উত্তর: এ দৃষ্টিভঙ্গি ভুল। কারণ যার জন্য ইচ্ছা রিযিকের সমৃদ্ধিদানকারী ও সংকোচনকারী হচ্ছেন আল্লাহ তা‘আলা। অধিক জনসংখ্যা রিযিক সংকোচনের কারণ নয়। যেহেতু এ পৃথিবীতে যত প্রাণী আছে সকলের রিযিকের ভার আল্লাহর উপরে। তবে, আল্লাহ তা‘আলা কোন হেকমতের কারণে রিযিক দেন এবং কোন হেকমতের কারণে রিযিক থেকে বঞ্চিত করেন। যে ব্যক্তি এমন বিশ্বাস করে তার জন্য নসীহত হচ্ছে- সে যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং এ বাতিল বিশ্বাস ত্যাগ করে। সে যেন জেনে রাখে, এ বিশ্বজগতের সদস্য যতই বৃদ্ধি পাক না কেন আল্লাহ চাইলে তাদের সকলের রিযিকে সমৃদ্ধি দিতে পারেন। কিন্তু আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘যদি আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে রিযিকে সমৃদ্ধি দিতেন, তবে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ নাযিল করেন। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দা সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত ও সূক্ষ্মদর্শী’ (সূরা আশ-শূরা: ২৭)।
কোন সন্দেহ নেই জন্মনিয়ন্ত্রণ ও জনসংখ্যা হ্রাস করার প্রচারণা নবী (ﷺ)-এর নির্দেশের সাথে সাংঘর্ষিক। নবী (ﷺ)-এর নির্দেশ হচ্ছে, ‘তোমরা প্রমময়ী ও অধিক সন্তানপ্রসবা নারীকে বিয়ে কর। কেননা আমি তোমাদের সংখ্যাধিক্য নিয়ে অন্যান্য উম্মতের ওপর গর্ব করবো’ (আবূ দাঊদ, হা/২০৫০; ‘ইরওয়াউল গালীল, হা/১৭৮৪)। আল্লাহ তা‘আলা সকল মাখলূকের রিযিক নিশ্চয়তা দানকারী। তিনি বলেন, ‘আর পৃথিবীতে বিচরণশীল যে কারো রিযিক আল্লাহর উপর’ (সূরা হূদ: ৬)। তাই জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিরোধ করা; সেটা গর্ভ-নিরোধক বিভিন্ন উপায় গ্রহণের মাধ্যমে কিংবা গর্ভপাত ঘটানোর মাধ্যমে কিংবা অন্য কোন মাধ্যমে; এ বিশ্বাস থেকে যে, মজুদকৃত সম্পদ অতিরিক্ত জনসংখ্যার জন্য যথেষ্ট নয়, কিংবা জনকল্যাণের দাবী হচ্ছে- জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমানো; নিশ্চয় এটি আল্লাহর রুবুবিয়্যত (প্রতিপালকত্ব) ও তাঁর রিযিকের প্রশস্ততাকে অস্বীকার করার নামান্তর। এটি মুশরিকদের বিশ্বাসের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ; যারা দারিদ্র্যের ভয়ে তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘দারিদ্র্যের কারণে সন্তানদেরকে হত্যা করো না, আমি তোমাদেরকে ও তাদেরকে রিযিক দেই’ (সূরা আল-আন‘আম: ১৫১)।
তিনি আরও বলেন, ‘দারিদ্র্যের ভয়ে তোমাদের সন্তানদেরকে হত্যা করো না। তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমিই রিযিক দিয়ে থাকি। নিশ্চয় তাদেরকে হত্যা করা মহা অপরাধ’ (সূরা বনী ইসরাইল: ৩১)। অধিক জনসংখ্যা আল্লাহর একটি নে‘মত; এ নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করা ও নিরংকুশভাবে তাঁর ইবাদত করা কর্তব্য। এ কারণে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবী শু‘আইব (আলাইহিস সালাম)-এর কথা উল্লেখ করেন যে, তিনি তাঁর কওমকে আল্লাহর কিছু নে‘মতের কথা স্মরণ করিয়ে দিতে গিয়ে বলেন, ‘স্মরণ কর, যখন তোমরা সংখ্যায় কম ছিলে; তিনি তোমাদের সংখ্যা বৃদ্ধি করলেন’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ৮৬)। অধিক জনসংখ্যা উম্মতের মর্যাদা ও শত্রুর বিরুদ্ধে বিজয়ী হওয়ার মাধ্যম। তাই তো আল্লাহ তা‘আলা বনী ঈসরাইলদের সম্পর্কে বলেন, ‘অতঃপর আমি তোমাদের জন্য তাদের বিরুদ্ধে পালা ঘুরিয়ে দিলাম, তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও পুত্রসন্তান দ্বারা সাহায্য করলাম এবং তোমাদেরকে জনসংখ্যার দিক দিয়ে একটা বিরাট বাহিনীতে পরিণত করলাম’ (সূরা বনী ইসরাঈল: ৭)।
শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘জন্ম-নিয়ন্ত্রণকে সমর্থন দেয়া নিঃসন্দেহে এটি মুসলিমদের শত্রুদের চক্রান্ত। শত্রুরা চায় মুসলিমদের সংখ্যা না বাড়ুক। কারণ মুসলিমদের সংখ্যা বাড়লে শত্রুরা সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে এবং মুসলিমরা নিজেরা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে যেতে পারে: নিজেরা চাষাবাদ করবে, ব্যবসা বাণিজ্য করবে- এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটবে ও আরও নানামুখি কল্যাণ অর্জিত হবে। আর যদি তারা সংখ্যায় অল্প হয়ে থাকে তাহলে লাঞ্ছিত হয়ে থাকবে এবং সবকিছুতে অন্যের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে’ (ফাতাওয়া উলামায়িল বালাদিল হারাম, পৃ. ১০৮৪)।
প্রশ্নকারী : আল-আমীন, নওগাঁ।