শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:২৭ পূর্বাহ্ন
প্রশ্ন (১) : ফ্রিল্যান্সিং করে জীবিকা নির্বাহ করা যাবে কি?
উত্তর : ফ্রিল্যান্সিং ও আউটসোর্সিং-এর কাজ করার বিধান এক কথায় প্রকাশ করা একটু জটিল। কেননা এর মধ্যে হালাল ও হারাম দু’টিই বিদ্বমান। অর্থাৎ কাজের উপর নির্ভর করে ফ্রিল্যান্সিং-এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা কখনো বৈধ আবার কখনো অবৈধ। যেমন,

হালাল দৃষ্টিভঙ্গি : অনলাইনে অনেক ফ্রিল্যান্সিং কোম্পানী রয়েছে যেমন ওডেক্স, এলান্স, ল্যান্সটেক, ফ্রিল্যান্সার ইত্যাদি। এই কোম্পানীগুলোতে কোনরূপ ফী ছাড়াই রেজিস্ট্রেশন করে স্বীয় যোগ্যতা অনুযায়ী ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স, ডাটাএন্ট্রি ইত্যাদি কাজ পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হয়। বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন কোম্পানী পসন্দ অনুযায়ী অনলাইনে এসব কোম্পানীর মাধ্যমে কাজ দেয় এবং নির্ধারিত হারে পারিশ্রমিক প্রদান করে। এর মধ্যে কোন সূদী বা হারাম লেনদেনের প্রসঙ্গ নেই। বরং স্বীয় কর্মদক্ষতা এবং পরিশ্রমের বিনিময়ে এখানে উপার্জন করতে হয়। কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে উক্ত ফ্রিল্যান্সিং করা এবং তার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা বৈধ হতে পারে। যথা : (১) ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে কাজটি হালাল হওয়া (হারাম না হওয়া)। (২) দেশের প্রচলিত আইন পরিপন্থী না হওয়া। (৩) মানুষ, সমাজ ও দেশের জন্য ক্ষতিকারক না হওয়া। (৪) কারো অধিকার খর্ব না করা (যেমন কপিরাইট লঙ্ঘন করা ইত্যাদি)। (৫) আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সূদ, ঘুষ বা দুর্নীতির আশ্রয় না নেয়া। (৬) মিথ্যা, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ ও প্রতারণার আশ্রয় না নেয়া ইত্যাদি। ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং কাজের কয়েকটি উদাহরণ হল, (১) গ্রাফিক্স ডিজাইন : গ্রাফিক্স ডিজাইনে যদি কোন অশ্লীলতা না থাকে এবং পুরুষ-মহিলা বা অন্য কোন প্রাণীর ছবি যুক্ত করা না হয় বা কপিরাইট কৃত কোন ছবি ব্যবহার না করা হয়, তাহলে তা হালাল, অন্যথা হারাম। (২) ডাটা এন্ট্রি বা (লেখা) : এতে যদি শরী‘আত বিরোধী কিছু না থাকে, তাহলে কোন আপত্তি নেই, অন্যথা হারাম। যেমন কোন লেখকের কপিরাইট কৃত বই থেকে নকল করা, নাস্তিকতা ও ইসলাম বিরোধী প্রপাগান্ডামূলক লেখা, অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা ও নোংরা সেক্সুয়াল বিষয়ে লেখা ইত্যাদি। এগুলো লিখে অনলাইনে টাকা উপার্জন করা হারাম। (৩) অনলাইন ভিত্তিক সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভ/বিক্রয় প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করা। পণ্যটি যদি হালাল হয় তাহলে তা হালাল কিন্তু পণ্যটি হারাম হলে তা অবশ্যই হারাম। যেমন মদ, নেশাদ্রব্য, মানব দেহের জন্য ক্ষতিকারক বস্তু, খাঁটি পণ্যের লেভেল লাগানো নকল পণ্য, সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ পণ্য ইত্যাদি। এগুলো অনলাইনে বিক্রয় করে অর্থ উপার্জন করা হালাল নয়।

হারাম দৃষ্টিভঙ্গি : ‘ডোলেন্সার’ মত সদ্য গজিয়ে উঠা ফ্রিল্যান্সার প্রতিষ্ঠান, যাদের কার্যক্রম অন্যদের মত নয়। বরং ফ্রিল্যান্সিং-এর সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে এরা মূলত এমএলএম ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। নানা আকর্ষণীয় প্যাকেজ দেখিয়ে তারা সদস্য ভর্তি করে এবং প্রায় বিনা পরিশ্রমে মোটা অংক লাভের প্রতিশ্রুতি দেয়। এরা অসাধু এমএলএম ব্যবসার সাথে জড়িত বলে এদের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়া মোটেই বৈধ হবে না। উল্লেখ্য যে, ডেসটিনি, নিউওয়ে, এ্যাপটেক, ইউনিপেটু ইত্যাদি প্রতারক কোম্পানীসমূহের মত ডোলেন্সারও দেশের বেকার তরুণদের কাজে লাগিয়ে মাউসের সামান্য ক্লিকে আকাশ-কুসুম লাভের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। মূলত তারা মানুষের সস্তা আবেগকে কাজে লাগিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার নতুন ফাঁদ পেতেছে। তাই এদের থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।

শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘হারাম ও অশ্লীল বিজ্ঞাপন প্রচার করা এবং তা প্রচার করে অর্থ উপার্জন করা উভয়ই হারাম। কেননা তা অন্যায়, অশ্লীলতা, বেহায়াপনা ও পাপাচারে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَ تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡبِرِّ وَ التَّقۡوٰی، وَ لَا تَعَاوَنُوۡا عَلَی الۡاِثۡمِ وَ الۡعُدۡوَانِ، وَ اتَّقُوا اللّٰہَ ؕ اِنَّ اللّٰہَ  شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ

‘তোমরা সৎকর্ম ও তাক্বওয়ায় পরস্পরকে সহযোগিতা কর এবং মন্দকর্ম ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি প্রদানে অত্যধিক কঠোর’ (সূরা আল-মায়িদাহ : ২)। উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু কাছীর (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, এখানে আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিদেরকে ভালো কাজে সহযোগিতা করতে আদেশ করেছেন এবং অন্যায়, অসৎ ও হারাম কাজে সাহায্য, সহযোগিতা করতে নিষেধ করেছেন (তাফসীর ইবনু কাছীর, ২/১২ পৃ.; তাফসীরে কুরতুবী, ৬/৪৬-৪৭ পৃ.)।

দ্বিতীয়তঃ ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের তলব অনুযায়ী কাজ করার নাম হচ্ছে, ফ্রিল্যান্সিং বা আউটসোর্সিং। এ জগতে হাজার হাজার কাজ আছে। সেগুলো থেকে যদি আপনি কিছু শর্ত সাপেক্ষে হালাল কর্মের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করেন তাহলে নিঃসন্দেহে তা হালাল। যেমন রাসূল (ﷺ) বলেন,

مَا أكَلَ أَحَدٌ طَعَامًا قَطُّ خَيْرًا مِنْ أنْ يَأكُلَ مِنْ عَمَلِ يَدِه وَإنَّ نَبيَّ الله دَاوُدَ عَلَيْهِ السَّلَامُ كَانَ يَأكُلُ مِنْ عَمَلِ يَدِهِ

‘নিজের হাতের উপার্জন থেকে উত্তম খাবার কেউ কখনো খায়নি। আল্লাহর নবী দাঊদ (আলাইহিস সালাম) নিজ হাতের উপার্জন থেকে খেতেন’ (ছহীহ বুখারী, হা/২০৭২; ইবনু মাজাহ, ২১৩৮; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৬৭২৯, ১৫৭৩৯)। তবে সর্বদা হালাল-হারামের বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে এবং হারাম ও সন্দেহপূর্ণ বিষয় থেকে দূরে থাতে হবে। কেননা ইসলামী শরী‘আতের স্থিরীকৃত নীতিমালা সমূহের মধ্যে রয়েছে, ‘যখন কোন বিষয়ে হালাল ও হারামের মাসআলা একত্রিত হয়, তখন হারামের মাসআলা প্রাধান্য পায় অর্থাৎ সেটাকে হারাম বলে গণ্য করতে হবে। যেমন নবী (ﷺ) বলেন,

إِنَّ الْحَلَالَ بَيِّنٌ وَإِنَّ الْحَرَامَ بَيِّنٌ وَبَيْنَهُمَا مُشْتَبِهَاتٌ لَا يَعْلَمُهُنَّ كَثِيْرٌ مِنَ النَّاسِ فَمَنِ اتَّقَى الشُّبُهَاتِ اسْتَبْرَأَ لِدِيْنِهِ وَعِرْضِهِ وَمَنْ وَقَعَ فِي الشُّبُهَاتِ وَقَعَ فِي الْحَرَامِ 

‘নিশ্চয় হালাল স্পষ্ট এবং হারামও স্পষ্ট, আর উভয়ের মাঝে রয়েছে সন্দেহজনক বিষয়, অনেক লোকই সেগুলো জানে না। যে ব্যক্তি এসব সন্দেহজনক বিষয় থেকে দূরে থাকে সে তার দ্বীন ও মর্যাদাকে নিরাপদে রাখে, আর যে লোক সন্দেহজনক বিষয়ে পতিত হবে সে হারামের মধ্যে লিপ্ত হয়ে পড়বে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৫২; ছহীহ মুসলিম, হা/৩৯৮৬)। তিনি আরো বলেন,

دَعْ مَا يَرِيبُكَ إِلَى مَا لاَ يَرِيبُكَ فَإِنَّ الصِّدْقَ طُمَأْنِينَةٌ وَإِنَّ الْكَذِبَ رِيبَةٌ ‏

‘যে বিষয়ে তোমার সন্দেহ হয়, তা ছেড়ে দিয়ে যাতে সন্দেহের সম্ভাবনা নেই তা গ্রহণ কর। যেহেতু সত্য হল শান্তি ও স্বস্তি এবং মিথ্যা হল দ্বিধা-সন্দেহ’ (তিরমিযী, হা/২৫১৮, হাদীছ ছহীহ)। অতএব প্রত্যেক মুসলিমের উচিত সন্দেহমুক্ত, বৈধ ও উৎকৃষ্ট পন্থায় অর্থোপার্জন করার প্রচেষ্টা করা এবং পবিত্র ও পরিচ্ছন্ন উপার্জনের পথ অন্বেষণ করা (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২৬/২৭৪-২৭৫ ও ১৪/৪২০  পৃ.)।

প্রশ্নকারী : জহিরুল ইসলাম, দোহার, ঢাকা।




প্রশ্ন (৩৭) : সুতায় দু‘আ পড়ে অনেকে গিট দেয় এবং গলায় দেয়। এটা কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২২) : ঝাড়-ফুঁক করা কি শরী‘আতে জায়েয? কুরআনের আয়াত লিখে গলায় ঝুলিয়ে রাখা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) : পিতা-মাতার দিকে রহমতের নযরে তাকালে একটি কবুল হজ্জের ছওয়াব পাওয়া যায়। হাদীছটি কি ছহীহ? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭)  : জনৈক ব্যক্তি বলেছেন, যারা চার মাযহাব কিংবা চার তরীক্বা মানবে না তারা কাফের। উক্ত দাবী কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪০) : তিলাওয়াতে সিজদাহর নিয়ম কী এবং এ জন্য কোন নির্দিষ্ট কোন দু‘আ আছে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৮) : সুদী ব্যাংকে চাকুরী করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৮) : আমরা সাধারণ জনগণ হয়ে কিভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করব? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৫) : অনেকে মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহাব (রাহিমাহুল্লাহ)-কে শয়তানের শিং বলে অভিহিত করে থাকে। এটা কি ঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৫): আমি একজন প্রবাসী। প্রবাসেই  রামাযানের ছিয়াম রাখি। প্রশ্ন হল- আমাকে কি আমার ফিতরা প্রবাসেই আদায় করতে হবে, না-কি দেশে আমার পরিবারকে আমার ফিতরা আদায় করার দায়িত্ব দিতে পারব? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩২) : বিবাহিত পুরুষ কুমারী মেয়ের সাথে যেনা করলে ইসলামী শরী‘আতে তার শাস্তি কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩) : জনৈক বক্তা বলেন, বায়‘আত না করলে জাহেলিয়াতের মৃত্যু হবে। তাই ইসলামী দলের নেতা বা আমীরের হাতে বায়‘আত না করলে জান্নাত পাওয়া যাবে না। আরে হাদীছে এসেছে, যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল এমন অবস্থায় যে, তার গর্দানে বায়‘আত নেই, সে জাহেলী অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল (মুসলিম হা/১৮৫১)। উক্ত হাদীছের ব্যাখ্যা কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৮) : কখন ফজর ছালাত আদায় করতে হবে এবং এর সঠিক সময় কোন্টি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ