বুধবার, ০২ এপ্রিল ২০২৫, ০১:৫৭ অপরাহ্ন
উত্তর : প্রথমতঃ দেশের প্রেক্ষাপটে আলেমগণের উচিত এ বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সজাগ করা। সন্তানের অনপুস্থিতিতে নাতি-নাতনীদের নামে যে ওয়াছিয়্যাত করা যায় এবং এটি অপরিহার্য অথবা মুস্তাহাব, এই বিষয়টি মানুষকে জানিয়ে দেয়া।

দ্বিতীয়তঃ শাইখ ছালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘পিতা এবং চাচাদের অবর্তমানে নাতি-নাতনিরা দাদুর সম্পত্তিতে সরাসরি অংশীদার হবে। কিন্তু যদি দাদুর কোন পুত্র সন্তান থাকে, সেটি তাদের বাবা হোক কিংবা অন্যান্য চাচা, তাহলে তারা সরাসরি অংশীদার হবে না’ (আত-তাহ্ক্বীক্বাতুল মারযিয়্যাহ ফিল মাবাহিছিল ফারযিয়্যাহ, পৃ. ৬৫ ও ১২৫)। শাইখ আব্দুল্লাহ ইবনু জিবরীন (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘এখানে নাতি-নাতনি বলতে ছেলের সন্তানদের বুঝানো হয়েছে, মেয়ের সন্তানরা নয়। যদি তাদের পিতা তাদের দাদুর পূর্বে মারা যায়, তাহলে তাদের দাদুর ঔরসজাত সন্তানের উপস্থিতিতে তারা ওয়ারিশ হবে না। কেননা সন্তান নাতি-নাতনিদের থেকে অধিক নিকটবর্তী। তবে যদি দাদুর কন্যা সন্তান ব্যতীত কোন পুত্র সন্তান না থাকে, তাহলে কন্যাদের অংশ দেয়ার পর অবশিষ্ট অংশ তারা পাবে। অনুরূপভাবে যদি বাবা ব্যতীত দাদুর অন্য কোন সন্তান না থাকে, তাহলে তারাই সমস্ত সম্পত্তির মালিক হবে’ (মাজাল্লাতুল হারাসিল ওয়াত্বানী, সংখ্যা-২৬৪, তারিখ ১/৬/২০০৪)। শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘শরী‘আতসম্মত বিধান অনুযায়ী বাবার মৃত্যুর পর চাচাদের উপস্থিতিতে নাতি-নাতনিরা সরাসরি দাদুর সম্পত্তিতে অংশীদার হয় না। সুতরাং দাদুর আগে বাবা মারা গেলে জোর করে দাদুর সম্পত্তি থেকে নিয়ে নাতি-নাতনিকে দেয়া জায়েয নয়। তবে চাচাদের উপস্থিতিতে সম্পদ থেকে বঞ্চিত নাতি-নাতনিরা দু’টি পদ্ধতিতে দাদুর পরিত্যক্ত সম্পত্তির কিছু অংশ পেতে পারে।

প্রথম পদ্ধতি: দাদুর উচিত মৃত্যুর পূর্বে তাদের জন্য মোট সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ অথবা তার থেকে কিছু কম ওয়াছিয়্যাত করা। আলহামদুলিল্লাহ, এমন হলে তাদের অনেক মাল হয়ে যাবে। এই প্রকারের ওয়াছিয়্যাতকে কিছু আলেম অপরিহার্য বলেছেন, আবার অনেকে মুস্তাহাব বলেছেন। এই মতের পক্ষে দলীল হল আল্লাহ তা‘আলার কালাম। তিনি বলেন,

کُتِبَ عَلَیۡکُمۡ  اِذَا حَضَرَ اَحَدَکُمُ الۡمَوۡتُ اِنۡ تَرَکَ خَیۡرَۨا ۚۖ  الۡوَصِیَّةُ لِلۡوَالِدَیۡنِ وَ الۡاَقۡرَبِیۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ ۚ حَقًّا عَلَی الۡمُتَّقِیۡنَ

‘তোমাদের আদেশ দেয়া হয়েছে যে, তোমাদের মধ্যে যখন কারো মৃত্যু উপস্থিত হয় এবং সে যদি ধন-সম্পত্তি রেখে যায়, তবে পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য বৈধভাবে ‘ওয়াছিয়্যাত’ করার বিধান দেয়া হল। মুত্তাক্বীদের জন্য এটা অবশ্য পালনীয়’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৮০)। শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এই আয়াতের শিক্ষণীয় বিষয় হল- যে ব্যক্তি অনেক মালধন রেখে যাচ্ছে, তার জন্য অপরিহার্য হল, পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনের জন্য বৈধভাবে ওয়াছিয়্যাত করা। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, کُتِبَ عَلَیۡکُمۡ ‘তোমাদের উপর বিধান দেয়া হল। এই আয়াতটি মীরাছের আয়াত দ্বারা রহিত করা হয়েছে কি-না? মীরাছের আয়াতে প্রত্যেক অংশীদারের অংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। অধিকাংশ আলেম বলেন, এই আয়াতটি মানসুখ বা রহিত করা হয়েছে। তবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতানুযায়ী এটি মানসুখ করা হয়নি। কেননা এখানে নির্দিষ্টকরণ সম্ভব। সুতরাং বলা যায় যে, যদি তারা অংশীদার হয়, তাহলে তাদেরকে ওয়াছিয়্যাত করা যাবে না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য পূর্ব থেকেই অংশ নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাই ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকারদের নামে উইল করা বৈধ নয়। কেননা রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক হক্বদারের হক্ব (নির্দিষ্ট করে) দিয়েছেন। সুতরাং কোন ওয়ারিশের নামে ওয়াছিয়্যাত করা যাবে না’ (তিরমিযী, হা/২১২০; আবূ দাঊদ, হা/২৮৭০, ৩৫৬৫; ইবনু মাজাহ, হা/২৭১৩)। অতএব এই আয়াত অবশিষ্ট থাকছে তাদের জন্য, যারা সরাসরি অংশীদার নয়। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, ওয়ারিশ ব্যতীত অন্য যে কোন ব্যক্তির নামে নির্ধারিত পরিমাণের মাল ওয়াছিয়্যাত করা জায়েয। সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘...আমি বললাম, ‘আমি অর্ধেক সম্পত্তি ওয়াছিয়্যাত করতে চাই’। রাসূল (ﷺ) বললেন, অর্ধেক অনেক অধিক। আমি বললাম, এক-তৃতীয়াংশ। তিনি বললেন, আচ্ছা এক-তৃতীয়াংশ এবং এক- তৃতীয়াংশও অধিক বা তিনি বলেছেন বিরাট। সা‘দ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, অতঃপর লোকেরা এক-তৃতীয়াংশ ওয়াছিয়্যাত করতে লাগল। আর তা-ই তাদের জন্য জায়েয হয়ে গেল’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৭৪৪, ১২৯৫, ২৭৪২, ৩৯৩৬, ৪৪০৯, ৫৩৫৪, ৫৬৫৯, ৫৬৬৮, ৬৩৭৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬২৮)। সুতরাং এক-তৃতীয়াংশের অধিক ওয়াছিয়্যাত করা যাবে না। উক্ত আয়াতকে হাদীছ দ্বারা শর্তযুক্ত করা হয়েছে।

আরো বুঝা যাচ্ছে যে, তাদের উপর ওয়াসিয়্যাত করা অপরিহার্য, যারা পিছনে অনেক মালধন রেখে যাচ্ছে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, اِنۡ تَرَکَ خَیۡرَۨا ‘সে যদি ধন-সম্পত্তি রেখে যায়’। পক্ষান্তরে যদি কেউ অল্প পরিমাণে মালধন রেখে যাচ্ছেন এবং তার ওয়ারিশও আছে, এক্ষেত্রে তার জন্য উত্তম হল, ওয়াছিয়্যাত না করা। যেমন রাসূল (ﷺ) সা‘দ ইবনু আবী ওয়াক্কাছ (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে সম্বোধন করে বলেন,

إِنَّكَ أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ، خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُوْنَ النَّاسَ

‘তোমার ওয়ারিশদের অভাবমুক্ত রেখে যাওয়া, তাদেরকে খালি হাতে পরমুখাপেক্ষী অবস্থায় রেখে যাওয়ার চেয়ে অধিক উত্তম’ (ছহীহ বুখারী, হা/১২৯৫, ২৭৪২, ৩৯৩৬, ৪৪০৯, ৫৩৫৪, ৫৬৬৮, ৬৩৭৩; তাফসীরু সূরাতিল বাক্বারাহ লি ইবনে উছাইমীন, ২/৩০৬, ৩০৭ পৃ.)।

দ্বিতীয় পদ্ধতিঃ দাদু ওয়াছিয়্যাত না করলে, চাচাদের উচিত তাদের ভাগ থেকে কিছু কিছু করে এদের জন্য হাদিয়া করা। তাদের বাবার অংশ মনে করে তাদের দিয়ে দেবে। নিঃসন্দেহে এতে তাদের জীবন আটকে যাবে না। তবে জোর করে বা কানুন বানিয়ে ছিনিয়ে নেয়া বৈধ হবে না (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৭০৫৭৫)।


প্রশ্নকারী : আমিনুল ইসলাম, দেবিদ্বার, কুমিল্লা।





প্রশ্ন (১৯) : মৃতের গোসল করানোর ছহীহ পদ্ধতি কেমন? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২১) : কোন ছেলে সন্তান না থাকায় পিতা কি তার জীবদ্দশায় সব সম্পত্তি মেয়ের নামে লিখে দিতে পারবে?   - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৬) : কোন্ কাজগুলো ডান দিক থেকে এবং কোন্ কাজগুলো বাম দিক থেকে শুরু করা সুন্নাত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) : ওযূ করার সময় মুখে ও নাকে পানি দেয়ার সঠিক পদ্ধতি কোনটি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৯): জনৈক বক্তা বলেন যে, ‘জান্নাতে একটি কনফারেন্স হবে। সেই কনফারেন্সের সভাপতি হবেন স্বয়ং আল্লাহ। আর সেখানে উপস্থিত থাকবেন আমাদের নবী (ﷺ) ও নূহ (আলাইহিস সালাম)। আর পরিশেষে আল্লাহ তা‘আলা কুরআন তেলাওয়াত করবেন’। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৯) : মসজিদে একই কাতারের বাম পাশ অপেক্ষা ডান পাশে বসা বা ছালাত আদায় করার মধ্যে বিশেষ কোন ফযীলত আছে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) : ‘জ্ঞান অর্জনের জন্য চীন দেশে হলেও তোমরা যাও’। হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩) : সোস্যাল মিডিয়াতে মেয়েদের বেপর্দা ছবি দেখা যায়। মহিলারা এসব ছবি দেখলে কি গুনাহ হবে? একজন মেয়ের সামনে আরেক মেয়ের পর্দার বিধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩০) : হাদীছে বলা হয়েছে যে, খারিজীরা জাহান্নামের কুকুর (ইবনু মাজাহ, হা/১৭৬; সনদ ছহীহ)। কুকুর বলে কী বুঝানো হয়েছে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৬) : কখন রসিকতা করা জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১) : ক্বিয়ামতের দিন পশু-পাখিদেরকেও কি পুনরুত্থিত করা হবে? শোনা যায় যে, দশটি প্রাণীও জান্নাতে যাবে। উক্ত দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভালবাসা বৃদ্ধির জন্য তাবীয-কবয করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ