বুধবার, ২২ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:০২ অপরাহ্ন
উত্তর : শরী‘আত সম্মত পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ম-নীতি বজায় রেখে শেয়ার বাজারের মাধ্যমে জিনিস ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয। শারঈ ব্যবসার একটি নিয়ম হল- ‘মানুষ তার মালিকানাধীন ও অধিকারভুক্ত জিনিস ক্রয়-বিক্রয় করবে’। কিন্তু শেয়ার বাজারে দেখা যায় অধিকাংশ সময় মানুষ এমন জিনিস ক্রয়-বিক্রয় করে, যা তার মালিকানাধীন ও অধিকারভুক্ত নয়, এবং সেটি তার আয়ত্তেও নেই। শরী‘আতের আলোকে এরূপ ব্যবসা নিষিদ্ধ। সাধারণত শেয়ার ব্যবসায় পণ্য নিজ আয়ত্ত্বে না নিয়েই ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। অথচ শরী‘আতের দৃষ্টিতে ক্রয়কৃত বস্তু হস্তগত হওয়ার পূর্বে বিক্রয় করা হারাম। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)-এর যুগে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতাম। তখন তিনি আমাদের নিকট এ মর্মে আদেশ দিয়ে লোক পাঠাতেন যে, ঐ ক্রয়কৃত মাল বিক্রয় করার পূর্বেই যেন ক্রয়ের স্থান হতে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বরং নিজেদের ঘরে তুলে নেয়ার আগেই বিক্রয় করলে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হত’ (ছহীহ বুখারী, হা/২১৩৭, ২১৩১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫২৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করবে সে তা নিজ আয়ত্ত্বে নেয়ার পূর্বে বিক্রয় করতে পারবে না (ছহীহ বুখারী, হা/২১৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫২৫)। রাবী তাঊস (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এটি কিভাবে হয়ে থাকে? তিনি বললেন, এটি এভাবে হয়ে থাকে যে, দিরহামের বিনিময়ে আদান-প্রদান হয় অথচ পণ্যদ্রব্য অনুপস্থিত থাকে (ছহীহ বুখারী, হা/২১৩২, ২১৩৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫২৫)। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রত্যেক পণ্যের ব্যাপারে অনুরূপ নির্দেশ প্রযোজ্য হবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/২১৩৫, ২১৩২; তাবয়ীনুল হাকায়িক, ৪/১১৯; আল মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ, ২৫/২১৮-২১৯)।

১৪০৪ হিজরীতে শেয়ারের মার্কেটের ভয়াবহতা সম্পর্কে ‘মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ’-এর অধীনস্থ ‘ইসলামী ফিক্বাহ একাডেমী’-এর একটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাঁদের সুদীর্ঘ আলোচনায় হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ ও কল্যাণ-অকল্যাণের বিবিধ দিক নিয়ে যে সমস্ত মতামত ও শর্তাবলী পেশ করেছেন, সেগুলো মেনে আজকের দিনে শেয়ার বাজারের ব্যবসা করা অসম্ভব (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১২৪৩১১)। এছাড়াও আরো অসংখ্য কারণে প্রচলিত শেয়ার বেচাকেনার ব্যবসা জায়েয নয়। যেমন: (১) ক্রেতার অনেক সময় সম্যক জ্ঞান থাকে না বা জানতে পারেন না যে কী বস্তুর শেয়ার তিনি ক্রয় করেছেন। অথচ রাসূল (ﷺ) হারাম বস্তুর ক্রয়-বিক্রয় হারাম করেছেন (আবূ দাঊদ, হা/৩৪৮৪, ৩৪৮৫, ৩৪৮৮, ৩৪৯০)। (২) যে বস্তুর শেয়ার কেনা-বেচা হয়, তা অস্পষ্ট ও অজ্ঞাত থাকে। হাদীছের মধ্যে নবী (ﷺ) প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং কাঁকর নিক্ষেপে ক্রয়-বিক্রয় নির্ধারিত করতে নিষেধ করেছেন (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫১৩; আবূ দাঊদ, হা/৩৩৭৬)। (৩) শেয়ার ব্যবসায় ফাটকাবাজারীর প্রচুর সুযোগ রয়েছে। যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ পণ্য দেখে না। অথচ প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে, মিনিটে মিনিটে দর উঠা-নামা হয়। কেউ কেউ কয়েক মিনিটের মধ্যে শেয়ার বিক্রয় করে দেয়। বাস্তবে কিন্তু কেউ কোন কোম্পানীতে কয়েক মিনিটের জন্য অংশীদার হয় না। সেখানে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া অনেক সময় কোম্পানী প্রকৃত তথ্য গোপন রাখে। কখনো কারখানা তৈরি না করেই বাজারে তার শেয়ার ছাড়া হয় এবং নতুন শেয়ারে অধিক লাভ ধারণা করে সেটিকে লোকেরা অধিক মূল্যে ক্রয় করে। এছাড়াও নিত্যনতুন ছলচাতুরী শেয়ারবাজারে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে। (৪) এতে সূদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ শেয়ার ব্যবসা সূদী ঋণের ভিত্তিতে করা হচ্ছে। অতএব শেয়ার ব্যবসা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। উল্লেখ্য যে, যদি সাধারণভাবে কোন শেয়ার ব্যবসা সূদমুক্ত, ধোঁকাবাজি, ঠকবাজি, জুয়াচুরি ও ছলচাতুরী মুক্ত হয়, তাহলে তা জায়েয। যৌথ ব্যবসার মুশারাকাহ্ বা শরীকানা ব্যবসা পদ্ধতি ইসলামে বৈধ। যাতে উভয়ে সম্পদ ও শ্রমে আনুপাতিক অংশীদার হবে  (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৪/২৯৯-৩০০ পৃ.)।

শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘শেয়ার বাজার সম্পর্কে আমরা যেটা জানতে পেরেছি, সেটি হল- ‘হাওয়ায় কেনাবেচা’। শেয়ার বাজার তো আসলে কোন বাজারই নয়। এ এমন একটি বাজার যেখানে কোন মাল নেই, দোকান নেই। আছে কেবলই ক্রেতা। কাগজের রসিদ দেখিয়ে কেনাবেচা হয়। শেয়ার ব্যবসা একটি জুয়া মাত্র। যা হারাম ও নিষিদ্ধ। যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ মাল দেখে না। অথচ অনবরত দর উঠা-নামা করে। একটি গ্রুপ কাজ করে হুজুগ লাগানোর জন্য। তারা ছোট ছোট বিনিয়োগকারীদের অতি মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রতারিত করে। রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার রঙিন স্বপ দেখিয়ে তাদেরকে শেয়ার কিনতে প্রলুব্ধ করে। তারপর তাদের টাকাগুলো শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ হলেই তা লোপাট করে এই গোষ্ঠী সরে পড়ে। এটি নিষিদ্ধ, এটি অগ্রহণযোগ্য ব্যবসা, এটি ঠিক নয় (ফাতাওয়া আল-জামিউল কাবীর, ইবনে বায অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, যঃঃঢ়ং://নরহনধু.ড়ৎম.ংধ/ভধঃধিং/১৮৭৩/%উ৮%অউ%)।


প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ, বরিশাল।





প্রশ্ন (২১) : সম্মেলন, সমাবেশ, সভা-সমিতি, খতমে বুখারী ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান শেষে দলবদ্ধ মুনাজাত করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২০) : নিরাপত্তা কর্মীদের জন্য ছালাত আদায়ের নির্দেশাবলী কী? বিশেষ করে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের যারা বডি গার্ড তাদের ব্যাপারে কী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৯) : বিভিন্ন সংস্থা বা সংগঠনের ব্যানারে ইসলামী কুইজ প্রতিযোগিতার নামে নির্দিষ্ট যে ফি ধার্য করা হয়, যেখানে নির্দিষ্ট কয়েকজনকে মাত্র পুরস্কৃত করা হয়। এটি কি শরী‘আত সম্মত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৯) : ঋণগ্রহীতা ও ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি মুক্তির জন্য কী করতে পারে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : জনৈক মহিলার সাধারণত ৭ম দিনে হায়েয শেষ হয়। কিন্তু মাঝে ১/২ দিন স্রাব সম্পূর্ণ বন্ধ থাকে। প্রশ্ন হল- উক্ত এক বা দুই দিন সে ছলাত/ছিয়াম পালন করতে পারবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩০) : মিশনারী স্কুলে পড়ালেখা করা কি জায়েয? খ্রিস্টানদের চিহ্ন সম্বলিত ইউনিফর্ম পরিধান করার বিধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩২) : কোন্ তারিখে ই‘তিকাফে বসবে এবং কখন বের হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৭) : প্রচলিত ইফতারের সময়সূচীগুলোতে সূর্যাস্তের সময়ের সাথে আরো ৩/৪/৫ মিনিট যোগ করা থাকে। প্রশ্ন হল- ছিয়াম পালনকারী কোন্ সময় ইফতার করবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : পিতা-মাতার জন্য কুরআনে বর্ণিত দু‘আ ‘রব্বির হামহুমা কামা রব্বায়ানি ছগীর’ রয়েছে। কিন্তু মৃত আত্মীয়-স্বজন বা মৃত কোন মুসলিম ব্যক্তির জন্য আরবীতে কোন দু‘আ আছে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২২) : মুসলিমরা আল্লাহ মানে এবং রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে অনুসরণ করে। ইয়াহুদীরা কাকে মানে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৫) : যে ব্যক্তি রামাযান মাসের শেষ জুমু‘আয় দিনে রাতে পাঁচ ওয়াক্ত ফরয ছালাত আদায় করবে তার ঐ বছরের ছুটে যাওয়া ছালাতের জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে। উক্ত বর্ণনা কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৪) : জান্নাতের হূরগণ বলবে, نَحْنُ الْخَالِدَاتُ فَلَا نَبِيْدُ وَنَحْنُ النَّاعِمَاتُ فَلَا نَبْأَسُ وَنَحْنُ الرَّاضِيَاتُ فَلَا نَسْخَطُ طُوْبَى لِمَنْ كَانَ لَنَا وَكُنَّا لَهُ ‘আমরা চিরদিন থাকব, কখনও ধ্বংস হব না। আমরা হামেশা সুখে-সানন্দে থাকব, কখনও দুঃখ-দুশ্চিন্তায় পতিত হবে না। আমরা সর্বদা সন্তুষ্ট থাকব, কখনও নাখোশ হব না। সুতরাং তাকে ধন্যবাদ, যার জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যিনি’ (তিরমিযী, হা/২৫৬৪; মিশকাত, হা/৫৬৪৯; বঙ্গানুবাদ মিশকাত, হা/৫৪০৭, ১০/১৫০ পৃ.) মর্মে বর্ণনাটি কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ