উত্তর : যৌতুক নেয়া জঘন্যতম অপরাধ ও হারাম কাজ। যৌতুক মানে নারীর অবমাননা, নারীর মর্যাদায় কুঠারাঘাত, সংসারে অশান্তির বিষাক্ত দাবানল। ইসলাম নারীকে যথার্থ মোহরানা প্রদান করতে বলেছে। উল্টো তার পরিবারের কাছ থেকে নিতে বলেনি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা তাদেরকে নিজ সম্পদের বিনিময়ে বিবাহের মাধ্যমে গ্রহণ করবে। অবৈধ যৌন-সম্পর্কের মাধ্যমে নয়। অতঃপর তোমরা তাদের মধ্যে যাদের (মাধ্যমে দাম্পত্যসুখ) উপভোগ করবে, তাদেরকে নির্ধারিত মোহর অর্পণ করো। মোহর নির্ধারণের পর কোন বিষয়ে পরস্পর রাযী হলে তাতে তোমাদের কোন দোষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’। পরের আয়াতে বলেন, ‘...এবং ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদেরকে তাদের মোহরানা প্রদান কর’ (সূরা আন-নিসা: ২৪-২৫)।
নবী (ﷺ) বলেন, إِنَّ أَحَقَّ الشَّرْطِ أَنْ يُوْفَى بِهِ مَا اسْتَحْلَلْتُمْ بِهِ الْفُرُوجَ ‘সবচেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ শর্ত যা পূরণ করা যরূরী, তা হল সেই বস্তুত যার দ্বারা তোমরা (স্ত্রীদের) গুপ্তাঙ্গ হালাল করে থাক (অর্থাৎ মোহরানা)’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৭২১; ছহীহ মুসলিম, হা/১৪১৮)। মেয়ের পিতার নিকট থেকে যৌতুক নেয়া অর্থলোলুপতা, এক প্রকার ঘুষ। যৌতুকের নামে অসৎ উপায়ে অন্যের অর্থ আত্মসাৎ করা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা অন্যায় ভাবে একে অপরের সম্পদ গ্রাস করো না এবং জেনে-শুনে লোকেদের ধন সম্পদের কিয়দংশ অন্যায়ভাবে গ্রাস করার উদ্দেশ্যে বিচারকগণকে উৎকোচ দিও না’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ১৮৮)।
আলেমগণ বলেন, ‘নেয়া তো দূরের কথা, জামাই এর মনে পাওয়ার আকাক্সক্ষা এবং না পেলে অন্তরে ব্যথা বা কারো নিকট অভিযোগ করাও অপরাধ’ (মাজাল্লাতুল বুহূছিল ইসলামিয়্যাহ, ২৬/৯৯ পৃ.)। নিঃসন্দেহে হারাম ঋণ পরিশোধ করা শারঈ দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না। কিন্তু সমস্যা হল যৌতুকের ঋণ পরিশোধ না করলে যদি শ্বশুরবাড়ির লোকেরা কন্যার উপর নির্যাতন, লাঞ্ছনা, বঞ্চনা, গঞ্জনা ও ভৎর্সনা করে! স্বামী বা তার বাড়ির লোকেরা যদি তার উপর পাশবিক অত্যাচার চালায়! শেষ পরিণতি যদি বিবাহ-বিচ্ছেদ, নচেৎ বধূর আত্মহত্যা অথবা লোভী পাষণ্ডদের পরিকল্পিত বধূহত্যা হয়! তবে ঘৃণার সহিত যৌতুকের ঋণ পরিশোধ করবেন। আর যদি পাত্রপক্ষের লোকেরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারে, কিংবা তাদের বুঝানো সম্ভবপর হয়, তাহলে ঋণ পরিশোধ করার কোন প্রয়োজন নেই (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৬০১৮৫; ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-৬৫২৬১, ৯৫০০২)। বাকি থাকল, জামাই ও তার পরিবারের লোকজন দুনিয়াবী তুচ্ছ শাস্তি থেকে পরিত্রাণ পেলেও কিন্তু পরকালের ভয়াবহ শাস্তি থেকে রক্ষা পাবে না।
প্রশ্নকারী : রাজীব বিন আব্দুল বাশার, সাভার, ঢাকা।