উত্তর : ‘শরী‘আহ’ শব্দের অর্থ শরী‘আত, আইন, বিধান, পথ, পন্থা ইত্যাদি। শরী‘আত বলতে সম্পূর্ণ দ্বীনকেই বুঝায়, যাকে আল্লাহ তা‘আলা চয়ন করেছেন তাঁর বান্দাদের জন্য, তাদেরকে এর মাধ্যমে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসার জন্য। যার মধ্যে আদেশ-নিষেধ ও হালাল-হারাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। আল্লাহ বলেন,
ثُمَّ جَعَلۡنٰکَ عَلٰی شَرِیۡعَۃٍ مِّنَ الۡاَمۡرِ فَاتَّبِعۡہَا وَ لَا تَتَّبِعۡ اَہۡوَآءَ الَّذِیۡنَ لَا یَعۡلَمُوۡنَ
‘অতঃপর আমরা আপনাকে শরী‘আতের বিশেষ বিধানের উপর প্রতিষ্ঠিত করেছি, কাজেই আপনি তার অনুসরণ করুন। আর অজ্ঞদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না’ (সূরা আল-জাছিয়া : ১৮; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২১০৭৪২; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২/২১৯ পৃ.)।
খলীল ইবনু আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘শরী‘আহ বলতে দ্বীনের ঐ বিধানসমূহ বুঝায়, যা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বান্দাদের জন্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং তার আনুগত্য করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন ছালাত, যাকাত, ছিয়াম, হজ্জ ইত্যাদির বিধান’ (আল-আইনু, ১/২৫৩ পৃ.; আস-সিহাহু, ৩/১২৩৬ পৃ.)। ইমাম ইবনু হায্ম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর পূর্বের নবীগণের পবিত্র জিহ্বা দ্বারা যা কিছু দ্বীনের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করেছেন, তাকেই শরী‘আহ বলে’ (আল-ইহকাম, ১/৪৬ পৃ.)। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কোন মানুষের জন্য শরী‘আতের কোন বিষয় থেকে বেরিয়ে যাওয়া উচিত নয়। বরং মানুষের যাবতীয় প্রয়োজনাদি শরী‘আতের মধ্যে বিদ্যমান। যেমন উছূল বা মূলনীতি, নীতিমালা, রীতি-নীতি, বিধি-বিধান, নিয়মাবলী, ফুরুঊ বা শাখা-প্রশাখা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়াদি, অবস্থাসমূহ, আমলসমূহ, রাজনৈতিক বিষয়াদি, বৈষয়িক বিষয়াদি এছাড়াও অন্যান্য বিষয় (ইবনু তাইমিয়্যাহ, মাজমূঊল ফাতাওয়া, ১৯/৩০৯ পৃ.)।
দ্বিতীয়তঃ নিঃসন্দেহে কুরআনুল কারীমের পর হাদীছ শরী‘আতের দ্বিতীয় উৎস। হাদীছের উপর আমল ব্যতীত শরী‘আতের কোন একটি বিধান পূর্ণাঙ্গরূপে পালন করা সম্ভব নয়। কুরআন মান্যকারীদের উপর হাদীছ মানা অপরিহার্য। হাদীছের সত্যতা ও বাস্তবতাকে অস্বীকার করে কেউ মুসলিম থাকতে পারে না। কেননা পবিত্র কুরআনের মধ্যেই হাদীছের প্রামাণিকতা বিদ্যমান (সূরা আত-তাওবাহ : ২৯; সূরা আন-নিসা : ৬৫, ১১৫; সূরা আল-হাশর : ৭; সূরা আন-নাজম : ৩-৪; সূরা আলে ‘ইমরান : ৩১)। হাদীছের প্রামাণিকতায় এ রকম আরো সহস্র আয়াত বিদ্যমান। অতএব বুঝা যাচ্ছে যে, ‘আহলে কুরআন’ নামক দলটি কুরআন-সুন্নাহ ও শরী‘আতের দলীলাদি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞ। এদের ভ্রান্ত মতবাদ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনেক পূর্বেই সতর্ক করেছেন (আবূ দাঊদ, হা/৪৬০৪-৪৬০৫, সনদ ছহীহ)।
প্রশ্নকারী : আল-মামুন, নওদাপাড়া, রাজশাহী।