ یَّنۡکِحۡنَ اَزۡوَاجَہُنَّ اِذَا تَرَاضَوۡا بَیۡنَہُمۡ بِالۡمَعۡرُوۡفِ
‘আর তোমরা যখন স্ত্রীদেরকে ত্বালাক্ব দাও এবং তারা তাদের ‘ইদ্দতকাল পূর্ণ করে, অতঃপর তারা যদি বিধিমত পরস্পর সম্মত হয়, তাহলে স্ত্রীগণ নিজেদের স্বামীদেরকে পুনর্বিবাহ করতে চাইলে তাদেরকে বাধা দিও না’ (সূরা আলÑবাক্বারাহ : ২৩২)। এরপর রাসূল (ﷺ) মা‘কীল (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে ডাকলেন এবং তাঁর সম্মুখে আয়াতটি পাঠ করলেন। তিনি তার অহমিকা পরিত্যাগ করতঃ আল্লাহর আদেশের আনুগত্য করেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৩৩১, ৪৫২৯, ৫১৩০; আবূ দাঊদ, হা/২০৮৭; তিরমিযী, হা/২৯৮১)।
প্রশ্নকারী : জয়নুল আবেদীন, নরসিংদী।