উত্তর : কোন পরীক্ষায় নকল করা বা চিট করা হারাম। এর ফলে লঙ্ঘিত হচ্ছে সরকারী আইন এবং প্রতারণা করা হচ্ছে দেশের লক্ষ লক্ষ মেধাবী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। যেহেতু রাষ্ট্রীয় আইনে প্রশ্নপত্র ফাঁস করা এবং ঘুষ দেয়া ও নেয়া উভয়ই নিষিদ্ধ। তাই এ থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। নতুবা তা মেধাবী শিক্ষার্থীদের অধিকার নষ্ট করা ও রাষ্ট্রের সাথে ধোঁকা হবে। অথচ রাসূল (ﷺ) বলেছেন, مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّي ‘যে ব্যক্তি ধোঁকাবাজি ও প্রতারণা করে, সে আমার অন্তর্ভুক্ত নয়’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১০১-১০২; আবূ দাঊদ, হা/৩৪৫২)। ইমাম ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
الغش محرم في الاختبارات، كما أنه محرم في المعاملات، فليس لأحد أن يغش في الاختبارات في أي مادة، وإذا رضي الأستاذ بذلك فهو شريكه في الإثم والخيانة "... انتهى،
‘পরীক্ষায় নকল করা বা ধোঁকা দেয়া হারাম, যেরকম তা হারাম ব্যবসা-বাণিজ্যে, পরীক্ষায় কারোর জন্য কোন বিষয়ে নকল করা বা টুকলি করা বৈধ নয়। যখন কোন শিক্ষক তাতে সহযোগিতা করে, তখন সেও গুনাহ এবং খিয়ানতে অংশীদার হয়ে যায়’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ৬/৩৯৭ পৃ.)। শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, الغش في الامتحانات محرم ، بل من كبائر الذنوب،...... ‘পরীক্ষায় চিট করা বা নকল করা হারাম, বরং এটা কাবীরা গুনাহসমূহের অন্তর্ভুক্ত’ (ফাতাওয়া নূরুন ‘আলাদ দারব, ২/২৪ পৃ.)।
দ্বিতীয়তঃ সহশিক্ষা বা ছাত্র-ছাত্রীদের মিশ্রিত শিক্ষা ব্যবস্থা নিঃসন্দেহে ইসলামে নিষিদ্ধ। মেয়েদের সাথে একত্রে একই স্থানে কিংবা একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিংবা একই বেঞ্চিতে সহশিক্ষা হারাম। সেজন্য কোন ছেলে কিংবা মেয়ের জন্য এ ধরণের সহশিক্ষা জায়েয নেই (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২১৬০৮)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘নিশ্চিতরূপে কোন পুরুষ শিক্ষকের জন্য কোন তরুণী, বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পণকারিণী, জৈবিক চাহিদা সম্পর্কে অবহিত সাবালিকা বেগানা মেয়েকে মুখোমুখি পড়ানো নিঃসন্দেহে বিশাল বড় ফিতনাহ এবং দ্বীন ও চারিত্রিক দিক থেকে মারাত্মক ক্ষতির কারণ। যিনি পড়ান আর যারা পড়ে উভয়ের জন্যই তা নিকৃষ্ট কাজ। স্কুল, মাদরাসা, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, কোচিং সেন্টার ইত্যাদিতে পুরুষ শিক্ষক দ্বারা মেয়েদেরকে এবং মহিলা শিক্ষিকা দ্বারা ছেলেদেরকে পড়ানো মারাত্মক ফিতনার কারণ।
স্বাভাবিকভাবেই ইসলামের দৃষ্টিতে এভাবে পড়ানো জায়েয নয়। বরং তা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৫০৩৯৮)। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলেমগণ বলেন, ‘বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানকালীন ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকার সহাবস্থান হারাম। কেননা এটি ফিতনা, অবাধ যৌনতা ও অশ্লীলতার দিকে ধাবিত করে। এক্ষেত্রে যখন শিক্ষিকরা কিংবা ছাত্রীরা নিজেদের শরীরের কোন অংশ উন্মুক্ত রাখে কিংবা অন্যের সামনে ফিনফিনে পোশাক, অঙ্গভঙ্গী প্রকাশক স্কিন-টাইট ও আঁটসাঁট পোশাক পরিধান করে কিংবা তারা যখন ছাত্র অথবা শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপকালে হাসি-ঠাট্টা ইত্যাদি করে, তখন পাপাচার আরো বৃদ্ধি পায় এবং অপরাধ আরো বিশাল হয়ে ওঠে, যা অবৈধ প্রেম, যিনা-ব্যভিচার, সম্ভ্রমহানি ও ইযযত লুণ্ঠন পর্যন্ত গড়ায়’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৭/৫৩ পৃ.)। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, زُیِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّہَوٰتِ مِنَ النِّسَآءِ ‘নারীর প্রতি আসক্তি মানুষের নিকট সুশোভিত করা হয়েছে। (মূলত নারীরাই মানবকূলকে মোহগ্রস্ত করেছে)’ (সূরা আলে ইমরান: ১৪)। তবে মেয়েদের জন্য নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে পর্দার আড়াল থেকে তাদেরকে শিক্ষাদান করা কোন পুরুষের জন্য দোষনীয় নয়। যেখানে ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের মধ্যে সহাবস্থান হয় না’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১২/১৫৬ পৃ.)। সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলেমগগণ আরো বলেন,
فلا يجوز للمرأة أن تَدرس أو تعمل في مكان مختلط بالرجال والنساء ، ولا يجوز لوليها أن يأذن لها بذلك
‘সুতরাং মেয়েদের জন্য এমন প্রতিষ্ঠানে পড়া-লেখা কিংবা চাকরি করা জায়েয নয় যেখানে নারী-পুরুষের সহাবস্থান রয়েছে এবং অভিভাবকদের জন্য জায়েয নয় তাকে এর জন্য অনুমতি দেয়া’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১২/১৫৬ পৃ.)। কিন্তু একান্ত অপারগ অবস্থায় বা বিকল্প কোন পথ না পেলে এসব প্রতিষ্ঠানে সবোর্চ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে পড়াশোনা করা বা করানো জায়েয আছে। কেননা ইসলামী শরী‘আতের স্থিরীকৃত নীতিমালা সমূহের মধ্যে রয়েছে, الضرورات تبيح المحظورات ‘বিশেষ প্রয়োজন অবৈধ জিনিসকে বৈধতার অনুমতি প্রদান করে’ (আল-আশবাহ ওয়ান-নাযাইর, ১/৭৮ পৃ.; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৭/৫৩; ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ ইবনে উছাইমীন, ৩/১০৩ পৃ.)।
তৃতীয়তঃ পরীক্ষায় নকল করে বা চিট করে অর্জিত সার্টিফিকেট দেখিয়ে চাকুরী করে অথবা সহশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়িয়ে প্রাপ্ত বেতনের অর্থ হালাল হবে কি-না? এর উত্তরে শাইখ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘সর্ব প্রথমে পূর্বের পাপের জন্য তার উপর তাওবাহ করা ওয়াজিব। অতঃপর উক্ত সার্টিফিকেট দেখিয়ে হালাল চাকুরী করা তার জন্য বৈধ’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৭৯১২৯)। শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ কোন সমস্যা নেই। তবে প্রতারণা বা অবৈধ কাজ করার জন্য তার উপর তাওবাহ অপরিহার্য। অতঃপর যদি তিনি চাকুরীতে বহাল থাকেন, সেক্ষেত্রে তার প্রাপ্ত বেতন বৈধ হবে’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৯/৩১ পৃ.)। এক্ষেত্রে সন্দেহমুক্ত হালাল পন্থায় রিযিক্ব অন্বেষণ করা আপনার উপর অপরিহার্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর যে কেউ আল্লাহর তাক্বওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তার জন্য উত্তরণের পথ করে দেবেন এবং তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে রুযী দান করবেন’ তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহকে যে ভয় করবে, তিনি তার সমস্যার সমাধান সহজ করে দেবেন’ (সূরা আত-ত্বালাক্ব: ২,৩,৪; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৯/৭৭ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : তাওফীক, রাজশাহী।