উত্তর : স্ত্রীর কুকথা ও গালাগালির কারণে তীব্র রাগান্বিত হয়ে অনুভূতিহীন ও উম্মাদ অবস্থায় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে যদি কেউ স্ত্রীকে ত্বালাক্ব দেয় এবং এ বিষয়ে যদি সৎ ও বিশ্বস্ত কোন ব্যক্তি সাক্ষী দেয়, তাহলে ত্বালাক্ব পতিত হবে না। নবী করীম (ﷺ) বলেন, لَا طَلَاقَ وَلَا عَتَاقَ فِيْ غِلَاقٍ قَالَ أَبُوْ دَاوُدَ الْغِلَاقُ: أَظُنُّهُ فِي الْغَضَبِ ‘রাগের অবস্থায় কোন ত্বালাক্ব সংঘটিত হয় না এবং দাসত্বমুক্ত করা যায় না। ইমাম আবূ দাঊদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, আমার মতে ‘আল-গিলাক্ব’ অর্থ রাগ’ (আবূ দাঊদ, হা/২১৯৩; ইবনে মাজাহ, হা/২০৪৬; সনদ হাসান, ছহীহুল জামি‘, হা/৭৫২৫)। বিদ্বানগণের একটি জামা‘আত বলেন, 'গিলাক্ব’ শব্দের অর্থ হল রাগ, অর্থাৎ প্রচ- রাগ, এমন রাগ যা মানুষকে জ্ঞানশূন্য করে দেয়, পাগল ও উম্মাদের মত আচরণ করে, বুদ্ধি লোপ পেয়ে যায়, অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে, এমতাবস্থায় ত্বালাক্ব সংঘটিত হয় না। মূলত রাগের তিনটি অবস্থা। যথা: প্রথমতঃ এত তীব্র রাগ যে, ব্যক্তি তার অনুভুতি হারিয়ে ফেলে। পাগল বা উন্মাদের মত হয়ে যায়। সকল আলিমের মতে, এ লোকের ত্বালাক্ব কার্যকর হবে না। কারণ সে বিবেকহীন পাগল বা উন্মাদের পর্যায়ভুক্ত। দ্বিতীয়তঃ এখানেও রাগ তীব্র আকার ধারণ করে। কিন্তু সে অনুভূতিহীন হয়ে পড়ে না। বরং তার কাছে কিছু অনুভূতি অবশিষ্ট থাকে। এবং কিছু বুদ্ধিমত্তা, সে যা বলছে সেটা সে বুঝতে পারছে এবং বিবেক জাগ্রত আছে। তবে তার রাগ তীব্র আকার ধারণ করার ফলে ত্বালাক্বের দিকে ধাবিত হয়েছে। এ লোকের ত্বালাক্বের ব্যাপারে আলিমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। তবে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য মতানুযায়ী, এ লোকের ত্বালাক্বও কার্যকর হবে না। তৃতীয়তঃ অভ্যাসগত রাগ হয়েছে কিন্তু তা মাত্রাতিরিক্ত নয়। সাধারণভাবে ঝগড়া-ঝামেলার সময় যেমন রাগ উঠে থাকে। কিন্তু সে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েনি। স্ত্রীর কোন কাজ অপসন্দ করা কিংবা মনোমালিন্য থেকে স্বামীর এই রাগের উদ্রেক হয়। কিন্তু এত তীব্র আকার ধারণ করে না যে, এতে বিবেক-বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে কিংবা নিজের ভাল-মন্দের বিবেচনা করতে পারে না। আলিমগণের সর্বসম্মতিক্রমে এ অবস্থায় ত্বালাক্ব সংঘটিত হয়ে যাবে (শায়খ ইবনু বায, ফাতাওয়াতুত ত্বালাক্ব, পৃ. ১৯-২১)। রাগাম্বিত ব্যক্তির ত্বালাক্বের ব্যাপারে শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) এবং তাঁর ছাত্র ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) এভাবেই বিশ্লেষণ করেছেন এবং ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) এ সম্পর্কে একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করেছেন। নাম দিয়েছেন ‘ইগাছাতুল লাহ্ফান ফী হুকমি ত্বালাক্বিল গাযবান’ (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২২০২৪; যাদুল মা‘আদ, ৫/২১৫; কুয়েতী ফিক্বাহ্ বিশ্বকোষ, ১৮/২৯ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : আব্দুল জাব্বার, রংপুর।