সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ০৪:৪২ অপরাহ্ন
উত্তর : আল্লাহ তা‘আলা কোন ব্যক্তির উপরে দলীল বা প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত কিংবা তার কাছে দ্বীনের দাওয়াত না পৌঁছানো পর্যন্ত তাকে আযাব দিবেন না। এটিই আল্লাহ তা‘আলার হিকমাহ বা মহাপ্রজ্ঞা। যেমন তিনি বলেন, ‘আমি সুসংবাদবাহী ও সতর্ককারী রাসূল প্রেরণ করেছি, যাতে রাসূল আসার পর আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে। আর আল্লাহ প্রবল পরাক্রমশালী, মহাজ্ঞানী’ (সূরা আন-নিসা : ১৬৫)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আর আমি রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দিই না’ (সূরা বানী ইসরাঈল : ১৫)। ইয়া’জূজ-মা’জূজ জাতির ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি বা হবে না। তাদের কাছেও অবশ্যই কোন নবী প্রেরিত হয়েছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক জাতির নিকট নবী পাঠিয়েছেন। সমস্যা হল সব নবীর নাম জানা যায় না (আযওয়াউল বায়ান, ৩/৬৫ পৃ.)।

হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মোটকথা ইয়া’জূজ-মা’জূজরা তুর্কীদের পূর্ব পুরুষ ইয়াফিসের বংশধর। আর ইয়াফিস হল নূহ (আলাইহিস সালাম)-এর সন্তান। কাজেই তারা আদম-হাওয়ারই সন্তান (ফাৎহুল বারী, ১৩/১০৭ পৃ.)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তারপর সে (যুলকারনাইন) আরেক পথ অবলম্বন করল। চলতে চলতে সে যখন দুই পর্বত-প্রাচীরের মধ্যবর্তী স্থলে পৌঁছল, তখন সেখানে সে এমন এক সম্প্রদায়কে পেল, যারা তার কথা তেমন বুঝতে পারছিল না। তারা বলল, ‘হে যুলকারনাইন! নিশ্চয় ইয়া’জূজ ও মা’জূজ পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে, আমরা কি আপনাকে রাজস্ব বা কর দেব এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মাঝে এক প্রাচীর গড়ে দেবেন?’ সে বলল, ‘আমার প্রতিপালক আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তাই উৎকৃষ্ট, সুতরাং তোমরা আমাকে শ্রম দ্বারা সাহায্য কর, আমি তোমাদের ও তাদের মাঝে এক সুদৃঢ় প্রাচীর গড়ে দেব। তোমরা আমার কাছে লোহার পাতসমূহ আনয়ন কর, ‘অবশেষে মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থান পূর্ণ হয়ে যখন লৌহস্তূপ দুই পর্বতের সমান হল তখন সে বলল, ‘তোমরা হাঁপরে দম দিতে থাকো’। অতঃপর যখন সেটা আগুনে পরিণত হল, তখন সে বলল, ‘তোমরা আমার কাছে গলিত তামা নিয়ে আস, আমি তা এর উপর ঢেলে দিই। এরপর তারা (ইয়া’জূজ ও মা’জূজ) প্রাচীরের উপর দিয়ে অতিক্রম করতেও পারল না এবং নিচ দিয়ে তা ভেদ করতেও পারল না। সে বলল, ‘এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, অতঃপর যখন আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রতি এসে পড়বে তখন তিনি ওটাকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেবেন। আর আমার প্রতিপালকের প্রতিশ্রুতি সত্য’ (সূরা আল-কাহ্ফ : ৯২-৯৮)। এই আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ যুলকারনাইনকে ইয়া’জূজ-মা’জূজের দলকে প্রতিহত করার জন্য বিশাল প্রাচীর নির্মাণের ক্ষমতা দিয়েছিলেন। যাতে তারা মানুষের মাঝে এবং পৃথিবীতে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে না পারে। যুলকারনাইনের পরিচয় প্রদানে শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,

هو ملك صالح كان على عهد الخليل إبراهيم عليه الصلاة والسلام ، ويقال إنه طاف معه بالبيت ، فالله أعلم 

‘তিনি ইবরাহীম খলীলুল্লাহ (আলাইহিস সালাম)-এর যুগের একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ শাসক ছিলেন। বলা হয়ে থাকে যে, তিনি ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম)-এর সঙ্গে বাইতুল্লাহর ত্বাওয়াফ করেছেন, এ ব্যাপারে আল্লাহই অধিক জ্ঞাত’ (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ র্দাব ইবনু উছাইমীন, ৪/৬০ পৃ.)। মহান আল্লাহ বলেন, وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنۡ ذِی الۡقَرۡنَیۡنِ ؕ قُلۡ سَاَتۡلُوۡا  عَلَیۡکُمۡ  مِّنۡہُ  ذِکۡرًا  ‘আর তারা আপনাকে যুল-কারনাইন সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে। বলুন, অচিরেই আমি তোমাদের কাছে তাঁর বিষয় বর্ণনা করব’ (সূরা আল-কাহ্ফ : ৮৩)।  আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেছেন, ‘যুলকারনাইন নবী বা ফিরিশতা ছিলেন না, তিনি একজন নেক বান্দা ছিলেন। তিনি আল্লাহকে ভালোবেসে ছিলেন, আল্লাহও তাঁকে ভালোবেসে ছিলেন। আল্লাহর হকের ব্যাপারে অতিশয় সাবধানী ছিলেন, আল্লাহও তার কল্যাণ চেয়েছেন। তাঁকে তাঁর জাতির কাছে প্রেরণ করা হয়েছিল। তারা তাঁর কপালে মারতে মারতে তাঁকে হত্যা করল। আল্লাহ তাঁকে আবার জীবিত করলেন, এজন্য তাঁর নাম হল যুলকারনাইন’ (ফাৎহুল বারী, ৬/৩৮৩ পৃ.)। হতে পারে আল্লাহ তা‘আলা যুলকারনাইনকেই প্রেরণ করেছিলেন!

ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা যুলকারনাইনের সততার প্রসংশা করেছেন। তিনি একজন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ ছিলেন এবং পাশ্চাত্য ও প্রাচ্য দেশসমূহ জয় করেছিলেন। এসব দেশে তিনি সুবিচার ও ইনসাফের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাকে লক্ষ্য অর্জনের জন্য সর্বপ্রকার সাজ-সরঞ্জাম দান করা হয়েছিল। তিনি দিগি¦বজয়ে বের হয়ে পৃথিবীর তিন প্রান্তে পৌঁছেছিলেন- পাশ্চাত্যের শেষ প্রান্তে, প্রাচ্যের শেষ প্রান্তে এবং উত্তরে উভয় পর্বতমালার পাদদেশ পর্যন্ত। এখানেই তিনি দুই পর্বতের মধ্যবতী গিরিপথকে একটি সুবিশাল লৌহ প্রাচীর দ্বারা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। ফলে ইয়া’জুজ-মা’জূজের লুটতরাজ থেকে এলাকার জনগণ নিরাপদ হয়ে যায় (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ২/১২২-১২৫ পৃ.)। মুজাহিদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘চারজন ব্যক্তি গোটা বিশ্বের পাশ্চাত্য থেকে প্রাচ্যদেশ পর্যন্ত রাজত্ব করেছিলেন। দু’জন মুমিন আর দু’জন কাফির। মুমিন দু’জন হলেন, সুলাইমান ইবন দাঊদ (আলাইহিস সালাম), যুলকারনাইন এবং কাফির দু’জন হল নমরূদ এবং বুখতুনাছ্র (তাফসীর আত্ব-ত্বাবারী, ৫/৪৩৩ পৃ.)।


প্রশ্নকারী : রাশেদ, ঢাকা।





প্রশ্ন (২৪) : ইমামের কুরআন তেলওয়াত শুদ্ধ না হলে, মুক্তাদির ছালাত হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৫) : মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানী করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৭) : নাকের অপারেশন করলে ওযূ এবং ছালাত কিভাবে আদায় করতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : রামাযান মাসে এক শ্রেণীর যুবককে দেখা যায় যে, তারা নেকীর আশায় সাহারীর খাওয়ার পূর্বে ঢোল পিটিয়ে রাস্তায় ও ওলি-গলিতে মানুষকে সাহারী খাওয়ার জন্য জাগায়। এটা কি শরী‘আত সম্মত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৯) : ইসলামের দৃষ্টিতে বজ্রপাতের ব্যাখ্যা কী এবং এ সময় আমাদের করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : জনৈক বক্তা নিম্নের হাদীছটি পেশ করেন, তোমরা বরকতপূর্ণ জয়তুন গাছের তেল ব্যবহার কর এবং ঔষধ হিসাবে ব্যবহার কর।‌ কারণ তা অর্শ রোগের আরোগ্য দানকারী (ত্বাবরাণী হা/১৪১৯৩)। হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : সূরা আল-বাক্বারার ২৫৬ নম্বর আয়াতে ত্বাগূত অস্বীকার করার কথা বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ত্বাগূত অর্থ কি? এবং ত্বাগূতের ফায়ছালা নেয়ার পরিণাম কী হতে পারে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৪) : আর্থিকভাবে স্বচ্ছল এমন ইমাম তারাবীহ পড়িয়ে হাদিয়া নিতে পারবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২০) : নবী (ﷺ) জনৈক ছাহাবীর দাফন শেষে ফিরে আসছিলেন। তখন উক্ত ‘মাইয়েতের স্ত্রী’ তাঁকে খাওয়ার দাওয়াত দিলেন এবং রাসূল (ﷺ) দাওয়াত গ্রহণপূর্বক উক্ত মহিলার বাড়িতে গিয়েছিলেন। অতঃপর খাবার উপস্থিত করা হলে তিনি এবং উপস্থিত অন্যান্য লোকজন খাবার গ্রহণ করলেন। এর আলোকেই মাইয়েতকে কেন্দ্র করে খাবারের আয়োজন করা হয়। তাই উক্ত বর্ণনাটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩০) : দাইয়ূছের পরিণতি কেমন হতে পারে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : একই আমল একাধিক নিয়তে করা যাবে কি? যেমন আইয়ামে বীযের ছিয়ামের তারিখে মাঝেমধ্যে সোম বা বৃহস্পতিবার পড়ে, এছাড়াও অন্যান্য অনেক আমল রয়েছে, যা আমল দেখতে একই কিন্তু তার ফযীলাত ভিন্ন ভিন্ন। তাহলে  সেই আমল একাধিক ফযীলত লাভের নিয়তে করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৮) : ঋণ দেয়ার সঠিক পদ্ধতি কী? ঋণ দেয়ার সময় যদি কেউ কাউকে সাক্ষী না রাখে, তাহলে কি সে গুনাহগার হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ