শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন
উত্তর : অত্যাচারী মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা এবং অস্ত্র ধারণ করা জায়েয নয়, যতক্ষণ না তার দ্বারা স্পষ্ট কুফর সংঘটিত হবে’। ইমাম আবূ হানীফা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি লোকেরা মুসলিমদের মধ্য থেকে কোন একজন ইমামের (শাসকের) ব্যাপারে ঐকমত্য হয় এবং লোকেরা নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে বসবাস করে এবং রাস্তা-ঘাটও বিপদমুক্ত থাকে। এমতাবস্থায় যদি ইসলামের লেবাসধারী কিছু দুষ্টু মানুষ মুসলিম জামা‘আত সমর্থিত শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এক্ষেত্রে সাধারণ মুসলিমদের উচিত জামা‘আত সমর্থিত ইমামের সাহায্য করা। আর যদি তারা সাহায্য করতে না পারে, তবে তারা যেন তাদের ঘরের মধ্যেই অবস্থান করে এবং যারা মুসলিম জামা‘আত সমর্থিত ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছে, তাদের সঙ্গে বের হবে না, এবং তাদেরকে সাহায্যও করবে না’ (হাশিয়াতুশ শিলবী ‘আলা তাবয়ীনুল হাক্বাঈক্ব, ৩/২৯৪ পৃ.)।

ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুসলিমদের শাসকগণের মধ্যে কোন একজন শাসক, যার শাসক হওয়ার ব্যাপারে মুসলিমরা একমত। যদি কেউ বৈধ বা অবৈধ পদ্ধতিতে নিজে শাসক হওয়ার লোভে এমন ইমামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, তবে নিশ্চিতরূপে এমন বিদ্রোহ ইসলাম বহির্ভূত এবং রাসূল (ﷺ)-এর আদর্শ বিরোধী। বিদ্রোহী অবস্থায় যদি তার মৃত্যু হয়, তবে সে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু মরবে। জনগণের কারো জন্য শাসকের সাথে যুদ্ধ করা বৈধ নয় এবং জনগণের কারো জন্য তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাও জায়েয নয়। সুতরাং যে এটি করবে সে নিশ্চিতরূপে বিদ‘আতকারী। সুন্নাহ ও সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত’ (উছূলুস সুন্নাহ, পৃ. ৪৫)।  ইমাম ত্বাহাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, لا نَرَى الخُروجَ على أئِمَّتِنا وولاةِ أمورِنا، وإن جارُوا ‘আমরা বৈধ মনে করি না যে, আমাদের শাসকদের এবং আমাদের দায়িত্বে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে, যদিও তারা অন্যায় করে বা বাড়াবাড়ি করে’ (মাতনুত্ব ত্বাহাবিয়্যাহ, পৃ. ৬৮)। ইমাম ইবনে বাত্ত্বাল (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ফক্বীহগণ এই ব্যাপারে একমত যে, সীমালংঘনকারী শাসকের আনুগত্য করা ততক্ষণ পর্যন্ত জায়েয যতক্ষণ পর্যন্ত সে জুমু‘আর ছালাত, ঈদের ছালাত এবং জিহাদ প্রতিষ্ঠিত করে। এবং অধিকাংশ সময় উৎপীড়িত ও অত্যাচারিতদের সঙ্গে ইনসাফ করে। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করার চাইতে তার আনুগত্য করা উত্তম। কেননা এটি জনতাকে শান্ত করে এবং রক্তপাত বন্ধ করে’ (শারহু ছহীহিল বুখারী, ২/৩২৮ পৃ.)।

তবে তার খারাপ কাজের আনুগত্য করা যাবে না। নবী করীম (ﷺ) বলেন, لَا طَاعَةَ فِيْ مَعْصِيَةٍ، إِنَّمَا الطَّاعَةُ فِي الْمَعْرُوْفِ ‘আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্যতায় কোনরূপ আনুগত্য নেই। আনুগত্য করতে হয় কেবল ন্যায়সঙ্গত কাজে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭২৫৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪০)। অন্যত্র বলেন, لَا طَاعَةَ لِمَخْلُوْقٍ فِيْ مَعْصِيَةِ الْخَالِقِ  ‘স্রষ্টার অসন্তুষ্টির কাজে সৃষ্টির কোন আনুগত্য নেয়’ (ছহীহুল জামি‘, হা/৭৫২০; তাখরীজ মিশকাতিল মাছাবীহ, হা/৩৬২৪, হাদীছ ছহীহ)। সুতরাং কোন শাসকের শরী‘আত বিরোধী নির্দেশ মানা যাবে না। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, তার শরী‘আতসম্মত নির্দেশগুলোও অমান্য করতে হবে। বরং এক্ষেত্রে তার আনুগত্য করা অপরিহার্য (আযওয়াউল বায়ান, ইসলাম ওয়েব, ফৎওয়া নং-২৮৩৪৩২)। শায়খ ছালিহ আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘মানুষ হিসাবে একমাত্র রাসূল (ﷺ)-ই নিষ্পাপ। মুসলিম শাসকেরাও মানুষ হিসাবে ভুল করেন। নিঃসন্দেহে তাদের অনেক ভুল রয়েছে। তারা কেউ নিষ্পাপ নন। কিন্তু আমরা তাদের ভুলকে নিন্দার ক্ষেত্র মনে করে তাদের আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নিব না, তারা প্রকাশ্য কুফরী না করা পর্যন্ত আমরা তাদের আনুগত্য করব। যেমনটা নবী (ﷺ) আদেশ করেছেন’ (আক্বীদাতুত্ব ত্বাহাবী, পৃ. ৩৭৯)। আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘আমার পরে তোমরা অবশ্যই ব্যক্তিস্বার্থকে প্রাধান্য দেয়ার প্রবণতা লক্ষ‍্য করবে এবং এমন কিছু বিষয় দেখতে পাবে, যা তোমরা অপসন্দ করবে। তখনও তোমরা তাদের হক্ব পূর্ণরূপে আদায় করবে, আর তোমাদের হক্ব আল্লাহর কাছে চাইবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭০৫২; তিরমিযী, হা/২১৯০)। ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেন, ‘যে লোক নিজ আমীরের কাছ থেকে অপসন্দনীয় কিছু দেখবে সে যেন তাতে ধৈর্যধারণ করে। কেননা যে লোক সুলতানের আনুগত্য হতে এক বিঘতও বিচ্ছিন্ন হবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু’ (ছহীহ বুখারী, হা/৭০৫৩; ছহীহ মুসলিম, হা/১৮৪৯)।

শাইখ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘প্রজার উপর শাসকের অধিকার হল, তারা শাসকদেরকে উপদেশ প্রদান করবে, তাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করবে, তারা কোন ভুল-ত্রুটি করে বসলে তাদের ভুল-ত্রুটিকে সমালোচনা করার ও তাদের দোষ-ত্রুটি বর্ণনা করার সিঁড়ি হিসাবে নিবে না (হুকূকুর র‘ঈ ওয়ার রয়িয়্যাহ, পৃ. ১১)। হাফিয

ইমাম ইবনু রজব হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুসলিম নেতাদের জন্য উপদেশ প্রদানের পদ্ধতি হল তাদেরকে হক্ব (সঠিক) বিষয়ে সাহায্য করা ও তাদের আনুগত্য করা, তাদের সে হক্ব কাজের ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা প্রদান করা, সমবেদনা ও কোমলতার সাথে তাদেরকে সতর্ক করা, তাদের তাওফীক্বের জন্য দু‘আ করা এবং অন্যদেরকে তাদের কল্যাণ কামনার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা’ (জামি‘উল উলূম ওয়াল হিকাম, পৃ. ১১৩)। ইমাম শাওকানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘শাসকদের জন্য আনুগত্য করার বিষয়টি কুরআনুল কারীম দ্বারা সাব্যস্ত। আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ও তাঁর রাসূল (ﷺ)-এর আনুগত্য করার পর শাসকদের আনুগত্য করাকে ফরয করেছেন। এবিষয়ে অনেক মুতাওয়াতির হাদীছ রয়েছে যে তাদের আনুগত্য করা ও তাদের যুলুম-নির্যাতনের ক্ষেত্রে ধৈর্যধারণ করা ওয়াজিব। কিছু হাদীছে তাদের আনুগত্য করার বিষয়ে নির্দেশ রয়েছে (রাফ‘উল আসাত্বিন ফী হুকমিল ইত্তিছাল, পৃ. ৮১-৮২)।


প্রশ্নকারী : যিয়াউর রহমান, পাবনা।





প্রশ্ন (২৮) : ওয়ায মাহফিলের হ্যান্ড বিল তৈরি করার সময় ‘বিসমিল্লাহি’ ও ‘আল্লাহু আকবার’ লেখা কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২) নির্দিষ্ট করে শুধু মহিলাদের জন্য মসজিদ তৈরি করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৯) : কুরআন যেমন আল্লাহর কালাম অনুরূপ হাদীছের ক্ষেত্রে আমাদের আক্বীদা কেমন হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪০) : কেউ মিথ্যা কথা বললে, ফেরেশতারা মিথ্যার দুর্গন্ধে ১ মাইল দূরে চলে যায়। এই বর্ণনাটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : ঈদের ছালাতের খুত্ববাহ শেষে দানকৃত অর্থ দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমামকে দেয়া কতটুকু শরী‘আত সম্মত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১) : ইয়া’জূজ-মা’জূজ মানুষ জাতি। তারা কি সবাই পথভ্রষ্ট? ইয়া’জূজ-মা’জূজ কি কোন নবীর অনুসরণ করতে পেরেছে? তাদেরকে কেন সুযোগ দেয়া হল না? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৬) : একজন মহিলা রামাযানের কিছু ছিয়াম রাখতে পারেনি। কিন্তু কয়টা ছিয়াম ছাড়া পড়েছে সে সংখ্যা ভুলে গেছেন। এখন সে কী করবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩০) : ইহরাম বাঁধার পূর্বে কোন মহিলা ঋতুবতী হলে তার বিধান কি হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) : অনেক সময় বাবা-মা ভুল বুঝে সন্তানকে বদ দু‘আ দেয়। অথচ সন্তান তেমন কোন অপরাধ করেনি। এতে কি সন্তানের কোন ক্ষতি হবে? আর যারা কথায় কথায় বদ দু‘আ কিংবা অভিশাপ দেয় তাদের বিধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৬) : কোমরে তাবীয ঝুলানো কি শিরক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : তাবলীগ জামাতের লোকেরা বলে, জীবনে অন্তত তিন চিল্লা দিতে হবে। এ সময় আহাল-পরিবার ছেড়ে যেতে হয়। এভাবে চিল্লা দেয়া কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১) : ফিতরার পরিমাণ হিসাবে কেউ বলছেন এক ছা‘ সমান আড়াই কেজি, কেউ পৌনে তিন কেজি, কেউ তিন কেজি বলছেন। আসলে এ বিষয়ে সঠিক সমাধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ