শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:২৬ পূর্বাহ্ন
উত্তর :  কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মধ্যে এ সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট আমল পাওয়া যায় না। যদিও আমাদের সমাজে এ সম্পর্কে বেশ কিছু ভ্রান্ত মতবাদ ছড়িয়ে আছে। যেমন কেউ বলে প্রত্যেক দিন ৪১ বার করে সূরা ইয়াসিন তিলাওয়াত করতে হবে, আবার কেউ বলে, সূরা আল-বাক্বারার ১৬৫ নং আয়াত পাঠ করতে হবে। তারা বলে, যদি কোন স্বামী তার স্ত্রীর প্রতি অসন্তুষ্ট থাকে তখন স্ত্রী মিষ্টি জাতীয় বস্তুর উপর এ আয়াত পাঠ করে দম (ফুঁ) করবে এবং স্বামীকে তা খাওয়াবে। এগুলো সব উদ্ভট তথ্য। পক্ষান্তরে ‘ইসলাম ওয়েব’-এর আলমগণ বলেন,

..ولا نعلم دعاء معينا ولا آيات محدودة ثبت الدعاء بها لتحقيق المحبة بين الزوجين إلا أنه نص أهل العلم على جواز دعاء العبد ربه بما شاء من خير الدنيا والآخرة.

‘আমরা এমন কোন নির্দিষ্ট দু‘আ বা নির্দিষ্ট আয়াতের কথা জানি না, যার মাধ্যমে দু‘আ করে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা প্রতিষ্ঠিত করা যেতে পারে। তবে আহলুল ইল্ম বা জ্ঞানী ব্যক্তিরা বলেছেন যে, একজন বান্দার জন্য তার প্রতিপালকের কাছে দুনিয়া এবং পরকাল সম্পর্কিত যে কোন কল্যাণকর জিনিস চাওয়া এবং তার জন্য প্রার্থনা করা বৈধ’ (ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-৬৫৭৪১)।

তবে স্বামী-স্ত্রীর জন্য কিছু বৈধ করণীয় রয়েছে। যেমন স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধির একটি অনন্য মাধ্যম হল, আল্লাহর দ্বীনকে আঁকড়ে ধরা। কারণ আনুগত্যশীল বান্দাকে তিনি ভালোবাসেন, তার দু‘আ কবুল করেন এবং সৃষ্টি জগতের কাছে তাকে ভালোবাসার পাত্র হিসাবে উপস্থাপন করেন (ছহীহ বুখারী, হা/৩২০৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২৬৩৭)। সুতরাং তাদের উপর অপরিহার্য হল- ফরয ইবাদতসমূহকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা এবং বেশি বেশি নফল ইবাদত করা।

ভালোবাসা বৃদ্ধির আরেকটি মাধ্যম হল- মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করা, কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকা, মন্দকে ভালো দ্বারা প্রতিহত করা, সালামের প্রচার-প্রসার করা, একে অপরকে উপহার দেয়া ইত্যাদি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘আর তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন কর’ (সূরা আন-নিসা : ১৯; ছহীহ মুসলিম, হা/৫৪, ৯৮)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘তোমরা পরস্পর উপহারাদি বিনিময় করো, তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা সৃষ্টি হবে’ (আল-আদাবুল মুফরাদ, হা/৫৯৪, ৫৯৭; ইরওয়াউল গালীল, হা/১৬০১; ছহীহুল জামি‘, হা/৩০০৪)।

শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘তাকে অপকর্ম ও অসৎ সঙ্গী-সাথী থেকে বিরত রাখতে আপনার জন্য করণীয় হল: (১) অবিরাম উপদেশ দিতে থাকা। (২) ভালোবাসার সাথে কথাবার্তা বলা। (৩) অন্যায় ও অসৎ কাজে সাহায্য না করা। (৪) যে তাকে অপকর্ম থেকে মুক্ত করতে পারবে এমন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অথবা বিচারক অথবা কর্তৃত্বশীলের কাছে তার বিষয়টি উত্থাপন করা। (৫) তার জন্য হিদায়াত ও কল্যাণ প্রাপ্তির দু‘আ করতে থাকা (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১০৪৯৭৬)। অন্যত্র ইমাম আল-মুনাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, স্বামীর জন্য সাজসজ্জা করা, সুগন্ধি বা পারফিউম লাগানো এগুলো ভালোবাসার বৈধ দাবি। অনেক আলেম বলেছেন, ‘স্বামীর জন্য সাজসজ্জা করা, সুগন্ধি লাগানো এগুলো প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা বৃদ্ধি করে এবং ঘৃণা, অবজ্ঞা, অশ্রদ্ধা কমিয়ে দেয়। কেননা চক্ষুই হল হৃদয়ের আয়না, যখন কোন জিনিস চোখে ভালো লাগে তখনই তার প্রতি অন্তরে ভালোবাসা উদিত হয়। সেই জন্যই আরবের মেয়েরা একে অপরকে এ বিষয়ে উপদেশ করতেন’ (ফায়যুল ক্বাদীর, ৩/১৯০ পৃ.)। শায়খ ইবনে বায (রাহিমাহুল্লাহ) ও শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মহিলারা নিজেকে মেকআপ বা এ জাতীয় অঙ্গসজ্জা দ্বারা সুসজ্জিত করতে পারে, এটা মোটেও দোষণীয় নয়। বরং একটা নির্দিষ্ট শারঈ সীমারেখার মধ্যে থেকে স্বামীর জন্য রূপচর্চা করা অতীব যরূরী। কেননা এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে ভালোবাসার বন্ধন সুদৃঢ় ও মধুর হয়। যে ধরনের রূপচর্চাকে শরী‘আত অনুমোদন করেছে সেগুলো করতে কোন বাধা নেই, কিন্তু যা ক্ষতিকারক তাকে সর্বাবস্থায় ত্যাগ করতে হবে (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ৬/৩৯৫ পৃ.; ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-র্দাব, ১১/৭৪ পৃ.; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে উছায়মীন, ১২/২৯০ পৃ.)।

দ্বিতীয়তঃ শায়খ ছালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘স্ত্রীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা জায়েয নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর তোমরা তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সৎভাবে জীবন-যাপন কর, তোমরা যদি তাদেরকে (স্ত্রীদেরকে) ঘৃণা কর, তাহলে এমনও হতে পারে যে, আল্লাহ যার মধ্যে প্রভূত কল্যাণ রেখেছেন, তোমরা তাকে ঘৃণা করছ’ (সূরা আন-নিসা : ১৯)। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, وَإِنَّ لِزَوْجِكَ عَلَيْكَ حَقًّا ‘তোমার উপর তোমার স্ত্রীর অধিকার রয়েছে’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৯৭৪)।  রাসূল (ﷺ) বলেছেন,

خَيْرُكُمْ خَيْرُكُمْ لِأَهْلِهِ وَأَنَا خَيْرُكُمْ لِأَهْلِي وَإِذَا مَاتَ صَاحِبُكُمْ فَدَعُوْهُ.

‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি তোমাদের চেয়ে আমার পরিবারের কাছে অধিক উত্তম। আর তোমাদের কোন সঙ্গী মৃত্যুবরণ করলে তার সমালোচনা পরিত্যাগ কর’ (তিরমিযী, হা/৩৮৯৫; ইবনে মাজাহ, হা/১৯৭৭; মিশকাত, হা/৩১৮৯; সনদ ছহীহ, ছহীহুল জামি‘, হা/৩৩১৪)। প্রতিশোধের আকাক্সক্ষা বর্জন করে, একে অপরের অসদাচরণ, অসদ্ব্যবহার ও অন্যায়াচরণে যথাসাধ্য ধৈর্যধারণ করতে হবে। মন্দ আচরণকে ভালো ব্যবহার দ্বারা প্রতিহত করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘আর ভাল ও মন্দ সমান হতে পারে না। মন্দকে প্রতিহত করুন তা দ্বারা যা উৎকৃষ্ট, ফলে আপনার ও যার মধ্যে শত্রুতা আছে, সে হয়ে যাবে অন্তরঙ্গ বন্ধুর মত’ (সূরা আল-ফুসসিলাত : ৩৪; আল-মুনতাক্বা ইবনে ফাওযান, ৪/১১৭)।


প্রশ্নকারী : উম্মে আনিকা, রাজশাহী।




প্রশ্ন (১৬) : মৃতের জন্য কুলখানি, চল্লিশা, মীলাদ ইত্যাদি অনুষ্ঠান পালন করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) : হারাম মাসসমূহে শিকার করা কি হারাম? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কতজন ছাহাবী বিবাহ করেননি বা সংসার করেননি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) : সিজদায় কুরআনে বর্ণিত কোন্ দু‘আ করা নিষেধ? কুরআনে বর্ণিত দু‘আ করার শুরুতে ‘আঊযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম’ পড়তে হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : এমন সংগীত যেখানে বাদ্য-যন্ত্রের ব্যবহার খুব‌ই কম এবং মুহাম্মাদ রাফী, তালাত মাহমুদ প্রভৃতিদের গাওয়া গান কি শোনা জায়েয হবে? এ সকল গানে কোন অশ্লীলতা, কিংবা যৌন উত্তেজনা সম্পর্কিত কিছু নেই। এগুলো শোনা কি জায়েয হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪) : স্বামীর একার উপার্জনে দুই সন্তানসহ, মা-বাবা, অবিবাহিত বোন এবং একজন ভাগ্নের মোট ৮ জনের সংসার চলে। স্বামীর উপার্জন দিয়ে সবার খরচ মেটাতে গিয়ে স্ত্রীকে ন্যূনতম প্রয়োজন (মৌলিক পোশাক-প্রসাধনী) থেকেও বঞ্চিত করা হয়। অথচ অন্যদের জন্য বিলাসবহুল ভাবেই মেটানো হয়। স্বামীর বাবার ব্যাংকে ৩০ লক্ষ টাকা জমা আছে। প্রতি মাসে নতুন করে সেখানে প্রায় ১৫ হাজার টাকা জমা করা হয়। স্বামীর সংসারে তাঁর বাবা কোন খরচ করেন না। পরিবারের সমস্ত ব্যয়ভার স্বামীকে একাই বহন করতে হয়। প্রশ্ন হল- স্ত্রী ও সন্তানদের বঞ্চিত করে বাবার টাকা ব্যাংকে জমিয়ে পরিবারের সকল সদস্যের ব্যয় বহন করা কি স্ত্রী ও সন্তানদের উপর যুলম নয়? স্বামীর পক্ষে এত বড় সংসারের ব্যয়ভার বহন করতে খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু তার বাবা-মায়ের অভিশাপের ভয়ে অমানসিক কষ্ট সহ্য করতে হয়। কারণ বাবা-মাকে কিছু বললেই তারা সংসারে অশান্তি তৈরি করেন। এই বিষয়ে ইসলাম কী বলে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২) : উটের মালিক সম্মান ও ইজ্জতের অধিকারী এবং ছাগল বরকতপূর্ণ প্রাণী। আর ঘোড়ার কপালে ক্বিয়ামত পর্যন্ত কল্যাণ বাঁধা থাকবে। উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৮) : ট্রান্সজেন্ডার বা হিজড়াদের ব্যাপারে একজন মুমিনের কেমন ধারণা থাকা উচিত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৫) : আমাদের এলাকায় মসজিদে লেখা রয়েছে যে, ‘লাল বাতি জ্বললে সুন্নাতের নিয়ত করবেন না’। এটা কতটুকু শরী‘আত সম্মত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২২) : হিন্দু বিয়েতে গিফট দেয়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৩) : স্বাধীন মেয়েকে বিবাহ করলে না-কি আল্লাহর সাথে পবিত্র অবস্থায় সাক্ষাৎ করা যায়। কথাটি কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩২) : দাওয়াতের উদ্দেশ্যে মসজিদের ভিতরে ইসলামী বই কেনা-বেচা করা যাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ