উত্তর : কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে উপরিউক্ত সার্ভেসাইটে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে এবং তার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা বৈধ হতে পারে। যথা:
(১) ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কাজটি হালাল হওয়া, হারাম না হওয়া। কারণ হারাম কাজ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য (সূরা আন-নিসা: ৩১)।
(২) দেশের প্রচলিত আইন পরিপন্থী না হওয়া।
(৩) মানুষ, সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতিকারক না হওয়া।
(৪) কারো অধিকার খর্ব না করা। যেমন কপিরাইট লঙ্ঘন করা ইত্যাদি।
(৫) আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে নূদ, ঘুষ বা দুর্নীতির আশ্রয় না নেয়া।
(৬) মিথ্যা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও প্রতারণার আশ্রয় না নেওয়া ইত্যাদি।
এখন লক্ষণীয় বিষয় হল: এটি কি সরকার অনুমোদিত? এটি কি দেশের আইন বিরোধী ও অপ্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার অন্তর্ভুক্ত? কিংবা কোম্পানিগুলো বা সংস্থাগুলো কি এ সম্পর্কে অবগত আছে? বাংলাদেশে বসে আমেরিকার আইপি এড্রেস ব্যবহার করে এবং আমেরিকার নাগরিকের তথ্য ব্যবহার করে কাজ করার বিষয়টি কর্তৃপক্ষ জানতে পারলে কী হবে?
সুতরাং এর ফলে যদি সরকারী আইন লঙ্ঘিত হয় কিংবা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে প্রতারণা করা হয়, তাহলে তা নিশ্চিতরূপে হারাম। সেক্ষেত্রে এর থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। লেনদেন, ক্রয়-বিক্রয় বা অন্য যে কোন বিষয়ে ধোঁকা দেয়া হারাম। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّي ‘যে ব্যক্তি ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা করে, সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১-১০২)। ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আলিমদের মতানুযায়ী প্রতারণা ও ধোঁকাবাজি খুবই জঘন্য অপরাধ এবং তাঁরা বলেছেন, প্রতারণা করা হারাম’ (তিরমিযী, হা/১৩১৫)। শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) ও শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ব্যবসা-বাণিজ্যে ও অন্যান্য সব ক্ষেত্রেই প্রতারণা করা হারাম’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ৬/৩৯৭; ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ-দারব, ২/২৪ পৃ.)। যেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে মিথ্যা, প্রতারণা, প্রসাশনকে ফাঁকি দেয়া ও দেশের প্রচলিত আইন লঙ্ঘন করা অপরাধ। তাই উল্লিখিত শর্ত পূরণ না হলে এরূপ কাজ করা বৈধ হবে না। কেননা তা পাপাচারে সহযোগিতা করার শামিল (সূরা আল-মায়িদাহ: ২)।
দ্বিতীয়তঃ বর্তমানে ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তলব অনুযায়ী কাজ করা হচ্ছে। এ জগতে হাজার হাজার কাজ আছে। সেগুলো থেকে যদি কিছু শর্ত সাপেক্ষে হালাল কর্মের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা হয় তাহলে নিঃসন্দেহে তা হালাল। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেন,
مَا أكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أنْ يَأكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِه، وَإنَّ نَبيَّ الله دَاوُدَ عليه السلام كَانَ يَأكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ
‘নিজের হাতের উপার্জন থেকে উত্তম খাবার কেউ কখনো খায়নি। আল্লাহর নবী দাঊদ (আলাইহিস সালাম) নিজ হাতের উপার্জন থেকে খেতেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/২০৭২)। তাই সর্বদা হালাল-হারামের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে এবং হারাম ও সন্দেহপূর্ণ বিষয় থেকে দূরে থাতে হবে। কেননা ইসলামী শরী‘আতের স্থিরীকৃত নীতিমালা সমূহের মধ্যে রয়েছে যে, إذا اجتَمَع الحلالُ والحرامُ غُلِّبَ الحرامُ ‘যখন কোন বিষয়ে হালাল ও হারামের মাস’আলা একত্রিত হয়, তখন হারামের মাস’আলা প্রাধান্য পায়’। অর্থাৎ সেটাকে হারাম বলে গণ্য করতে হবে। অতএব প্রত্যেক মুসলিমের উচিত সন্দেহমুক্ত, বৈধ ও উৎকৃষ্ট পন্থায় অর্থোপার্জন করার প্রচেষ্টা করা এবং পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন উপার্জনের পথ অন্বেষণ করা (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২৬/২৭৪-২৭৫ ও ১৪/৪২০ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : উমার ফারুক, গাজীপুর।