উত্তর : ঋতুস্রাবের সর্বনিম্ন এবং সর্বোচ্চ সময়সীমা নির্ধারিত নেই। আল্লাহ তা‘আলা, রাসূল (ﷺ) এমনকি ছাহাবীদের পক্ষ থেকেও সময়সীমা সম্পর্কে কোন তথ্য পাওয়া যায় না (আশ-শারহুল কাবীর, ১/১৬৮; আল-মুহাল্লা, ১/৪০৫; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনি তাইমিয়্যাহ, ১৯/২৪০; ই‘লামুল মুওয়াক্কিঈন, ১/২৯৭; সিলসিলা যাঈফাহ, ৩/৬০৯; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১১/৩০০ পৃ.)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘লোকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তুমি বল, তা অপবিত্র। সুতরাং তোমরা মাসিক অবস্থায় স্ত্রী সহবাস বর্জন কর এবং যতদিন না তারা পবিত্র হয়, (সহবাসের জন্য) তাদের নিকটবর্তী হয়ো না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২২২)। উক্ত দলীল উল্লেখ করে শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা ঋতুবতী হওয়ার পর থেকে পবিত্রতা অর্জন করা পর্যন্ত বিরত থাকতে বলেছেন। এখানে সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ সময়সীমা নির্ধারণ করেননি। সুতরাং প্রমাণিত হল যে, ঋতুস্রাব বলতে বুঝায় কালো গাঢ় রক্ত প্রবাহিত হওয়া। যতদিন রক্ত প্রবাহিত হবে, ততদিন মাসিকের বিধান তার উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। আর যখন পবিত্রতা অর্জন করবে, তখন বিধান থেকে মুক্ত হয়ে যাবে’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল, ১১/৩০০-৩০১ পৃ.)। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, ‘আমরা আল্লাহর রাসূল (ﷺ)-এর সঙ্গে হজ্জের উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। আমরা ‘সারিফ’ নামক স্থানে পৌঁছলে আমি ঋতুবতী হয়ে পড়ি। এ সময় নবী (ﷺ) এসে আমাকে কাঁদতে দেখলেন এবং জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কাঁদছ কেন? আমি বললাম, আল্লাহর শপথ! এ বছর হজ্জ না করাই আমার জন্য পসন্দনীয়। তিনি বললেন, সম্ভবত তুমি ঋতুবতী হয়েছ। আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, এটাতো আদম-কন্যাদের জন্য আল্লাহ নির্ধারিত করেছেন। তুমি পবিত্র হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য হাজীদের মত সমস্ত কাজ করে যাও, কেবল কা‘বার ত্বাওয়াফ করবে না’ (ছহীহ বুখারী, হা/৩০৫; ছহীহ মুসলিম, হা/১২১১)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, فَقِيْلَ لَهَا انْتَظِرِيْ فَإِذَا طَهُرْتِ فَاخْرُجِيْ إِلَى التَّنْعِيْمِ فَأَهِلِّي ‘তাঁকে বলা হল- তুমি অপেক্ষা কর। পরে যখন তুমি পবিত্র হবে তখন তান‘ঈমে গিয়ে ইহরাম বাঁধবে...’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৭৮৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১২১১)।
এখানেও রাসূল (ﷺ) কোন সময় নির্ধারণ না করে পবিত্রতাকেই মানদণ্ড করেছেন। সুতরাং বুঝা গেল, ছালাত আদায় করা বা না করার বিষয়টি ঋতুস্রাব বিদ্যমান থাকা বা না থাকার উপর নির্ভরশীল’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল ইবনে উছাইমীন, ১১/৩০০ পৃ.)। তবে মোদ্দাকথা হল- শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যেহেতু কুরআন ও ছহীহ হাদীছের মধ্যে ঋতুস্রাবের কোন সময়সীমা নির্ধারণ করেনি, তাই আমরাও এর সর্বনিম্ন বা সর্বোচ্চ সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দিতে পারি না। বরং যে নির্ধারণ করার চেষ্টা করবে, সে অবশ্যই কিতাব ও সুন্নাহর বিপরীত কাজ করবে। প্রত্যেক মেয়ের অভ্যাস হিসাবে যার যতদিন ঋতস্রাব চলমান থাকবে, তিনি ততদিন পর্যন্ত ছালাত আদায় করা থেকে বিরত থাকবেন। যদিও সেটা সর্বনিম্ন একদিন হতে পারে অথবা সর্বোচ্চ ১৫ দিন হতে পারে’ (আল-ইখতিয়ারাতুল ফিক্বহিয়্যাহ, পৃ. ৪০০; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ১৯/২৪০ পৃ.)। তবে ইমাম ইবনি কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আত্বা ও আহমাদ বলেন, ‘ঋতুস্রাবের সর্বনিম্ন সময়সীমা ১ দিন ও সর্বোচ্চ সময়সীমা ১৫ দিন, এর পরেও যদি রক্ত দেখা যায়, তবে সেটি ইস্তিহাযাহ হিসাবে পরিগণিত হবে’ (আল-মুগনী, ১/২২৫ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : যাকিয়া, দাঊদকান্দি, কুমিল্লা।