উত্তর : ছালাত اَلْأحْكَامُ التَّكْلِيْفِيَّةُ বা অপরিহার্য দায়িত্বমূলক বিধি-বিধানের অন্তর্ভুক্ত। প্রত্যেক বালিগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলিম নর-নারীর উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা ফরয। এ ব্যাপারে কারোর কোন দ্বিমত নেই’ (আল-মুহাল্লা, ২/৪; বিদায়াতুল মুজতাহিদ, ১/৮৯; মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়্যাহ, ৩৫/১০৬ পৃ.)। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘তোমরা ছালাত আদায় করো এবং তাঁকে ভয় করো। আর তাঁরই নিকট তোমাদেরকে সমবেত করা হবে’ (সূরা আল-আন‘আম: ৭২)।
ফরয ইবাদতে কোন ছাড় নেই, যে কোন মূল্যে তা আদায় করতেই হবে। কেননা ওয়াজিব বলতে বুঝায়: ما أمر به الشارع على وجه الإلزام ‘শরী‘আত প্রণেতা আবশ্যকতার ভিত্তিতে যা পালনের আদেশ করেন, তাকে ওয়াজিব বলে’। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত।
আর ছালাত অস্বীকারকারী সন্দেহাতীতভাবে কাফির, বরং অবজ্ঞা ও অবহেলা করে বা অমনোযোগী হয়েও যে ব্যক্তি ছালাত ত্যাগ করবে সেও নিশ্চিতরূপে কাফির ও মুশরিক এবং সে দ্বীন ইসলাম থেকে বহির্ভূত। চার মাযহাবের আলেমগণ বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য করলেও ছালাত ত্যাগকারীর বিধান সম্পর্কে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। ছালাত ত্যাগকারীর শাস্তি হত্যা, মৃত্যুর পর তাকে গোসল দেয়া যাবে না, তার উপর জানাযার ছালাত আদায় করা যাবে না এবং তাকে মুসলিমদের ক্ববরে দাফন করা যাবে না’। হাম্বালী মাযহাবের মতানুযায়ী ‘ছালাত ত্যাগকারীকে তিনদিন দাওয়াত দিতে হবে এবং বলতে হবে যে, ছালাত আদায় না করলে তোমাকে হত্যা করা হবে’ এর পরেও যদি সে ছালাত আদায় না করে তাহলে তাকে তিনদিন বন্দি করে রাখতে হবে, এর পরেও যদি তাওবাহ না করে তবে তাকে স্বধর্মত্যাগী হিসাবে হত্যা করতে হবে’। হানাফী মাযহাবের মতানুযায়ীও তাকে স্বধর্মত্যাগী হিসাবে হত্যা করতে হবে (আল-মাউসূ‘আতুল ফিক্বহিয়্যাহ বা ফিক্বাহ্ বিশ্বকোষ, ২৭/৫৩-৫৪; আল-মুগনী, ২/১৫৬ ও ৩২৯; মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২০/৯৭; আছ-ছালাতু ওয়া আহ্কামু তারিকীহা, পৃ. ৬৪; মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল ইবনে উছাইমীন, ১২/৫১ পৃ.)।
আব্দুল্লাহ ইবনু শাক্বীক্ব আল-উক্বাইলী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ছাহাবীগণ ছালাত ব্যতীত অন্য কোন আমাল ছেড়ে দেয়াকে কুফুরী মনে করতেন না। অর্থাৎ ছালাত ত্যাগ করাকে কুফরী মনে করতেন’ (তিরমিযী, হা/২৬২২; সনদ ছহীহ, ছহীহ আত-তারগীব, ১/২২৭-৫৬৪)। আনাস ইবনু মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত, নবী (ﷺ) বলেন, ‘মুমিন বান্দা ও শিরকের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে ছালাত ত্যাগ করা। অতএব যে ব্যক্তি ছালাত ত্যাগ করল, সে অবশ্যই শিরক করল’ (ইবনু মাজাহ, হা/১০৮০, ৮৯২; সনদ ছহীহ, ছহীজ আত-তারগীব, হা/৫৬৪-৫৬৫, ১৬৬৭)।
আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) বলেন, ‘তোমরা সঠিকভাবে আযানের সাথে সাথে এই পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতের প্রতি সবিশেষ নযর রাখবে। কেননা এই পাঁচ ওয়াক্ত ছালাতই হচ্ছে হিদায়াতের পথ। মহান আল্লাহ তাঁর নবী (ﷺ)-এর জন্য হিদায়াতের এ পথ নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমাদের (সাধারণ) ধারণা, স্পষ্ট মুনাফিক্ব ব্যতীত কেউ জামা‘আত থেকে অনুপস্থিত থাকতে পারে না’ (আবূ দাঊদ, হা/৫৫০; ছহীহ মুসলিম, হা/৬৫৪; নাসাঈ, হা/৮৪৮)। অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুয়াযযিনের আযান শুনা সত্ত্বেও কোনরূপ ওজর ছাড়া (বিনা কারণে) জামা‘আতে ছালাত আদায়ে বিরত থাকে তার অন্যত্র (একাকী) ছালাত ক্ববুল হবে না। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ওযর কী? নবী (ﷺ) বললেন, ভয়-ভীতি অথবা অসুস্থতা’ (আবূ দাঊদ, হা/৫৫১; ইবনু মাজাহ, হা/৭৯৩)।
শাইখ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘নিঃসন্দেহে ছালাতে অবজ্ঞা করা, অবহেলা করা, তুচ্ছজ্ঞান করা এবং অমনোযোগী হওয়া বিশাল বড় গুনাহের কাজ। এটা মুনাফিক্বদের বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তা‘আলা ছালাত আদায়ে অলসতা পোষণকারী সম্পর্কে বলেছেন, ‘নিশ্চয় মুনাফিক্বরা আল্লাহর সাথে ধোঁকাবাজি করে, বস্তুত তিনিই তাদেরকে ধোঁকায় ফেলেন। আর যখন তারা ছালাতে দাঁড়ায় তখন শৈথিল্যের সাথে দাঁড়ায়, শুধু লোক দেখানোর জন্য এবং আল্লাহকে তারা অল্পই স্মরণ করে’ (সূরা আন-নিসা: ১৪২)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘কাজেই দুর্ভোগ সেই ছালাত আদায়কারীদের জন্য, যারা তাদের ছালাত সম্বন্ধে উদাসীন’ (সূরা আল-মাঊন: ৪-৫)। সুতরাং পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত নিয়মিতভাবে নির্ধারিত সময়ে আদায় করা প্রত্যেক মুসলিমের উপর অপরিহার্য। বিশেষ করে পুরুষদের জন্য অপরিহার্য হল, আযানের ধ্বনি শোনা মাত্রই মসজিদের দিকে ধাবিত হওয়া’ (মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাত ইবনে বায, ১০/২৮৫ পৃ.)। ইসহাক্ব ইবন রাহওয়াই (রাহিমাহুল্লাহ), সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটি ও শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন শারঈ কারণ ছাড়া সজ্ঞানে এক ওয়াক্তের ছালাত ছেড়ে দেয় এবং তার সময় অতিবাহিত হয়ে যায়, তাহলে সে কাফির’ (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৫/৪১ ও ৬/৪০, ৫০ পৃ.; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে বায, ২৯/১৭৯ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : রায়হান, তেজগাঁও, ঢাকা।