উত্তর : ব্যবহার্য অলংকারের যাকাত দিতে হবে। যারা দাবী করেন ব্যবহার্য স্বর্ণ বা রূপার যাকাত দেয়া লাগবে না তাদের দাবী সঠিক নয়। কারণ অলঙ্কারে যাকাত দেয়ার পক্ষে অনেক ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। যেমন
عَنْ عَائِشَةَ زَوْجِ النَّبِىِّ ﷺ فَقَالَتْ دَخَلَ عَلَىَّ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ فَرَأَى فِى يَدِى فَتَخَاتٍ مِنْ وَرِقٍ فَقَالَ مَا هَذَا يَا عَائِشَةُ. فَقُلْتُ صَنَعْتُهُنَّ أَتَزَيَّنُ لَكَ يَا رَسُوْلَ اللهِ. قَالَ أَتُؤَدِّينَ زَكَاتَهُنَّ. قُلْتُ لَا أَوْ مَا شَاءَ اللهُ. قَالَ هُوَ حَسْبُكِ مِنَ النَّارِ
আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, আমরা একদা রাসূল (ﷺ)-এর নিকট উপস্থিত হলে আমার হাতে রৌপ্যের বড় বড় আংটি দেখতে পান। তিনি বললেন, হে আয়েশা! এটা কী? আমি বললাম, হে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ)! আপনার উদ্দেশ্যে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এটা তৈরি করেছি। তিনি জিজ্ঞেস করলনে, তুমি কি এর যাকাত পরিশোধ করে থাক? আমি বললাম, না। তিনি বললেন, هُوَ حَسْبُكِ مِنَ النَّارِ ‘তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যাওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট (আবুদাঊদ হা/১৫৬৫, সনদ ছহীহ)।
অন্য হাদীছে এসেছে, আম্র ইবনু শু‘আইব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, দু’জন স্ত্রী লোক রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট আসল। তখন তাদের হাতে দু’টি স্বর্ণের বালা ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন, তোমরা কি এর যাকাত আদায় করেছ? তারা বলল, না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তোমরা কি ভালবাস যে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তোমাদেরকে দু’টি আগুনের বালা পরাবেন? তারা বলল, না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তাহলে তোমরা এর যাকাত আদায় কর (তিরমিযী হা/৬৩৭, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/১৮০৯)।
আরেকটি হাদীছে এসেছে, আম্র ইবনু শু‘আইব তাঁর পিতার মাধ্যমে তাঁর দাদা হতে বর্ণনা করেন যে, একজন মহিলা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর নিকট আসল। তার সাথে তার মেয়ে ছিল এবং তার হাতে দু’টি স্বর্ণের বালা ছিল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি এর যাকাত আদায় করেছ? সে বলল, না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, তুমি কি পসন্দ করবে যে, আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তোমাদেরকে দু’টি আগুনের বালা পরাবেন? রাবী বলেন, এটা শুনা মাত্রই মহিলা বালা দু’টি খুলে রাসূল (ﷺ)-এর দিকে ফেলে দিল এবং বলল, এগুলো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের জন্য (আবুদাঊদ হা/১৫৬৩ সনদ হাসান; নাসাঈ হা/২৪৭৯)।
অন্য হাদীছে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদের স্ত্রী যয়নব হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, একদা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের উপদেশ দিলেন এবং বললেন, হে নারী সমাজ! তোমরা ছাদাক্বাহ কর (যাকাত দাও) যদিও তোমাদের গহনার হোক না কেন। কারণ ক্বিয়ামতের দিন তোমরাই জাহান্নামের অধিক অধিবাসী হবে (তিরমিযী হা/৬৩৫, সনদ ছহীহ; মিশকাত হা/১৮০৮)।
সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া বোর্ড, শায়খ বিন বায, শায়খ উছায়মীন প্রমুখ বিদ্বান ব্যবহৃত অলংকারের যাকাত দেয়ার পক্ষে শক্ত ফৎওয়া দিয়েছেন (ফাতাওয়া আল-লাজনাহ আদ-দায়েমাহ, ৯/২৬৭ পৃ.; ফাতাওয়া শায়খ বিন বায, ১৪/৮৪ পৃ.; ফাতাওয়া আরকানুল ইসলাম, ফৎওয়া নং-৩৬৪)।
উল্লেখ্য যে, ‘অলঙ্কারের যাকাত নেই’ মর্মে জাবের (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বর্ণিত মাওকূফসূত্রে যে বর্ণনা এসেছে, তা ভিত্তিহীন (দারাকুৎনী, হা/১৯৭৮; বায়হাক্বী, মা‘রেফাতুস সুনান ওয়াল আছার, হা/২৫০৫)। ইমাম বায়হাক্বী নিজেই বলেছেন, এটা বাতিল বর্ণনা (ইরওয়াউল গালীল, হা/৮১৭; যঈফুল জামে‘, হা/৪৯০৬)।
প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ, ঢাকা।