উত্তর : এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো নিঃসন্দেহে সূদী কারবারের সঙ্গে যুক্ত। তারা ১২-২০% হারে সূদের উপর ঋণ দিয়ে থাকে। এটা হারাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা বহুগুণ বৃদ্ধি করে চক্রবৃদ্ধি হারে সূদ খাবে না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও’ (সূরা আলি ইমরান: ১৩০)। নবী (ﷺ) সূদখোর, সূদদাতা, তার সাক্ষীদাতা ও তার লেখককে অভিসাম্পত করেছেন এবং বলেছেন, ‘ওরা সবাই সমান’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৭-১৫৯৮)। সুতরাং সূদী কারবারের সঙ্গে সংযুক্ত ফ্যামিলির উচিত দ্রুত তওবাহ করা এবং বেশি-বেশি ইস্তিগফার, আমলে ছালিহ, ছালাত আদায় ও ছাদাক্বাহ ইত্যাদি করা।
জানা উচিত যে, হারাম সম্পদ বা মাল দুই প্রকারের। যথা:
১- মূল সম্পদ বা মালটাই হারাম। যেমন চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই ও জোরপূর্বক দখল করা জিনিস বা টাকা-পয়সা। কারোর কাছ থেকে এই প্রকার জিনিসের উপঢৌকন গ্রহণ করা জায়েয নয়। তাই যদি কেউ সরাসরি ঐ মাল বা টাকা দ্বারা উপহার কিনে দেয় তাহলে তা গ্রহণ করা এবং ভক্ষণ করা জায়েয হবে না। অনুরূপভাবে মদ, নেশাদার বস্তু, হারাম প্রাণীর মাংস ইত্যাদিগুলো মূলতই হারাম। তাই এগুলো উপভোগ করা, উপহার দেয়া ও নেয়া সবই হারাম।
২- মূল সম্পদ বা মালটা হালাল কিন্তু তার উপার্জনের পদ্ধতিটি হারাম। অথবা যে সম্পদে হালাল ও হারামের সংমিশ্রণ রয়েছে। যেমন সূদী ব্যাংক বা বীমা কোম্পানীতে চাকুরী করে প্রাপ্ত বেতন, অথবা অন্য কোন নিষিদ্ধ উপায়ে উপার্জিত টাকা, যেমন ঘুষ, প্রতারণা, নাচ, গান এবং সিনেমা জগতের সঙ্গে সম্পৃক্ত অন্য কোন পেশার পারিশ্রমিক ইত্যাদি। হারাম উপায়ে উপার্জিত অর্থ শুধু উপার্জনকারীর জন্যই হারাম। পক্ষান্তরে যারা তার কাছ থেকে বৈধ পন্থায় উক্ত অর্থ গ্রহণ করবে, তাদের জন্য তা দোষনীয় নয়। যদিও তা গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকাই অধিক উত্তম। এক্ষেত্রে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ হল- তার দ্বারা উপকৃত হওয়া এবং খাওয়া থেকে বেঁচে থাকা। বিশেষ করে তার বিরত থাকাটা যদি মালিকের বিবেককে জাগ্রত করে এবং তাকে তা ছাড়তে সাহায্য করে (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-১২৬৪৮৬)।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘তবে উক্ত ব্যক্তির সংশোধন বা তাকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে প্রতিবাদস্বরূপ যদি কেউ সাময়িকভাবে তার দাওয়াত গ্রহণ না করে, তবে সেটাই উত্তম হবে’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৮/২০৬ পৃ.)।
শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যা উপার্জন সূত্রে হারাম তা শুধু উপার্জনকারীর জন্যই হারাম। (যেমন: সূদ) সূদী কারবারকারী ব্যক্তি যখন মারা যায়, তখন উক্ত সম্পত্তি তার ওয়ারিশদের জন্য হালাল। কিন্তু যার মূলই হারাম, যেমন মদ, তা মালিকের জন্যও হারাম এবং উত্তরাধিকারীদের জন্যও হারাম। অনুরূপভাবে চুরি বা ডাকাতির মাল, তা ওয়ারিশদের জন্যও হালাল নয়। মূল মালিকের সন্ধান পাওয়া গেলে তা তার নিকট ফিরিয়ে দিতে হবে, আর সন্ধান পাওয়া না গেলে তার নামে ছাদাক্বাহ করে দিতে হবে’ (লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, ১/৩০৪ ও ১৩/১৮৮; ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, ৩/৪৫২; আল-ক্বাউলুল মুফীদ আলা কিতাবিত তাওহীদ, ৩/১১২ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : ইফতিখার আহমাদ, কোটচাঁদপুর, ঝিনাইদহ।