উত্তর : কোন মুসলিম কুফুরী করলে তাকে কাফির সাব্যস্ত করার জন্য তাড়াহুড়া করা যাবে না। কারণ রাসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘কেউ তার ভাইকে কাফির বললে, তাদের দু’জনের একজনের উপর তা বর্তাবে’ (ছহীহ বুখারী, হা/৬১০৩, ৬১০৪)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘কেউ তার ভাইকে ‘কাফির’ বলে সম্বোধন করলে উভয়ের একজনের উপর তা ফিরে আসবে। যাকে কাফির বলা হয়েছে সে কাফির হলে ঠিক আছে, নতুবা কথাটি বক্তার উপরই ফিরে আসবে (ছহীহ বুখারী, হা/৬০৪৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৬০; ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফাৎওয়া নং-৮৫১০২)।
এক্ষেত্রে নিম্মোক্ত বিষয়গুলো লক্ষণীয়। শায়খ আল-উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘তাকফীর বা কাউকে কাফির সাব্যস্ত করার জন্য চারটি শর্ত থাকা অতীব যরূরী। প্রথম শর্ত: ‘তার দ্বারা সংঘটিত উক্ত কথা, কর্ম বা আদেশ অমান্য করা যে কুফুরী’ তা কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর আলোকে স্পষ্ট প্রমাণিত হতে হবে’ (সূরা আল-আ‘রাফ : ৩৩; সূরা বানী ইসরাঈল : ৩৬)। দ্বিতীয় শর্ত: কাজটি যে মুকাল্লাফ তথা ভারার্পিত ব্যক্তি দ্বারা সংঘটিত হয়েছে তা প্রমাণিত হওয়া (সূরা বানী ইসরাঈল: ৩৬; ছহীহ বুখারী, হা/৬০৪৫; ছহীহ মুসলিম, হা/৬০, ৬১, ১১৯)। তৃতীয় শর্ত: তার উপর হুজ্জাত তথা দলীল বা প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত হতে হবে। অর্থাৎ তাকে কুফর সম্পর্কে অবগত করা হয়েছে এমন হতে হবে (সূরা আন-নিসা: ১৬৫; সূরা আল-আন‘আম: ১৯; সূরা বানী ইসরাঈল: ১৫; সূরা আল-ক্বাছাছ: ৫৯; ছহীহ মুসলিম, হা/১৫৩)। চতুর্থ শর্ত: মানিঊত তাকফীর তথা কাফির সাব্যস্তকরণে বাঁধা সৃষ্টিকারী কারণ উপস্থিত না থাকা (মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন, ৩/৫২-৫৫ পৃ.)।
কাফির সাব্যস্তকরণে বাঁধা সৃষ্টিকারী কারণসমূহ হল: (১) বাধ্য করা হলে। যদি তাকে জোরপূর্বক কুফুরী করতে বাধ্য করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে তার উপর কুফুরীর বিধান প্রযোজ্য হবে না (সূরা আন-নাহল: ১০৬)। (২) অজ্ঞতাপ্রসূত: শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম ইবনুল ক্বাইয়িম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে কাফির সাব্যস্ত করার জন্য, তার কাছে এ সম্পর্কে ইসলামের বাণী পৌঁছে থাকতে হবে। সে যদি তাকফীর বা কুফরের বিধান সম্পর্কে অবগত না হয়, সেক্ষেত্রে তার উপর কুফুরীর বিধান প্রযোজ্য হবে না (আল-ইসতিগাছাহ, ১/৩৮১; মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনু তাইমিয়্যাহ, ৩/২৩০ ও ৩৫/১৬৪-১৬৫ পৃ.; মাদারিজুস সালিকীন, ১/৩৬৭; আল-মুগনী, ৩/২৪৯; ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ২/৯৬-১০০; ফাতাওয়া ইবনে বায, ২/৫২৮-৫২৯ পৃ.)। (৩) তা’বীল বা ভুল ব্যাখ্যার কারণে। ইমাম শাফিঈ, শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ, হাফিয ইবনু হাজার আসক্বালানী ও শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুমুল্লাহ) বলেন, ‘ভুল বুঝার কারণে বা ভুল ব্যাখ্যার কারণে যদি কোন ব্যক্তি ভুলবশত কুফরের মধ্যে পড়ে যায়, সেক্ষেত্রে তার উপর কুফুরীর বিধান সাব্যস্ত করা যায় না (আল-উম্ম, ৬/২০৫; মিনহাজুস সুন্নাহ, ৫/২৩৯; আল-ইসতিগাছাহ, ১/২৮২-২৮৩; ফাৎহুল বারী, ১২/৩০৪; মাজমূঊ ফাতাওয়া ইবনু উছাইমীন, ২/১৩৬ পৃ.)।
তাছাড়া আক্বীদাগত কোন বিষয় প্রকাশ্যে অস্বীকার করলে সে কাফির হয়ে যাবে এবং তাওবাহ না করা পর্যন্ত তাকে কাফির বলা যাবে। যেমন আল্লাহর সাথে প্রকাশ্যে শিরক করা, প্রকাশ্যে কোন ফরয বিধানকে অস্বীকার করা, হারামকে হালাল মনে করা ইত্যাদি। অনুরূপভাবে আল্লাহ, রাসূল বা দ্বীনকে গালি দেয়া। যেমন শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের কাফির বলেছেন, ‘যারা বলে যে, কুরআন পরিবর্তিত হয়েছে, অথবা যারা বলে কুরআনের কিছু অংশ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে (আস-সারিমূল মাসলুল, ১/৫৯০ পৃ.)। অনুরূপভাবে ইমাম মালিক (রাহিমাহুল্লাহ) ও ইমাম নববী (রাহিমাহুল্লাহ) শী‘আ-রাফিযীদের সম্পর্কে বলেন, যারা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর নির্দোষিতা ও পবিত্রতা সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে অথবা তাঁকে গালিগালাজ করে আলেমদের ঐকমত্যানুযায়ী তারা কাফির (তাফসীরুল কুরতুবী, ১২/২০৫; শারহুল মুসলিম, ১৭/১১৭ পৃ.; শায়খ উছাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) রচিত ‘আল-ক্বাওলুল মুফীদ ‘আলা কিতাবিত তাওহীদ’ দ্র.)।
প্রশ্নকারী : রাসেল মাহমুদ, হাজীগঞ্জ।