উত্তর : একজন মুসলিম অপর মুসলিমের নিকট দু‘আ চাইতে পারে এবং চাওয়া উত্তম। মহান আল্লাহ বলেন, ইয়াকূব (আলাইহিস সালাম)-এর পুত্রগণ পিতার নিকট বলল, আমাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন (সূরা ইউসুফ : ৯৭)। আবূ হুরায়রা (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট তার মায়ের হেদায়াতের জন্য দু‘আ চাইলে তিনি দু‘আ করে বলেন, اللَّهُمَّ اهْدِ أُمَّ أَبِىْ هُرَيْرَةَ ‘হে আল্লাহ! আপনি আবূ হুরায়রার মাকে হেদায়াত দান করুন’। তিনি আবারো বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনি দুআ করুন, আল্লাহ তা‘আলা যেন আমাকে ও আমার মাকে সকল মুমিনের নিকট প্রিয় বানিয়ে দেন। আর সকল মুুমিনকে আমাদের নিকট প্রিয় করে দেন। তখন রাসূল (ﷺ) দু‘আ করলেন, اللَّهُمَّ حَبِّبْ عُبَيْدَكَ هَذَا - يَعْنِى أَبَا هُرَيْرَةَ وَأُمَّهُ - إِلَى عِبَادِكَ الْمُؤْمِنِيْنَ وَحَبِّبْ إِلَيْهِمُ الْمُؤْمِنِيْنَ ‘হে আল্লাহ! আপনার এ বান্দাকে অর্থাৎ আবূ হুরায়রাকে ও তার মাকে আপনার মুমিন বান্দাদের কাছে প্রিয় বানিয়ে দিন। আর এদের নিকট আপনার মুমিন বান্দাদেরকে প্রিয় করে দিন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৯১)।
আব্দুল্লাহ ইবনু বুসর (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার পিতার নিকট পৌঁছলেন। আমরা তাঁর নিকট কিছু রুটি ও খেজুর, পনির ও ঘি মিশ্রিত এক জাতীয় মিষ্টান্ন পেশ করলাম। তাঁর খাওয়া শেষ হলে আমার পিতা তাঁর সওয়ারীর লাগাম ধরে বললেন, আমাদের জন্য আল্লাহর নিকট কিছু দু‘আ করুন। তখন তিনি বললেন, اللهم بَارِكْ لَهُمْ فِيْمَا رَزَقْتَهُمْ وَاغْفِرْ لَهُمْ وَارْحَمْهُمْ ‘হে আল্লাহ! আপনি তাদেরকে যা দান করেছেন তাতে আপনি বরকত দান করুন এবং তাদেরকে মাফ করুন ও দয়া করুন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২০৪২; আবূ দাঊদ, হা/৩৭২৯; মিশকাত, হা/২৪২৭)। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) ‘আত্বা ইবনে আবু রিবাহকে বললেন, ‘আমি কি তোমাকে একটি জান্নাতী মহিলা দেখাব না!’ আমি বললাম, ‘হ্যাঁ!’ তিনি বললেন, ‘এই কৃষ্ণকায় মহিলাটি নবী (ﷺ)-এর নিকটে এসে বলল যে, আমার মৃগী রোগ আছে, আর সে কারণে আমার দেহ থেকে কাপড় সরে যায়। সুতরাং আপনি আমার জন্য দু‘আ করুন’। তিনি বললেন, ‘তুমি যদি চাও ছবর কর, তোমার জন্য জান্নাত রয়েছে। আর যদি চাও তাহলে আমি তোমার রোগ নিরাময়ের জন্য আল্লাহ তা‘আলার নিকটে দু‘আ করব। স্ত্রীলোকটি বলল, ‘আমি ছবর করব’। অতঃপর সে বলল, ‘(রোগ উঠার সময়) আমার দেহ থেকে কাপড় সরে যায়, সুতরাং আপনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করুন, যেন আমার দেহ থেকে কাপড় সরে না যায়’। ফলে নবী (ﷺ) তার জন্য দু‘আ করলেন (যাতে তার কাপড় খুলে না যায়। তারপর সে মৃগী আক্রান্ত হত কিন্তু তার কাপড় খুলত না) (ছহীহ বুখারী, হা/৫৬৫২; মিশকাত, হা/১৫৭৭)।
রাসূল (ﷺ) আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর জন্য দু‘আ করেছিলেন, اللَّهُمَّ أكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ، وَبَارِكْ لَهُ فِيمَا أَعْطَيْتَهُ ‘হে আল্লাহ! তাকে বেশি বেশি সন্তান ও সম্পদ দান করুন এবং তাকে যা দিয়েছেন তাতে বারাকাহ দান করুন’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬৩৩৪)। রাসূল (ﷺ) এক যুবকের জন্য দু‘আ করেছিলেন যে, اللَّهُمَّ اغْفِرْ ذَنْبَهُ وَطَهِّرْ قَلْبَهُ وَحَصِّنْ فَرْجَهُ ‘হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন, তার অন্তরকে পবিত্র করুন ও তার লজ্জাস্থানের হেফাযত করুন’ (আহমাদ, হা/২২২৬৫, সনদ ছহীহ)। সুতরাং যখন কেউ তার মুসলিম ভাইয়ে নিকট দু‘আ চাইবে তখন তার পরিস্থিতি বুঝে দু‘আ করতে হবে।
প্রশ্নকারী : ফয়সাল আহমাদ, নাটোর।