উত্তর : স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা জায়েয নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সৎভাবে জীবন-যাপন কর, তোমরা যদি তাদেরকে (স্ত্রীদেরকে) ঘৃণা কর, তাহলে এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ যার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকে ঘৃণা করছ’ (সূরা আন-নিসা: ১৯; আল-মুনতাক্বা ইবনে ফাওযান, ৪/১১৭)। ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘স্ত্রীর সঙ্গে উৎকৃষ্ট পন্থায় বার্তালাপ করা এবং উত্তম আচরণ প্রর্দশন করা স্বামীর উপর অপরিহার্য। আল্লাহ তা'আলা বলেছেন, ‘পুরুষদের যেমন নারীদের উপর অধিকার রয়েছে, ঠিক তেমনি নারীদের রয়েছে পুরুষদের উপর ন্যায়-সঙ্গত অধিকার’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২২৮)।
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সম্পর্কের টানাপোড়েন শুরু হলে প্রথমেই তালাকের পন্থা অবলম্বন করা উচিত নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর স্ত্রীদের মধ্যে যাদের অবাধ্যতার তোমরা আশঙ্কা কর, তাদেরকে সদুপদেশ দাও, তাদের শয্যা ত্যাগ কর এবং তাদেরকে প্রহার কর। অতঃপর যদি তারা তোমাদের অনুগতা হয়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অন্য কোন পথ অন্বেষণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ সুউচ্চ, সুমহান। আর যদি উভয়ের মধ্যে বিরোধ আশঙ্কা কর, তাহলে তোমরা স্বামীর পরিবার হতে একজন এবং স্ত্রীর পরিবার হতে একজন সালিস নিযুক্ত কর, যদি তারা উভয়ে নিষ্পত্তির ইচ্ছা রাখে, তাহলে আল্লাহ তাদের মধ্যে মীমাংসার অনুকূল অবস্থা সৃষ্টি করে দেবেন। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সবিশেষ অবহিত’ (সূরা আন-নিসা: ৩৪-৩৫)। অর্থাৎ স্ত্রী অবাধ্য হলে প্রথমতঃ তাকে সদুপদেশ ও নসীহতের মাধ্যমে বুঝানো। দ্বিতীয়তঃ সাময়িকভাবে তার সংসর্গ ত্যাগ করে বিছানা পৃথক করে দিতে হবে। বুদ্ধিমতী মহিলার জন্য এটি একটি বড় সতর্কতার বিষয়। তৃতীয়তঃ এতেও যদি সে না বুঝে, তাহলে হালকাভাবে প্রহার করার অনুমতি আছে। তবে এই প্রহার যেন হিংস্রতা ও অত্যাচারের পর্যায়ে না পৌঁছে যায়! আল্লাহ তা‘আলা এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) এই যুলুমের অনুমতি কাউকে দেননি। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, তোমরা কেউ নিজ স্ত্রীদেরকে গোলামের মত প্রহার করো না। কেননা, দিনের শেষে তার সঙ্গে তো আবার সহবাস করবে (ছহীহ বুখারী, হা/৫২০৪, ৪৯৪২)।
উল্লিখিত তিনটি ব্যবস্থা গ্রহণ করার পরও যদি কোন ফল না হয়, সেক্ষেত্রে চতুর্থ ব্যবস্থা হল- সালিশি সভার আয়োজন করা। এ ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, দু’জন বিচারক নিষ্ঠাবান ও আন্তরিকতাপূর্ণ হলে, তাদের সংশোধনের প্রচেষ্টা অবশ্যই ফলপ্রসূ হবে। আর যদি তাদের প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ না হয়, তাহলে ত্বালাক্বের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী নিজেদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটিয়ে নেবে (তাফসীরে ত্বাবারী, ফাৎহুল ক্বাদীর এবং ইবনে কাছীর)।
প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ আল-আয়ান, নরসিংদী।