শুক্রবার, ০৭ মার্চ ২০২৫, ০৮:২২ পূর্বাহ্ন
উত্তর : উক্ত বিশ্বাস সঠিক নয়। খানকা ব্যবসায়ীরা উক্ত ভ্রান্ত আক্বীদা সমাজে চালু রেখেছে। তারা কতিপয় হাদীছের অপব্যাখ্যা করে থাকে। যেমন- রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, ‘নবীগণ তাদের কবরে জীবিত থেকে ছালাত আদায় করছেন’ (মুসনাদে বাযযার, হা/৬৮৮৮; মুসনাদে আবী ইয়ালা, হা/৩৪২৫; বায়হাক্বী, হায়াতুল আম্বিয়া, পৃ. ৩; সনদ ছহীহ, সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৬২১)। অন্য হাদীছে বলেন, ‘মি‘রাজের রাত্রে আমি যখন লাল টিলার নিকট দিয়ে মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে অতিক্রম করছিলাম, তখন তিনি তাঁর কবরে দাঁড়িয়ে ছালাত আদায় করছিলেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২৩৭৫, ‘মর্যাদা’ অধ্যায়, ‘মূসা (আলাইহিস সালাম)-এর ফযীলত’ অনুচ্ছেদ-৪২)। ‘নিশ্চয় মহান আল্লাহ যমীনের উপর নবীগণের শরীরকে হারাম করে দিয়েছেন’ (আবূ দাঊদ, হা/১০৪৭ ও ১৫৩১; মিশকাত, হা/১৩৬১ ও ১৩৬৬)।

মূলত রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মারা গেছেন এটিই সঠিক আক্বীদা। আল্লাহ তা‘আলা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে লক্ষ্য করে বলেন,

اِنَّکَ مَیِّتٌ وَّ  اِنَّہُمۡ  مَّیِّتُوۡنَ  -ثُمَّ  اِنَّکُمۡ  یَوۡمَ الۡقِیٰمَۃِ عِنۡدَ رَبِّکُمۡ تَخۡتَصِمُوۡنَ.

‘আপনিও মারা যাবেন এবং তারাও মারা যাবে। অতঃপর ক্বিয়ামত দিবসে তোমরা পরস্পর তোমাদের প্রতিপালকের সামনে বাক-বিতণ্ডা  করবে’ (সূরা আয-যুমার : ৩০-৩১)। এছাড়াও এ ব্যাপারে অনেক আয়াত ও হাদীছ বিদ্যমান রয়েছে।

তবে উপরে বর্ণিত হাদীছগুলোও ছহীহ। কিন্তু তা বারযাখী জীবনের বিষয় অর্থাৎ দুনিয়াবী জীবন ও পরকালীন জীবনের মাঝের জীবন। দুনিয়াবী জীবনের সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। দুনিয়ার মানুষের কথা শুনতে পান না, উপকার বা ক্ষতিও করতে পারেন না। তাই কুরআন ও ছহীহ হাদীছে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, ঠিক সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে। কারণ এগুলো গায়েবের বিষয়। যেমন- রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মূসা (আলাইহিস সালাম)-কে কবরে ছালাত আদায় করতে দেখলেন কিন্তু একটু পরে ৬ষ্ঠ আসমানে দেখা হল (ছহীহ বুখারী, হা/৩৮৮৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২৩৭৫, মিশকাত, হা/৫৮৬২)। এরপর যখন ফিরে আসলেন, তখন বায়তুল মাক্বদেছে সকল নবী-রাসূল তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলেন এবং তাঁর ইমামতিতে ছালাত আদায় করলেন (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭২, ‘ঈমান’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭৭)। সুতরাং এগুলোর কোন কল্পিত ব্যাখ্যা করা যাবে না।

দ্বিতীয়তঃ কবরে ছালাত আদায়ের বিষয়টি কেবল নবীদের সাথেই খাছ। অন্যদের ব্যাপারে নয়। কারণ মৃত্যুর পর কোন ইবাদত নেই। তাছাড়া কবরস্থানে ছালাত আদায় করা নিষেধ (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৩০; মিশকাত, হা/৭১২)। অথচ তাঁরা সেখানে ছালাত আদায় করছেন। তাই এগুলো দুনিয়াবী বিষয়ের সাথে মিলানো যাবে না।

তৃতীয়তঃ সাধারণ মানুষকে কবরে রাখার পর লোকেরা যখন চলে আসে, তখনও মৃত ব্যক্তি তাদের পায়ের জুতার শব্দ শুনতে পায় (ছহীহ বুখারী, হা/১৩৩৮, ‘জানাযা’ অনুচ্ছেদ-৬৭; মিশকাত, হা/১২৬)। কিন্তু কুরআন-হাদীছ থেকে এর বেশী কিছু জানা যায় না। তাই যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, সেভাবেই বিশ্বাস করতে হবে।

মূলত উক্ত বিষয়গুলো কোনটিই দুনিয়াবী জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। কারণ ছাহাবায়ে কেরাম উক্ত হাদীছগুলো জানা সত্ত্বেও কখনোই রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কবরের কাছে গিয়ে কোন কিছু চাননি কিংবা তাঁর কাছে কোন অভিযোগ করেননি এবং তাঁকে অসীলা মেনে দু‘আও করেননি। বরং দুর্ভিক্ষের কারণে তাঁরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কবরের কাছে না গিয়ে তাঁর জীবিত চাচা আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-এর কাছে গিয়ে দু‘আ চেয়েছেন (ছহীহ বুখারী, হা/১০১০, ‘ইস্তিস্কা’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৩)। কারণ কবরে যাওয়ার পর দুনিয়ার সাথে যেমন কোন সম্পর্ক থাকে না, তেমনি কারো কোন উপকার বা ক্ষতি করারও ক্ষমতা থাকে না।

তাই ‘হায়াতুন্নবী’ কথাটিও সঠিক নয়। বিনা পূঁজির ব্যবসা করার জন্য পীরপূজারী ও কবরপূজারীরা এই বাক্যটির  আমদানি করেছে। এছাড়া শিরকের ব্যবসাকে আরো জোরদার করার জন্য তথাকথিত পীর-ফকীর ও অলীরাও কবরে জীবিত আছে এবং মানুষের উপকার বা ক্ষতি করতে পারে বলে প্রচার করে থাকে। এগুলো সব ধর্মের নামে ভণ্ডামি। এ সমস্ত প্রতারণা থেকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।


প্রশ্নকারী : আব্দুল আযীয, বরিশাল।




প্রশ্ন (২): হায়েযের সময়সীমা ব্যাপারে একেক হাদীছে একেক রকম বর্ণনা পাওয়া যায়। প্রশ্ন হল- ঠিক কতদিন পর্যন্ত ছালাত আদায় করা যাবে না? যদিও একেক মাসে একেক সময়সীমা থাকে। কখনো ৪ দিন আবার কখনো ৭ দিন। বিষয়টি বুঝিয়ে বলবেন। - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৯) : ঋণগ্রস্ত ব্যক্তির যাকাত ফরয হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৭) : চার রাক‘আত বিশিষ্ট ছালাতের প্রথম বৈঠকে দরূদ পড়া যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১১) : ঈমান রক্ষার কোন দু‘আ আছে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৪) : এক ব্যক্তি তার স্ত্রী ও দুই কন্যা রেখে মারা গেছেন। কোন পুত্র সন্তান নেই। এ ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির সম্পত্তি ওয়ারিছ হিসাবে কারা কতটুকু অংশ পাবে? মৃত ব্যক্তির ভাই বা বোন কি কোন অংশ পাবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৩৪) : সাহু সিজদা দেয়ার কারণগুলো কী কী? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২) : জানাযার ছালাতে ছুটে যাওয়া তাকবীরগুলো কীভাবে আদায় করব? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৭) : রামাযানের ক্বাযা ছিয়াম দ্রুত আদায় করতে হবে, না-কি বিলম্বে আদায় করতে হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (৬) : মৃত ব্যক্তির নামে খাওয়ানো, চার দিন পর দু‘আ অনুষ্ঠান, চল্লিশা উৎযাপন, মৃত্যু বার্ষিকী উৎযাপন ইত্যাদির মাধ্যমে কি মৃত ব্যক্তি শাস্তিপ্রাপ্ত হবে? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১০) : সহশিক্ষা চালু আছে এমন কলেজে পড়া বা শিক্ষকতা করা কি শরী‘আত সম্মত? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (২৫) : দোকানে বিড়ি-সিগারেট ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ
প্রশ্ন (১৮) : সন্তান জন্ম হওয়ার ৩০ মিনিট পরে মারা গেলে তার আক্বীক্বা দিতে হবে কি? - ফাতাওয়া বোর্ড, মাসিক আল-ইখলাছ

ফেসবুক পেজ