উত্তর : বাজনা বা বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা ইসলামে হারাম (মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১১/৫৩৫-৫৭৭; তাফসীরে ত্বাবারী, ২১/৪০; তাফসীরে ইবনে কাছীর, ৩/৪৫১; ফাৎহুল বারী, ১০/৫৫ পৃ.)। অশ্লীলতার ধারক-বাহক ও প্রচারকদের শাস্তি সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করে মহান আল্লাহ বলেন,
اِنَّ الَّذِیۡنَ یُحِبُّوۡنَ اَنۡ تَشِیۡعَ الۡفَاحِشَۃُ فِی الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَہُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ۙ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ
‘নিশ্চয় যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্য রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জানো না’ (সূরা আন-নূর: ১৯)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘(হে নবী!) আপনি বলুন, আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতাকে, পাপাচারকে ও অসংগত বিদ্রোহকে’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ৩৩)।
গান-বাজনা ইসলামে চিরতরে হারাম। রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের কতক লোক মদের ভিন্নতর নামকরণ করে তা পান করবে। আর (পাপাসক্ত অবস্থায়) তাদের সামনে বাদ্যবাজনা চলবে এবং গায়িকা নারীরা গীত পরিবেশন করবে। আল্লাহ তা‘আলা এদেরকে মাটির নিচে ধসিয়ে দিবেন এবং তাদের কতককে বানর ও শূকরে রূপান্তরিত করবেন’ (ইবনু মাজাহ, হা/৪০২০; আবূ দাঊদ, হা/৩৬৮৮)। সুতরাং গান গাওয়া ব্যক্তি মুসলিম হোক কিংবা অমুসলিম তাতে কোন যায় আসে না। আর বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার যতই কম থাকুক না কেন, তবুও হারাম। তবে হ্যাঁ, এমন মিউজিক বিহীন গান যার শব্দগুলো রুচিসম্মত এবং তা ইসলামিক চিন্তাধারার সাথে সাংঘর্ষিকও নয়, এমন নাশীদ বা গীত শ্রবণ করা দোষনীয় নয়। যেমন শায়খ মুহাম্মাদ ইবনু ছালিহ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) ও শায়খ ছালিহ আল-মুনাজ্জিদ (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, ‘মিউজিক এবং অতিরঞ্জিত নিষিদ্ধ কথাবার্তা থেকে মুক্ত গজল, কবিতা, দেশাত্মবোধক গান অথবা গীত শ্রবণ করা দোষনীয় নয়। দাফ্ ব্যতীত অন্য কোন বাজনা বা বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করা হারাম।
অনুরূপভাবে পুরুষদের জন্য নারীদের কন্ঠ শ্রবণ করাও হারাম। তবে এর চাইতে উত্তম হল- নিজের অতিরিক্ত সময় কুরআন তিলাওয়াত, যিকির-আযকার, নির্ভরযোগ্য বক্তার বক্তব্য শ্রবণ অথবা কোন শাইখের দারস্ শ্রবণ করা। যা তার উভয় জগতের জন্যই কল্যাণকর হবে’ (লিক্বাউল বাব আল-মাফতূহ, ১৪/১১১ পৃ.; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-৩৮০৯৩৩)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম ও ইমাম শাত্বিবী (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, ِسَدُّ الذَّرَائِع ‘পাপের দরজা বন্ধ করার লক্ষ্যে বাজনা বিহীন হলেও গান শ্রবণ না করাই উচিত। এমন প্রত্যেক বৈধ কাজ যা মানুষকে অবৈধ কাজের দিকে ধাবিত করার সম্ভাবনা রয়েছে এবং তার মধ্যে যদি কোন শারঈ কল্যাণ না থাকে, তবে সেটি অবৈধ হিসাবেই বিবেচিত হবে’ (ফাতাওয়া আল-কুবরা, ৪/৪৬৫; ইগাছাতুল লাহফান, ১/৪২৬-৪২৭; আল-মুওয়াফিক্বাত, ৫/১৭৯-১৮২ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : আহমাদ আবিদ, লক্ষ্মীপুর, রাজশাহী।