শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন
উত্তর : শাসক যদি অত্যাচারী ও অন্যায়কারী হয়, যদি তার অনৈতিক কাজ কুফরীর পর্যায়ে পৌঁছে যায়, তবে তাকে অবশ্যই অপসারণ করতে হবে (আল-মু‘লিম বি ফাওয়ায়িদি মুসলিম, ৩/৫২ পৃ.)। আর  যদি স্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত হয় কিংবা মুরতাদ (مُرْتَدّ) (স্বধর্মত্যাগী) হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা জায়েয। ছহীহ বুখারীতে ‘কিতাবুল ফিতান’-এর মধ্যে ইমাম বুখারী (রাহিমাহুল্লাহ) ‘নবী (ﷺ)-এর বাণী, আমার পরে অচিরেই তোমরা এমন কিছু বিষয় দেখতে পাবে, যা তোমরা পসন্দ করবে না’ নামে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করেছেন (অধ্যায় নং-৯২, অনুচ্ছেদ নং-২)। এবং এর অধীনে তিনি বেশ কয়েকটি হাদীছ বর্ণনা করেছেন। তার মধ্যে একটি হাদীছ হল, ছাহাবীরা বাই‘আতের সময় বলেছিলেন,

وَأَنْ لَا نُنَازِعَ الْأَمْرَ أَهْلَهُ إِلَّا أَنْ تَرَوْا كُفْرًا بَوَاحًا عِنْدَكُمْ مِنْ اللهِ فِيْهِ بُرْهَانٌ

‘আমরা ক্ষমতা সংক্রান্ত বিষয়ে ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে ঝাগড়া করব না। তবে হ্যাঁ, যদি তোমরা (শাসককে) স্পষ্ট কুফরীতে দেখো, যে সম্পর্কে তোমাদের কাছে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণ বিদ্যমান, তাহলে সেটি ভিন্ন কথা’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭০৫৫-৭০৫৬, ৭২০০; ছহীহ মুসলিম, হা/১৭০৯)।

উপরিউক্ত হাদীছের ব্যাখ্যায় হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি শাসক দ্বারা স্পষ্ট কুফরী সংঘটিত হয়, আর সেটা যদি বিশ্বস্ত সূত্রে প্রমাণিত হয়, সেক্ষেত্রে ঐ বিষয়ে তার আনুগত্য করা জায়েয নয়। বরং ক্ষমতা থাকলে প্রতিবাদ করা অপরিহার্য’ (ফাৎহুল বারী, ১৩/৭-৮ পৃ.)। ইমাম খাত্তাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, অর্থাৎ সে যদি প্রকাশ্যে কুফরী মূলক কাজ করে’ (গারীবুল হাদীছ, ১/৬৯০ পৃ.)। আবূ ইয়া‘লা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘সে যদি দ্বীন বিনষ্টকারী কাজ করে, যদি সে ঈমান আনয়নের পর ধর্ম ত্যাগ করে, তাহলে তাকে শাসকের পদ থেকে বহিষ্কার করতে হবে এবং তাকে হত্যা করা ওয়াজিব হয়ে যাবে’ (আল-মু‘তামিদ ফী উছূলিল দ্বীন, পৃ. ২৪৩)। ক্বাযী আয়ায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুসলিমদের ঐকমত্যানুযায়ী কোন কাফিরকে ক্ষমতায় বসানোর চেষ্টা করা যাবে না এবং তাকে সাপোর্ট করা যাবে না’ (ইকমালুল মু‘লিম, ৬/২৪৬ পৃঃ.)। ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘অর্থাৎ যদি তার কুফরী স্পষ্ট দলীল দ্বারা প্রমাণিত হয়, কোন প্রকার সন্দেহ ছাড়াই তার কুফরীর কথা জানা যায়, তাহলে তার আনুগত্য থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে’ (আল-মুফহিম, ৪/৪৬ পৃ.)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি মুসলিমরা শাসককে স্পষ্ট কুফরী করতে দেখে, সেক্ষেত্রে ক্ষমতা থাকলে  তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা দোষনীয় নয়। আর যদি তাদের ক্ষমতা না থাকে, তাহলে বিদ্রোহ করা যাবে না। অথবা বিদ্রোহ করতে গিয়ে যদি ভয়াবহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়, সেক্ষেত্রেও সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার জন্য বিদ্রোহ করা যাবে না। এ ব্যাপারে শরী‘আতের স্থিরিকৃত নীতিমালা হল:

أنَّه لا يَجوزُ إزالةُ الشَّرِّ بما هو أشَرُ منه، بَل يَجِبُ دَرءُ الشَّرِّ بما يُزيلُه أو يُخَفِّفُه

‘মন্দকে তার চেয়ে খারাপ কিছু দ্বারা প্রতিহত করা জায়েয নয়, বরং যা দ্বারা দূর করা বা কম করা সম্ভব তা দ্বারা মন্দকে দূরে রাখা আবশ্যক। মুসলিমদের ইজমা অনুযায়ী, মন্দকে অধিকতর মন্দ দ্বারা দূরীভূত হয় জায়েয নয়’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ৮/২০৩ পৃ.)।

শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) ও শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘ইসলামী শরী‘আতের একটি সূত্র হল- ‘মন্দকে মন্দতর দিয়ে প্রতিরোধ করা যাবে না। বরং যা দিয়ে মন্দকে নির্মূল করা যাবে, কিংবা কমানো যাবে তা দ্বারা মন্দকে প্রতিরোধ করতে হবে’। তাই যে শাসক সুস্পষ্ট কুফরীতে লিপ্ত তাকে যারা ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় তাদের যদি এমন সক্ষমতা থাকে যা দিয়ে তারা তাকে পদচ্যুত করতে পারবে, এবং তার বদলে একজন ভাল ও নেককার শাসক বসাতে পারবে, আর এর ফলে মুসলিমদের মধ্যে বড় ধরনের কোন বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে না, এ শাসকের অনিষ্টের চেয়ে বড় কোন অনিষ্টের শিকার হবে না, তাহলে এতে কোন বাধা নেই। পক্ষান্তরে, এ বিদ্রোহের মাধ্যমে যদি বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়, নিরপরাধ মানুষ যুল্ম ও গুপ্ত হত্যার শিকার হয়... ইত্যাদি ইত্যাদি তাহলে বিদ্রোহ করা জায়েয হবে না। বরং ধৈর্য ধারণ করতে হবে, শাসকের ভাল নির্দেশের আনুগত্য করতে হবে। শাসককে উপদেশ দিতে হবে, ভাল কাজ করার দিকে ডাকতে হবে। মন্দকে কমানো ও ভালকে বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। এটাই সরল পথ, যে পথ অনুসরণ করা আমাদের কর্তব্য। কারণ এ পথে মুসলিমদের জন্য সার্বিক কল্যাণ নিহিত, এ পথে ক্ষতির দিক কম, কল্যাণের দিক বেশি, এ পথে আরো বড় অকল্যাণ থেকে মুসলিমদের নিরাপত্তা নিহিত আছে’ (আশ-শারহুল মুমতি‘, ১১/৩২৩ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৯৯১১)।

রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘তোমাদের উপরে ভালো ও মন্দ দু’ধরনের শাসক আসবে। যে ব্যক্তি তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে সে দায়িত্বমুক্ত হবে। যে ব্যক্তি তাকে অপসন্দ করবে, সে নিরাপত্তা লাভ করবে। কিন্তু যে ব্যক্তি তার উপর সন্তুষ্ট থাকবে ও তার অনুসারী হবে। তখন ছাহাবায়ে কিরাম বললেন, আমরা কি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না? উত্তরে রাসূল (ﷺ) বললেন, না, যতক্ষণ তারা ছালাত আদায় করে। না, যতক্ষণ তারা ছালাত আদায় করে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৫৪, ১৮৫৬)। ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘এ হাদীছ প্রমাণ করে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে ছালাত আদায় করতে থাকবে, তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করা যাবে না’ (নাইনুল আওত্বার, ৭/২০৬; শারহুল মিশকাত, ৮/২৫৬২ পৃ.)। লক্ষণীয় বিষয় হল- ছাহাবীগণ, তাবিঈগণ ও তাবি-তাবিঈগণের যুগের যুদ্ধগুলো কোনোটিই ‘সরকার পরিবর্তনের জন্য’ সুপরিকল্পিত বিদ্রোহ ছিল না। তাঁরা ‘সরকারের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বা কর্তৃত্বের স্বীকৃতি দেয়ার’ পরে সরকার পরিবর্তনের জন্য বিদ্রোহ বা যুদ্ধ করেননি। মূলত এগুলো ছিল সরকারের কর্তৃত্ব স্বীকারের আগে স্ব স্ব ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ অথবা দু’পক্ষেরই রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা লাভের দাবির কারণে, কখনো বা পরিবেশ পরিস্থিতির চাপে অনিচ্ছাকৃত যুদ্ধ’ (তাহযীব ইবনু আসাকীর, ৭/৪০৮-৪১০ পৃ.)।


প্রশ্নকারী : আব্দুল্লাহ তাহসীন, জামালপুর।





প্রশ্ন (২০) : বিবাহের সুন্নাতী তরীকাগুলো কী কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : জুমু‘আহ মসজিদে প্রথম জামা‘আতের পর আর জামা‘আত করা যাবে কি? পরের জামা‘আতে ইক্বামত দিতে হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : ইসলামের দৃষ্টিতে আদর্শ পোশাকের বৈশিষ্ট্য কেমন? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩০) : জুম‘আর খুতবা ও ছালাতের সময় এবং অন্যান্য ছালাতের সময় সামনে, পিছনে কিংবা উপর থেকে ভিডিও করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২): ইনসূরেন্স কোম্পানিতে ১২ বছরের জন্য টাকা রাখা আছে এবং ফিক্সড ডিপোজিটও করা আছে। এগুলো হারাম জানার পর এখন আর চলমান থাকবে না। কিন্তু মূলধন এখন তোলা যাবে না, কয়েক বছর পর তোলা যাবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- প্রতি বছরই কি ঐ টাকার যাকাত দিতে হবে, না- টাকা হাতে আসার পর যাকাত দিতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৪) : ‘আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) জিনের সাথে লড়াই করেছেন এবং তাদেরকে সাত যমীন পর্যন্ত পাঠিয়ে দিয়েছেন’ মর্মে বর্ণিত ঘটনা কি সত্য? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩) : আমি যদি আওয়াল ওয়াক্তে একাকী ছালাত আদায় করি, তাহলে কি জামা‘আতের নেকী থেকে বঞ্চিত হব? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৩) : হজ্জের সময় নারীরা ঋতুবতী হয়ে পড়লে করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : পিতার সূদের টাকা সন্তান ভক্ষণ করলে সন্তানের ইবাদত কবুল হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৪): বর্তমানে নবী ও রাসূল সম্পর্কিত বহু কার্টুন ও মুভী প্রকাশিত হয়েছে, যার মাধ্যমে নবীদের কাহিনী শেখা যায়। প্রশ্ন হল- এগুলো দেখা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২১) : সম্মেলন, সমাবেশ, সভা-সমিতি, খতমে বুখারী ও বিভিন্ন অনুষ্ঠান শেষে দলবদ্ধ মুনাজাত করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : যারা ফজরের ফরয ছালাত আদায় করে না ইসলামী শরী‘আতে তাদের হুকুম কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ