উত্তর : শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) ও শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘এ আট শ্রেণীর মধ্যে কোন্ শ্রেণীর লোক যাকাত পাওয়ার অধিক উপযুক্ত? আমরা বলব, যে শ্রেণীর লোকদের প্রয়োজন সর্বাধিক তীব্র। কেননা এ শ্রেণীগুলোর প্রত্যেকে যাকাত পাওয়ার বৈশিষ্ট্যধারী। এদের মধ্যে যে শ্রেণীর প্রয়োজন তীব্র সেই শ্রেণী যাকাত পাওয়ার অধিক উপযুক্ত। সাধারণতঃ গরীব ও মিসকীনদের প্রয়োজনই তীব্র হয়ে থাকে। তাই আল্লাহ তা‘আলা প্রথমে তাদেরকে উল্লেখ করে বলেন, ‘ছাদাক্বাহ্ তো শুধু ফকীর, মিসকীন ও ছাদাক্বাহ আদায়ের কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য, যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য, দাসমুক্তির জন্য, ঋণগ্রস্তদের জন্য, আল্লাহর পথে ও মুসাফিরদের জন্য। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু উছাইমীন, ১৮শ খণ্ড, প্রশ্ন নং ২৫১)।
যাকাত পাওয়ার অধিকারীরা সকলেই একই মর্যাদাভুক্ত নয়। বরং তাদের স্তরভেদ রয়েছে। মালিকী মাযহাবের আলিমগণ উল্লেখ করেছেন যে, যাকাত প্রদানকারীর জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে নিরুপায় ব্যক্তিকে অন্য ব্যক্তিদের উপর প্রাধান্য দেয়া এবং অন্য শ্রেণীর লোকদের চেয়ে তাকে বেশী দেয়া। যদি ফক্বীর বা ভিক্ষুক কাজ করতে অক্ষম হয়, কোন রোগ বা মুসিবতের শিকার হয়ে সে পঙ্গু হয়ে যায় তাহলে তাকে যাকাত দেয়াটা তাকীদপূর্ণ। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘এগুলো অভাবগ্রস্থ লোকদের প্রাপ্য, যারা আল্লাহ্র পথে এমনভাবে ব্যাপৃত যে, দেশময় ঘুরাফিরা করতে পারে না, আত্মসম্মানবোধে না চাওয়ার কারণে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অভাবমুক্ত মনে করে, আপনি তাদের লক্ষণ দেখে চিনতে পারবেন। তারা মানুষের কাছে নাছোড় হয়ে চায় না। আর যে ধন-সম্পদ তোমরা ব্যয় কর, নিশ্চয় আল্লাহ সে ব্যাপারে সবিশেষ জ্ঞানী’ (সূরা আল-বাক্বারাহ: ২৭৩; আল-মাওসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ, ২৩/৩০৩ পৃ.)। সাঈদ ইবনু জুবাইর (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তারা এমন শ্রেণীর লোক যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করতে গিয়ে আহত হয়ে আজীবনের জন্য রোগা হয়ে পড়েছে। আল্লাহ তা‘আলা মুসলিমদের সম্পদে তাদের অধিকার সাব্যস্ত করেছেন’ (আদ-দুররুল মানছূর, ২/৮৯ পৃ.)।
সুতরাং বুঝা যাচ্ছে যে, ছাদাক্বাহ বণ্টনের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়ার মাপকাঠি হচ্ছে প্রয়োজন ও অভাব। যদি আপনার কাছে প্রতীয়মান হয় যে, ভিক্ষুকদের মধ্যে কোন একজন অন্যদের চেয়ে বেশী অভাবী, তাহলে সেই ব্যক্তি ছাদাক্বাহ পাওয়ার অধিক উপযুক্ত। আর আপনি যে পরিমাণ অর্থ ছাদাক্বাহ করতে চান সেটা যদি দু’জন ভিক্ষুকের প্রয়োজন পূরণ করার মত হয়, তাহলে আপনি দু’জনের মাঝে ভাগ করে দিন। যদি কেবল একজনের প্রয়োজন পূরণ করার মত হয়, তাহলে আপনি দু’জনের মধ্যে যে কোন একজনকে দিতে পারেন এবং একজনকে দিতে হলে অন্যজন থেকে লুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা করুন, যাতে করে তার মনে আফসোস বা হিংসা না হয় (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৭৫৪০৬)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি যাকাত সামান্য হয়, তাহলে সেটা একটা অভাবী পরিবারকে দেয়াই সর্বাধিক উপযুক্ত ও অধিক উত্তম। যেহেতু অল্প মাল ভাগ করে দিলে এর উপকারিতা কমে যায়’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু বায, ১৪/৩১৬ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : সুমন, রাজশাহী।