উত্তর : সার্বিকভাবে সরকারী চাকরী করা বৈধ, যতক্ষণ তা সত্তাগতভাবে হারাম না হবে। যেমন সরকারী ব্যাংক ইত্যাদি। আর সরকারের সুনির্দিষ্ট ফান্ড থেকে যদি বেতন প্রদান করা হয় এবং চাকরির কাজটি যদি হালাল হয় তাহলে এর বিনিময়ে পারিশ্রমিক গ্রহণ করা জায়েয হবে। এক্ষেত্রে সরকারের উপার্জন কী অথবা সরকারের টাকা কিভাবে উপার্জন করা হয়েছে সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়। সরকারের বহুমুখী ফান্ড রয়েছে এবং সেখানে অবৈধ ফান্ড যেমন রয়েছে, তেমনি অনেক বৈধ ফান্ডও রয়েছে। তাই দেখার বিষয় হল, চাকরিটা বৈধ কি-না। বৈধ হলে বেতন হবে এটিই বাস্তবতা। শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘...এক্ষেত্রে হারাম উপার্জনকারীই প্রকৃত গুনাহগার। সে ছাড়া অন্য কারো জন্য তা হারাম নয়। যেমন রাসূল (ﷺ) ইহুদীদের সঙ্গে আদান-প্রদান করেছেন এটি জানার পরও যে, তারা সূদী কারবারের সঙ্গে যুক্ত এবং হারাম ভক্ষণ করে। সুতরাং এটি প্রমাণ করে যে, তা উপার্জনকারী ব্যতীত অন্য কারো জন্য হারাম নয়’ (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যা, ৩/৪৫২; তাফসীরু সূরাতিল বাক্বারাহ, ১/১৯৮; আল-ক্বাউলুল মুফীদ আলা কিতাবিত-তাওহীদ, ৩/১১২ পৃ.)। শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘ফক্বীহগণ বলেছেন, হারাম পন্থায় উপার্জিত অর্থ শুধু উপার্জনকারীর জন্যই হারাম। সন্তান হিসাবে পিতা যদি তাকে উপহারস্বরূপ ঐ মাল থেকে কিছু দেয়, তবে তা গ্রহণ করা তার জন্য বৈধ হবে। তবে যদি সম্ভব হয় তাহলে পিতার ঐ উপহার বর্জন করাই উত্তম হবে (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৪৫০১৮; আহকামুল কুরআন, ১/৩২৪; আল-মাজমূঊ, ৯/৪৩০; ফাতাওয়া ফিক্বহিয়্যাহ আল-কুবরা, ২/২৩৩; কাশ্শাফুল ক্বিনা, ৩/৪৯৬ পৃ.)।
সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলেমগণ বলেন, ‘সরকারী কাজের বিনিময় স্বরূপ আপনি যে অর্থ উপার্জন করবেন, তার দ্বারা আপনার লাভবান বা উপকৃত হওয়া দোষনীয় নয়, কারণ আপনি যে বেতন নিয়েছেন তা কর্মের বিনিময়ে অর্থ গ্রহণ করেছেন; এটি জায়েয। তবে সত্তাগতভাবে হালাল কর্ম হওয়া সত্ত্বেও যে সমস্ত জায়গায় শরী‘আতের বিধান লঙ্ঘিত হয়, অবশ্যই তার জন্য গুনাহগার হতে হবে। তাই আপনার জন্য উচিত এই ধরণের কাজ ছেড়ে দেয়া এবং অন্য একটি পূর্ণাঙ্গ হালাল চাকরি বা কর্মের সন্ধান করতে থাকা। যাতে আপনি হারাম ও ফিতনায় পড়া থেকে নিরাপদ থাকতে পারেন’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ- দায়িমাহ, ১২/১৫৬ পৃ.)। আলেমগণ আরো বলেন যে, ‘হালাল ও বৈধ চাকরীর পেনশন যেমন বৈধ ঠিক তেমনি তা ভক্ষণ করাও জায়েয’ (বাদায়িঊছ ছানায়ী, ৩/৪৫ পৃ.)। এ কথা ঠিক যে, সরকারী চাকরিতে নানাবিধ সমস্যা রয়েছে, তবে তা হারাম নয়। আর এটা শুধু সরকারী চাকরিতেই নয়, বরং ৯৯% বেসরকারী চাকরীতেও রয়েছে। তাই সব সরকারী চাকরি তাক্বওয়ার পরিপন্থী নয়। নিশ্চিতরূপে আপনি সরকারী হালাল ও বৈধ যে কোন চাকরী করতে পারেন এবং এর থেকে প্রাপ্ত বেতন স্কেল গ্রহণ করতে পারবেন। এতে শরী‘আতের দৃষ্টিকোন থেকে কোনরূপ সমস্যা নেই। তবে সর্বদা হারাম ও নাজায়েয জিনিস হতে বেঁচে থাকবে হবে। ছালাত সহ যাবতীয় ইবাদত সঠিক সময়ে আন্তরিকভাবে পালন করতে হবে।
প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ আল-মাসঊদ, গাইবান্ধা।