শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ন
উত্তর : শরী‘আত সম্মত পদ্ধতিতে বিশুদ্ধ ব্যবসা-বাণিজ্যের নিয়ম-নীতি বজায় রেখে শেয়ার বাজারের মাধ্যমে জিনিস ক্রয়-বিক্রয় করা জায়েয। শারঈ ব্যবসার একটি নিয়ম হল- ‘মানুষ তার মালিকানাধীন ও অধিকারভুক্ত জিনিস ক্রয়-বিক্রয় করবে’। কিন্তু শেয়ার বাজারে দেখা যায় অধিকাংশ সময় মানুষ এমন জিনিস ক্রয়-বিক্রয় করে, যা তার মালিকানাধীন ও অধিকারভুক্ত নয়, এবং সেটি তার আয়ত্তেও নেই। শরী‘আতের আলোকে এরূপ ব্যবসা নিষিদ্ধ। সাধারণত শেয়ার ব্যবসায় পণ্য নিজ আয়ত্ত্বে না নিয়েই ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। অথচ শরী‘আতের দৃষ্টিতে ক্রয়কৃত বস্তু হস্তগত হওয়ার পূর্বে বিক্রয় করা হারাম। আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমরা রাসূল (ﷺ)-এর যুগে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতাম। তখন তিনি আমাদের নিকট এ মর্মে আদেশ দিয়ে লোক পাঠাতেন যে, ঐ ক্রয়কৃত মাল বিক্রয় করার পূর্বেই যেন ক্রয়ের স্থান হতে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বরং নিজেদের ঘরে তুলে নেয়ার আগেই বিক্রয় করলে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হত’ (ছহীহ বুখারী, হা/২১৩৭, ২১৩১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫২৭)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করবে সে তা নিজ আয়ত্ত্বে নেয়ার পূর্বে বিক্রয় করতে পারবে না (ছহীহ বুখারী, হা/২১৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫২৫)। রাবী তাঊস (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা)-কে জিজ্ঞেস করলাম, এটি কিভাবে হয়ে থাকে? তিনি বললেন, এটি এভাবে হয়ে থাকে যে, দিরহামের বিনিময়ে আদান-প্রদান হয় অথচ পণ্যদ্রব্য অনুপস্থিত থাকে (ছহীহ বুখারী, হা/২১৩২, ২১৩৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫২৫)। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) আরো বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রত্যেক পণ্যের ব্যাপারে অনুরূপ নির্দেশ প্রযোজ্য হবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/২১৩৫, ২১৩২; তাবয়ীনুল হাকায়িক, ৪/১১৯; আল মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ, ২৫/২১৮-২১৯)।

১৪০৪ হিজরীতে শেয়ারের মার্কেটের ভয়াবহতা সম্পর্কে ‘মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ’-এর অধীনস্থ ‘ইসলামী ফিক্বাহ একাডেমী’-এর একটি অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে তাঁদের সুদীর্ঘ আলোচনায় হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ ও কল্যাণ-অকল্যাণের বিবিধ দিক নিয়ে যে সমস্ত মতামত ও শর্তাবলী পেশ করেছেন, সেগুলো মেনে আজকের দিনে শেয়ার বাজারের ব্যবসা করা অসম্ভব (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১২৪৩১১)। এছাড়াও আরো অসংখ্য কারণে প্রচলিত শেয়ার বেচাকেনার ব্যবসা জায়েয নয়। যেমন: (১) ক্রেতার অনেক সময় সম্যক জ্ঞান থাকে না বা জানতে পারেন না যে কী বস্তুর শেয়ার তিনি ক্রয় করেছেন। অথচ রাসূল (ﷺ) হারাম বস্তুর ক্রয়-বিক্রয় হারাম করেছেন (আবূ দাঊদ, হা/৩৪৮৪, ৩৪৮৫, ৩৪৮৮, ৩৪৯০)। (২) যে বস্তুর শেয়ার কেনা-বেচা হয়, তা অস্পষ্ট ও অজ্ঞাত থাকে। হাদীছের মধ্যে নবী (ﷺ) প্রতারণামূলক ক্রয়-বিক্রয় করতে এবং কাঁকর নিক্ষেপে ক্রয়-বিক্রয় নির্ধারিত করতে নিষেধ করেছেন (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫১৩; আবূ দাঊদ, হা/৩৩৭৬)। (৩) শেয়ার ব্যবসায় ফাটকাবাজারীর প্রচুর সুযোগ রয়েছে। যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ পণ্য দেখে না। অথচ প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে, মিনিটে মিনিটে দর উঠা-নামা হয়। কেউ কেউ কয়েক মিনিটের মধ্যে শেয়ার বিক্রয় করে দেয়। বাস্তবে কিন্তু কেউ কোন কোম্পানীতে কয়েক মিনিটের জন্য অংশীদার হয় না। সেখানে একটি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা রয়েছে। তাছাড়া অনেক সময় কোম্পানী প্রকৃত তথ্য গোপন রাখে। কখনো কারখানা তৈরি না করেই বাজারে তার শেয়ার ছাড়া হয় এবং নতুন শেয়ারে অধিক লাভ ধারণা করে সেটিকে লোকেরা অধিক মূল্যে ক্রয় করে। এছাড়াও নিত্যনতুন ছলচাতুরী শেয়ারবাজারে প্রতিনিয়ত যুক্ত হচ্ছে। (৪) এতে সূদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বর্তমানে অধিকাংশ শেয়ার ব্যবসা সূদী ঋণের ভিত্তিতে করা হচ্ছে। অতএব শেয়ার ব্যবসা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। উল্লেখ্য যে, যদি সাধারণভাবে কোন শেয়ার ব্যবসা সূদমুক্ত, ধোঁকাবাজি, ঠকবাজি, জুয়াচুরি ও ছলচাতুরী মুক্ত হয়, তাহলে তা জায়েয। যৌথ ব্যবসার মুশারাকাহ্ বা শরীকানা ব্যবসা পদ্ধতি ইসলামে বৈধ। যাতে উভয়ে সম্পদ ও শ্রমে আনুপাতিক অংশীদার হবে  (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ১৪/২৯৯-৩০০ পৃ.)।

শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘শেয়ার বাজার সম্পর্কে আমরা যেটা জানতে পেরেছি, সেটি হল- ‘হাওয়ায় কেনাবেচা’। শেয়ার বাজার তো আসলে কোন বাজারই নয়। এ এমন একটি বাজার যেখানে কোন মাল নেই, দোকান নেই। আছে কেবলই ক্রেতা। কাগজের রসিদ দেখিয়ে কেনাবেচা হয়। শেয়ার ব্যবসা একটি জুয়া মাত্র। যা হারাম ও নিষিদ্ধ। যেখানে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ মাল দেখে না। অথচ অনবরত দর উঠা-নামা করে। একটি গ্রুপ কাজ করে হুজুগ লাগানোর জন্য। তারা ছোট ছোট বিনিয়োগকারীদের অতি মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রতারিত করে। রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার রঙিন স্বপ দেখিয়ে তাদেরকে শেয়ার কিনতে প্রলুব্ধ করে। তারপর তাদের টাকাগুলো শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ হলেই তা লোপাট করে এই গোষ্ঠী সরে পড়ে। এটি নিষিদ্ধ, এটি অগ্রহণযোগ্য ব্যবসা, এটি ঠিক নয় (ফাতাওয়া আল-জামিউল কাবীর, ইবনে বায অফিশিয়াল ওয়েবসাইট, যঃঃঢ়ং://নরহনধু.ড়ৎম.ংধ/ভধঃধিং/১৮৭৩/%উ৮%অউ%)।


প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ, বরিশাল।





প্রশ্ন (৫) : বক্তব্য বা কথা-বার্তা শেষ করার শারঈ পদ্ধতি কী? যেমন কারো সাথে মোবাইলে কথা বলার সময় সালাম দিয়ে শুরু করা হয়। কিন্তু শেষ করার সময় কী বলতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৮) : ঈদুল ফিতরের ছালাত আদায়ের পর পরিবারের সবাই মিলে কবর যিয়ারত করা কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩২) : রান্নাবান্না ও বিভিন্ন কাজের মাঝে থেকে মহিলারা কিভাবে রামাযানকে কাজে লাগাতে পারবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) : ব্রিটিশ আইনে পরিচালিত বাংলাদেশের কোন আদালতে কম্পিউটার অপারেটর হিসাবে কাজ করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩) : ছালাতের শেষ বৈঠকে ভুল করে তাশাহহুদ পাঠ করার পর দাঁড়িয়ে গেলে করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : যদি কারো মা তার দেবরের সামনে শরী‘আহ মোতাবেক পর্দা না করে এবং ছেলের বাবা তাকে কিছু না বলে, তাহলে ছেলে কি দাইয়ূছ হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৩) : জনৈক ব্যক্তির একটি স্কুল আছে, সেখানে ছাত্র-ছাত্রীর জন্য নির্দিষ্ট একটি প্রকাশনীর বই নির্বাচন করায় প্রকাশনী হতে কিছু টাকা দেয়। উক্ত টাকা নেয়া জায়েয হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৭) : যাকাত ওয়াজিব হওয়ার পর তা আদায়ের পূর্বে মালিক মৃত্যুবরণ করলে তার হুকুম কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : যে সকল ভাইয়েরা সঊদী আরবে কাজ করতে যাই, তারা কি সেখানকার দান করা টাকা গ্রহণ করতে পারবে, অথচ তাদের স্বদেশে আর্থিক অবস্থা ভাল? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪৩) : দাড়ি রাখা সুন্নাত না ওয়াজিব? এটি না রাখার পরিণতি কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৮) : বিকাশ, রকেট, নগদ বা এ ধরনের মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এইচ.আর কিংবা এজেন্ট হিসাবে কাজ করা জায়েয কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৬) : যে বিয়েতে ছবি তোলা, ভিডিও ও গান বাজনা করা হয় এবং নারী-পুরুষ একাকার হয়ে খানা খায় সেই বিয়েতে যাওয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ