উত্তর : প্রথমতঃ যাকাত একটি ইবাদত এবং ইসলামের রুকনসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম রুকন বা খুঁটি। এটি বণ্টন করার জন্য শারী‘আতসম্মত কিছু নির্দিষ্ট খাত আছে, যা মেনে চলা আবশ্যিক। হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা, হাসপাতালের ডেকোরেশন করা, যন্ত্রপাতি ক্রয় করা যাকাতের খাতের মধ্যে পড়ে না (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৮/৩১৬-৩১৭, ৯/২৮৫ ও ৪২৩; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৪/২৬০-২৬১; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন, ১৮/৪৮৪-৪৮৬ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৫২৮১০)।
আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ‘ছাদাক্বাসমূহ (যাকাত) তো শুধু ফক্বীর, মিসকীন, নিঃস্ব, অভাবগ্রস্তদের জন্য এবং ছাদাক্বাহ (আদায়ের) কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য এবং যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য এবং দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য, আল্লাহর পথে (সংগ্রামকারী) এবং (বিপদগ্রস্ত) মুসাফিরের জন্য। এ হল আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত (বিধান)। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা আত-তাওবাহ: ৬০)।
দ্বিতীয়তঃ যে ব্যক্তি কোন হাসপাতালের ফান্ডে যাকাত প্রদান করেছে সেটি শরী‘আত অনুমোদিত খাতে ব্যয় করা হয়েছে কি-না, তা নিশ্চিত হওয়া খুবই দুষ্কর। হতে পারে সেটা হাসপাতালের ডেকোরেশনের খাতে, হাসপাতাল সম্প্রসারণে, যন্ত্রপাতি ক্রয় করা, কর্মচারীদের বেতন, বোনাস দেয়া কিংবা ধনী-গরীব, মুসলিম-অমুসলিম নির্বিশেষে সকল রোগীর মাঝে বিলিকৃত ঔষধ ক্রয়ের পিছনে ব্যয় করা হয়েছে। রোগ হলেই মানুষ যাকাত গ্রহণ করার হক্বদার হয় না, বরং যাকাত নিতে হলে সে মানুষকে ফকির কিংবা মিসকীন (যার প্রয়োজন পূরণের মত সম্পদ নেই) হতে হবে কিংবা তাকে হাসপাতালের কাছে ঋণী হতে হবে, তখন তাকে যাকাত থেকে এ ঋণ পরিশোধ করার মত অর্থ দেয়া যাবে। অবশ্যই সে রোগীকে মুসলিম হতে হবে। তাই হাসপাতালে যাকাত দিলে সেটি সন্দেহ থেকে মুক্ত নয়। এভাবে যাকাত আদায়কারী কখনোই নিশ্চিত হতে পারেন না যে, তিনি শরী‘আত অনুমোদিত খাতে যাকাত আদায় করেছেন (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৬৭৩৮০)।
সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি বলেন, ‘এ ধরণের ফান্ডে যাকাতের অর্থ প্রদান করাটা আমরা জায়েয মনে করি না। এ ফান্ডের সুবিধাভোগীরা কুরআনুল কারীম নির্ধারিত যাকাতের খাতগুলোর অন্তর্ভুক্ত হবে কি-না সে নিশ্চয়তা ও আস্থা না থাকার কারণে’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৯/৪৩৭-৪৩৮ পৃ.)। তবে হ্যাঁ, যদি এ খাতে যাকাতের কিছু অর্থ প্রদান করা ব্যতীত যাকাত প্রদানকারীর অন্তর প্রশান্ত না হয় তাহলে তিনি নিজে হাসপাতালে গিয়ে রোগীর খোঁজ-খবর নিয়ে তাদের মধ্যে যে রোগী অভাবী, যাচাই-বাছাই করে নিজ হাতে তাকে কিংবা তার অভিভাবককে যাকাতের অর্থ দিতে পারেন, যদি অভিভাবকেরা রোগীর পেছনে খরচ করে থাকে।
প্রশ্নকারী : সাখাওয়াত, নেত্রকোনা।