শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৯:১৮ পূর্বাহ্ন
উত্তর : প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিকে ইসলামী পরিভাষায় বাইয়ে সালাম বা সালাফ বলা হয়। সালাম শব্দের অর্থ অগ্রিম কেনা-বেচা। ‘বাইয়ে সালাম বা সালাফ’ ক্রয়-বিক্রয়ের এমন একটি পদ্ধতি, যার মাধ্যমে বিক্রেতা পণ্যদ্রব্যের অগ্রিম মূল্য নিয়ে এই দায়িত্ব গ্রহণ করে যে, সে ভবিষ্যতের কোন একটি নির্ধারিত তারিখে নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যের পণ্যদ্রব্য ক্রেতাকে সরবরাহ করবে। এখানে মূল্য নগদ কিন্তু পণ্য পরিশোধে বিলম্বিত হয় (ফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব, ৯/১৪৯ পৃ.)। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, واتفق العلماء على مشروعيته ‘আলেমগণের সর্বসম্মতিক্রমে বাইয়ে সালাম জায়েয’ (ফাৎহুল বারী, ৭/৭৬ পৃ.)। আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ﷺ) যখন মদীনায় আসেন তখন মদীনাবাসী ফলে বা খেজুরে এক, দুই ও তিন বছরের মেয়াদে সালাম (অর্থাৎ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়) করতেন। রাসূল (ﷺ) বললেন, কোন ব্যক্তি সালাম (অর্থাৎ অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয়) করলে, সে যেন নির্ধারিত পরিমাপে এবং নির্দিষ্ট ওজনে এবং নির্দিষ্ট মেয়াদে অগ্রিম ক্রয়-বিক্রয় করে’ (ছহীহ বুখারী, হা/২২৩৯,; ছহীহ মুসলিম, হা/১৬০৪)।

উক্ত হাদীছে রাসূল (ﷺ) বিশেষ কয়েকটি শর্তে বাইয়ে সালাম চুক্তির অনুমতি দিয়েছেন। যেমন (১) বাইয়ে সালাম জায়েয হওয়ার জন্য যরূরী হল, ক্রেতা চুক্তির সময়ই বিক্রেতাকে সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করবে। কারণ চুক্তির সময় ক্রেতা যদি সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ না করে, তাহলে তা ঋণের বিনিময়ে ঋণ বিক্রির সাদৃশ্য হয়ে যাবে। যা করতে রাসূল (ﷺ) নিষেধ করেছেন (আল-মুগনী, ৪/৩৭; আশ-শারহুল মুমতি‘, ৮/৪৪৪; কুয়েতি ফিকাহ বিশ্বকোষ, ৯/১৭৬ পৃ.)। (২) বাইয়ে সালাম শুধু সেই সব পণ্য দ্রব্যে জায়েয হবে, যে সব পণ্য দ্রব্যের কোয়ালিটি বা গুণগত মান, পরিমাণ, পরিমাপ ও সংখ্যা পূর্বেই পরিপূর্ণরূপে নির্ধারণ করা সম্ভব। (৩) যে পণ্য দ্রব্যে সালাম করার ইচ্ছা পোষণ করবে, তার ধরন এবং গুণগত মান সুস্পষ্টভাবে নির্দিষ্ট করে নেয়াও অপিরহার্য। যাতে সেই পণ্যদ্রব্যে এমন কোন অস্পষ্টতা বিদ্যমান না থাকে যা পরবর্তীতে কলহ-কোন্দলের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এ প্রসঙ্গে সম্ভাব্য সকল বিষয় বিশদভাবে উল্লেখ থাকতে হবে। (৪) কোন রকম অস্পষ্টতা ব্যতীত বিক্রিতব্য পণ্য দ্রব্যের পরিমাণ, পরিমাপ ও সংখ্যাও নির্দিষ্ট করে নেয়া অপরিহার্য। (৫) বিক্রিতব্য জিনিস পরিশোধের তারিখ এবং স্থানও চুক্তিতে নির্ধারণ করে নেয়া অপরিহার্য।

উল্লেখ্য, টাকার বিনিময়ে টাকা বেশি নেয়া যাবে না। এটা সুস্পষ্ট সূদ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা বহুগুণ বৃদ্ধি করে চক্রবৃদ্ধি হারে সূদ খাবে না। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যাতে তোমরা সফল হও’ (সূরা আলে ইমরান: ১৩০)। আবূ সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, ‘দীনারের বিনিময়ে দীনার ও দিরহামের বিনিময়ে দিরহাম সমান সমান হওয়া চাই। আর যে বেশি দিবে বা বেশি নিবে সে সূদের লেন-দেন করল’ (ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৯৬)। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘আমরা রাসূল (ﷺ)-এর যুগে খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করতাম। তখন তিনি আমাদের নিকট এ মর্মে আদেশ দিয়ে লোক পাঠাতেন যে, এ মাল বিক্রয় করার পূর্বেই যেন ক্রয়ের স্থান হতে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। বরং নিজেদের ঘরে তুলে নেয়ার আগেই বিক্রয় করলে তাদেরকে শাস্তি দেয়া হত’ (ছহীহ বুখারী, হা/২১৩৭; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫২৭)। অন্যত্র বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন খাদ্যদ্রব্য ক্রয় করবে সে তা নিজ আয়ত্বে নেয়ার পূর্বে বিক্রয় করতে পারবে না’ (ছহীহ বুখারী, হা/২১৩৬; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫২৫; আল-বাহরুর রায়িক, ৬/১৬৫)।


প্রশ্নকারী : আব্দুল মালেক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ।





প্রশ্ন (৩৫) : তাহাজ্জুদ পড়ার পরে ফজরের সময় হওয়ার আগেই যদি কেউ ফজরের সুন্নাত পড়ে ফেলে তাহলে তা ছহীহ হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : ঈদের ছালাতের খুত্ববাহ শেষে দানকৃত অর্থ দায়িত্বপ্রাপ্ত ইমামকে দেয়া কতটুকু শরী‘আত সম্মত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৪) : বিবাহ করে আমল করলে দ্বিগুন ছওয়াব পাওয়া যায় এই কথা কি সত্য? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩১) : কুরআন মাজীদের অনেক জায়গাতে আল্লাহ তা‘আলা নিজেকে আমরা (বহুবচন) শব্দ ব্যবহার করেছেন। এর ব্যাখ্যা কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৭) : জনৈক আলেম বলেন, গান শুনলে ক্বিয়ামতের দিন কানের ভিতরে গরম সীসা ঢেলে দেয়া হবে। এ মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) : পরবর্তীতে মূল্য বৃদ্ধির আশায় আলু-পেঁয়াজ ইত্যাদি নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য স্টক রাখার ব্যাপারে শরী‘আতের বিধান কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৫) : ‘ছালাতুর রাগায়েব’ পড়া কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : জনৈক ব্যক্তি এমন এলাকায় থাকে সেখানকার সকল মসজিদে ফজরের ছালাত অনেক দেরি করে আরম্ভ হয় এবং ছালাত শেষে দেখা যায় যে, আকাশ অনেক ফর্সা/আলোকিত হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে অত্র মসজিদে জামা‘আত শুরুর আগে মসজিদে গিয়ে একা একা ছালাত পড়া কি জায়েয হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩২) : ছালাতে সিজদা থেকে উঠে দাঁড়ানোর পর যদি সন্দেহ হয় একটা সিজদা হয়েছে না-কি দু’টি সিজদা হয়েছে? এক্ষেত্রে করণীয় কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১২) : আমরা আলেমদের নিকট থেকে শুনেছি যে, আল্লাহর গুণবাচক নাম রাখলে নামের পূর্বে ‘আব্দ’ যোগ করতে। যেমন আব্দুর রহমান। কিন্তু ‘মালেক’-এর পূর্বে কি ‘আব্দ যোগ করতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : ইয়াতীমের সম্পদ গ্রাস করার পরিণাম কী? ইয়াতীমের মাল দেখাশোনা বা ব্যবসায় খাটালে তা থেকে লভ্যাংশ নেয়া কি জায়েয? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : জনৈক আলেম বলেন, ‘কোন ব্যক্তি যদি কোন মুমিন ব্যক্তির প্রতি অভিশাপ করে, তাহলে সে তাকে হত্যা করার মত পাপ করল’। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ