উত্তর : মাথার চুল সমান ভাবে কাটা উচিত। এতে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা যাবে না। নবী (ﷺ) বলেন, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত’ (আবূ দাঊদ, হা/৪০৩৩; ছহীহুল জামে‘, হা/ ৬১৪৯)। সাধারণত অন্য ধর্মের লোকেরাই কিছু চুল ছোট আর কিছু বড় করে রাখে যেটাকে হাদীছের ভাষায় কাযা (قزع) বলা হয়। ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ‘কাযা’ নিষেধ করেছেন। রাবী (উমার ইবনু নাফি) বলেন, আমি নাফি (রাহিমাহুল্লাহ)-কে জিজ্ঞাসা করলাম, কাযা কী? তিনি বললেন, শিশুর মাথার (চুল) কতকাংশ মুড়ানো এবং কতকাংশ রেখে দেয়া’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২১২০)।
ইবনু উমর (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ ধ-কে কাযা থেকে নিষেধ করতে শুনেছি। রাবী উবাইদুল্লাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কাযা’ কী? তখন আব্দুল্লাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) আমাদের ইশারা দিয়ে দেখিয়ে বললেন, ‘শিশুদের যখন চুল কামানো হয় তখন এই, এই জায়গায় চুল রেখে দেয়া। এ কথা বলার সময় উবাইদুল্লাহ তার কপাল ও মাথার দু’পাশ দেখালেন। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হল- বালক ও বালিকার কি একই হুকুম? তিনি বললেন, আমি জানি না। এভাবে তিনি বালকের কথা বলেছেন। উবাইদুল্লাহ বলেন, আমি এ কথা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি বললেন, পুরুষ শিশুর মাথার সামনের ও পিছনের দিকের চুল কামানো দোষনীয় নয়। আর (অন্য এক ব্যাখ্যা মতে) ‘কাযা’ বলা হয়, কপালের উপরে কিছু চুল রেখে বাকী মাথার কোথাও চুল না রাখা। অনুরূপভাবে মাথার চুল একপাশ থেকে অথবা অপর পাশ থেকে কাটা’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫৪৯৬)।
কেউ যদি একান্তই লম্বা চুল রাখতে চাই তাহলে অবশ্যই হাদীছ অনুযায়ী রাখতে হবে। আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: كُنْتُ أَغْتَسِلُ أَنَا وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ وَكَانَ لَهُ شَعْرٌ فَوْقَ الْجُمَّةِ وَدُونَ الوفرة
‘আমি এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একই পাত্র হতে গোসল করতাম। তখন রাসূল (ﷺ)-এর মাথার চুল জুম্মার উপরে এবং ওয়াফরার নিচে ছিল’ (তিরমিযী, হা/১৭৫৫; ইবনু মাজাহ, হা/৬০৪)। জুম্মাহ হলো চুলের এমন পরিমাণ যা মাথা থেকে কাঁধ পর্যন্ত নেমে যায়। আর ওয়াফরাহ হলো যা কানের লতি পর্যন্ত হয়। জুম্মাহ ও ওয়াফরাহ এর মাঝামাঝি চুলকে আরবীতে লিম্মাহ বলা হয়। তাই কোন কোন বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) লিম্মাহওয়ালা চুলের অধিকারী ছিলেন বলে বলা হয়েছে। উভয় বর্ণনার উদ্দেশ্য একই। তবে রসূলুল্লাহ (ﷺ) বড় জুম্মাহ চুলের অধিকারী ছিলেন বলেও বর্ণনায় পাওয়া যায়।
বিভিন্ন প্রকার চুলের বিবরণের মাঝে সামঞ্জস্য করতে মুহাদ্দিছীনে কিরাম বলেন, এসব হাদীছ পরস্পর বিরোধী নয়। কেননা চুলের বিভিন্ন অবস্থা হতে পারে। এক সময় কাটতে দেরী হয়েছে। তাই চুল জুম্মায় পরিণত হয়েছে। এ অবস্থা যিনি দেখেছেন তিনি তা বর্ণনা করেছেন। আরেক সময় চুল কেটেছেন তখন তা ছোট হয়েছে। কাটার নিকটবর্তী সময়ে যিনি দেখেছেন তিনি এ অবস্থার বর্ণনা দিয়েছেন। এভাবেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চুলের বিভিন্ন বর্ণনা এসেছে। মোটকথা, রাসূল (ﷺ)-এর চুল লম্বা ছিল। আমরা যাকে বাবরি বলে থাকি। তবে কোন সময় তা অধিক লম্বা হয়ে কাঁধ পর্যন্ত চলে যেত, আবার কোন সময় কানের লতি পর্যন্ত থাকত এবং কোন কোন সময় এর মাঝামাঝি থাকত (মিরক্বাতুল মাফাতীহ হা/৪৪৬০-এর হাদীছে আলোচনা দ্র.)।
প্রশ্নকারী : রাসেল বিন ইসমাইল, সরিষাবাড়ি, জামালপুর।