উত্তর : কুরআন ও ছহীহ হাদীছের বক্তব্য অনুযায়ী ঝাড়ফুঁক বৈধ হওয়ার জন্য তিনটি শর্ত রয়েছে। প্রথম শর্ত : ‘সেটি কুরআনের আয়াত অথবা আল্লাহ তা‘আলার যিকির এবং বৈধ দু‘আর মাধ্যমে হবে’। ইমাম ইবনু আব্দিল বার্র (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আমার জানা মতে বদ-নযর, জ্বর, সাপ-বিচ্ছুর দংশন ইত্যাদি বিষয়ে ঝাড়ফুঁক বৈধ হওয়ার ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য নেই। যদি সেই ঝাড়ফুঁক আল্লাহ তা'আলার গুণবাচক নাম ও বৈধ দু‘আর মাধ্যমে হয়’ (আল-ইসতিযকার, ১৯/২৭ পৃ.)।
দ্বিতীয় শর্ত : সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য আরবীতে ঝাড়ফুঁক করা অপরিহার্য। এমন ভাষায় ঝাড়ফুঁক করা হারাম যে ভাষা সম্পর্কে সে অবগত নয়। জনসম্মুখে তাদের ছলচাতুরি গোপন রাখার জন্য কবিরাজরা এমন ভাষা দ্বারা ঝাড়ফুঁক করে যার অর্থ তারা নিজেরাই বুঝে না। তবে আরবী না জানা ব্যক্তি যদি মূল আরবী ঝাড়ফুঁকের অনূদিত অর্থ মাতৃভাষায় বলে এবং তাতে যদি নিষিদ্ধ কিছু না থাকে তাহলে তা বৈধ হিসাবে বিবেচিত হবে ইনশাআল্লাহ। ইমাম খাত্ত্বাবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘আরবী ব্যতীত অন্য ভাষায় ঝাড়ফুঁক করা নিষিদ্ধ। কেননা এর ফলে যাদু অথবা কুফরীর মধ্যে লিপ্ত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যদি সে অর্থগুলো যথাযথভাবে বুঝতে পারে এবং সে কথাগুলো যদি আল্লাহর যিকির-আযকার সম্বলিত হয়, তাহলে জায়েয হবে। আল্লাহই সর্বজ্ঞ জ্ঞাত’ (মা‘আলিমুস সুনান, ৪/২২৬ পৃ.)।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘যদি ঝাড়ফুঁকের অর্থ বুঝা যায়, তবে এমন শব্দ দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা দ্বীন ইসলামে জায়েয। যার মাধ্যমে সে আল্লাহকে ডাকবে, তাঁকে স্মরণ করবে, তাঁর সৃষ্টির কথা তাঁর সামনে তুলে ধরবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। এ পদ্ধতিতে ঝাড়ফুঁক করা জায়েয। যেমন হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, নবী (ﷺ) বলেছেন, ‘মন্ত্র দিয়ে ঝাড়ফুঁক করতে কোন আপত্তি নেই, যদি তার মধ্যে শিরকী কিছু না থাকে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২২০০)। অন্যত্র তিনি বলেন, জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন, রাসূল (ﷺ) মন্ত্র তথা ঝাড়ফুঁক করাতে নিষেধ করেছেন। (এই নিষেধের পর) আমর ইবনে হাযমের বংশের কয়েকজন লোক এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমাদের কাছে এমন একটি মন্ত্র আছে, যার দ্বারা আমরা বিচ্ছুর দংশনে ঝাড়ফুঁক করে থাকি। অথচ আপনি মন্ত্র (ঝাড়-ফুঁক) পড়া হতে নিষেধ করেছেন। অতঃপর তারা মন্ত্রটি নবী করীম (ﷺ)-কে পড়ে শুনাল। তখন তিনি বললেন,
مَا أَرَى بَأْسًا مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَنْفَعْهُ
‘আমি তো এর মধ্যে দোষের কিছু দেখছি না। অতএব তোমাদের যে কেউ নিজের কোন ভাইয়ের কোন উপকার করতে পারে, সে যেন অবশ্যই তার উপকার করে’ (ছহীহ মুসলিম, হা/৫৮৬১; মুসনাদে আহমাদ, হা/১৪৪২২; মিশকাত, হা/৪৫২৯)। পক্ষান্তরে যদি ঝাড়ফুঁকের মধ্যে শিরকের মত নিষিদ্ধ কথাবার্তা থাকে অথবা যদি অর্থ না বুঝা যায়, হতে পারে তার মধ্যে কুফরী মূলক কথা আছে, কারোর জন্য এরূপ শব্দ দ্বারা ঝাড়ফুঁক করা জায়েয নয় (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২৪/২৭৭-২৭৮ পৃ.)।
তৃতীয় শর্ত : ঝাড়ফুঁকদাতা এবং ঝাড়ফুঁক গ্রহীতা উভয় ব্যক্তিই এই বিশ্বাস রাখবে যে, ঝাড়ফুঁক নিছক একটি মাধ্যম, আল্লাহর আদেশ ব্যতীত সে কোন প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হবে না (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফাতাওয়া নং-২২৩৫০৫)। হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, তিনটি শর্তসাপেক্ষে ঝাড়ফুঁক বৈধ হওয়ার ব্যাপারে আলেমগণ ঐকমত্য পোষণ করেছেন। আল্লাহর কালাম অথবা তাঁর আসমা' ও সিফাত দ্বারা হবে। আরবী ভাষায় হবে অথবা এমন ভাষায় যার অর্থ বোধগম্য হবে এবং এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত ঝাড়ফুঁক নিজে কিছুই করতে পারবে না (ফাৎহুল বারী, ১০/১৯৫ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : আফযাল, ময়মনসিংহ।