উত্তর : যাকাতুল ফিতর বণ্টনের খাত নির্ধারণে দু’টি ভিন্ন মত পরিলক্ষিত হয়। প্রথম মতঃ হানাফী, শাফিঈ ও হাম্বালী মাযহাবত্রয়ের মতানুযায়ী ‘ফিতরা বণ্টন করার খাত ও সম্পদের যাকাত বণ্টন করার খাত একই’ (হাশিয়াহ ইবনে আবিদীন, ২/৩৬৮; আল-মাজমূঊ, ৬/১৮৬; আল-হাবিউল কাবীর, ৩/৩৮৭; আছনাল মাত্বালিব, ১/৪০২; কাশশাফুল ক্বিনা‘, ২/২৪৬; আল-মুগনী, ৩/৯৮ পৃ.)। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন, নিশ্চয় ছাদাক্বাসমূহ (যাকাত) তো শুধু ফক্বীর, মিসকীন, নিঃস্ব, অভাবগ্রস্তদের জন্য এবং ছাদাক্বাহ (আদায়ের) কাজে নিযুক্ত কর্মচারীদের জন্য এবং যাদের অন্তর আকৃষ্ট করতে হয় তাদের জন্য এবং দাসমুক্তির জন্য, ঋণ ভারাক্রান্তদের জন্য, আল্লাহর পথে (সংগ্রামকারী) এবং (বিপদগ্রস্ত) মুসাফিরদের জন্য। এ হল আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত (বিধান)। আর আল্লাহ মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়’ (সূরা আত-তাওবাহ : ৬০)। সুতরাং যাকাতুল ফিতরও উল্লেখিত আয়াতে বর্ণিত ছাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত। আর যেহেতু যাকাতুল ফিতরও ওয়াজিব ছাদাক্বার অন্তর্ভুক্ত, সেহেতু তাকে নির্দিষ্ট কোন খাতের সঙ্গে নির্ধারিত করা জায়েয নয় (আল-হাবিউল কাবীর, ৩/৩৮৭ পৃ.)।
দ্বিতীয় মতঃ মালিকী ও হাম্বালী মাযহাবদ্বয়, শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম, ইমাম শাওকানী, শায়খ ইবনে বায ও শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ফিতরা শুধু গরীব, ফক্বীর- মিসকীনদের জন্যই নির্ধারিত’ (হাশিয়াতুল আদাবী, ১/৬৪৫; আশ-শারহুল কাবীর, ১/৫০৮; যাদুল মা‘আদ, ২/২১; আল-ইনসাফ, ৩/১৩২; মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৫/৭৩; নাইলুল আওত্বার, ৪/২১৮; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৪/২০২; আশ-শারহুল মুমতি‘, ৬/১৮৪ পৃ.)।
ইবনু আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, রাসূল (ﷺ) ছাদাক্বাতুল ফিতর ফরয করেছেন- অশ্লীল কথা ও বেহুদা কাজ হতে ছিয়ামকে পবিত্র করার জন্য এবং মিসকীনদের খাদ্যের ব্যবস্থার জন্য। যে ব্যক্তি (ঈদের) ছালাতের পূর্বে তা আদায় করে সেটা ক্ববুল ছাদাক্বা হিসাবে গণ্য হবে। আর যে ব্যক্তি ছালাতের পরে আদায় করে, তা সাধারণ দান হিসাবে গৃহীত হবে’ (আবূ দাঊদ, হা/১৬০৯; ইবনু মাজাহ, হা/১৮২৭; ছহীহুল জামি‘, হা/৩৫৭০)। অতএব এ হাদীছ প্রমাণ করে যে, ‘ছাদাক্বাতুল ফিতর মিসকীনদের খাদ্য স্বরূপ ফরয করা হয়েছে’। সুতরাং এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা অপরিহার্য’ (নাইলুল আওত্বার, ৪/২১৮ পৃ.)। আর নবী (ﷺ) ফিতরাকে যাকাতের মত আটটি খাতে বিভক্ত করেননি। আর তিনি এর আদেশ দিয়েছেন এবং কোন ছাহাবীও এরূপ করেননি (যাদুল মা‘আদ, ২/২১ পৃ.)।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘দলীলের দিক থেকে এই অভিমতটিই মজবুত’ (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৫/৭১ পৃ.)। ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘নবী (ﷺ)-এর আদর্শ ছিল মিসকীনদেরকে দেয়া। তিনি আট শ্রেণীর মাঝে ভাগ করতেন না এবং সে নির্দেশও দেননি এবং কোন ছাহাবীও এমন কাজ করেননি। ছাহাবীদের পরেও কেউ করেননি’ (যাদুল মা‘আদ, ২/২২ পৃ.)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘ফিতরা বণ্টনের খাত হচ্ছে গরীব ও মিসকীন’ (মাজমূউ ফাতাওয়া ইবনে বায, ১৪/২০২ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : আব্দুল আযীয, সাতক্ষীরা।