উত্তর : অপবিত্র অবস্থায় কুরআন স্পর্শ না করে যিকির হিসাবে মুখস্থ তিলাওয়াত করা যাবে। বরং এ অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করা ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত। যেমন আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ كَانَ يَتَّكِئُ فِيْ حَجْرِيْ وَأَنَا حَائِضٌ ثُمَّ يَقْرَأُ الْقُرْآنَ ‘নবী (ﷺ) আমার কোলে হেলান দিয়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেন। আর তখন আমি ঋতুবতী অবস্থায় ছিলাম’ (ছহীহ বুখারী, হা/২৯৭; ছহীহ মুসলিম, হা/৩০১)।
ঋতুবতী মহিলারা কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে না মর্মে স্পষ্ট কোন ছহীহ দলীল নেই। শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ليس في منع الحائض من القراءة نصوص صريحة صحيحة ‘ঋতুবতী নারীদের কুরআন তিলাওয়াত করা যাবে না মর্মে কোন স্পষ্ট ছহীহ দলীল নেই’ (ফাতাওয়াউল ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, প্রশ্ন নং-২৫৬৪)।
আম্মা আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,كَانَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ يَذْكُرُ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى كُلِّ أَحْيَانِهِ ‘রাসূল (ﷺ) সর্বাবস্থায় মহামহিয়ান আল্লাহর যিকির করতেন’ (ছহীহ মুসলিম, ‘হায়েয’ অধ্যায়, ‘অপবিত্র ও অন্যান্য অবস্থায় মহান আল্লাহর যিকর করা প্রসঙ্গে’ অনুচ্ছেদ ৩/৩০, হা/৩৭৩, ৭১২; তা‘লীকুল বুখারী, হা/৬৩৪; সিলসিলা ছহীহাহ, হা/৮৩৪; মুসনাদে আহমাদ, হা/২৪৪১০, ২৫২০০)। হাদীছটি প্রমাণ করে যে, নবী (ﷺ) পবিত্র, অপবিত্র, ওযূ অবস্থায়, ওযূবিহীন অবস্থায়, বসে, দাঁড়িয়ে, হেলান দিয়ে, হাঁটা ও আরোহী সকল অবস্থায়ই আল্লাহর যিকর করতেন। এখানে যিকর কথাটি ‘আম’ তথা ব্যাপক অর্থবোধক, যা তাসবীহ, তাহলীল, তাকবীর, তাহমীদ, ইস্তিগফার, দরূদ সকল প্রকার যিকর শামিল করে।
শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, তাছাড়া এটি সর্বজনবিদিত যে, রাসূল (ﷺ)-এর যুগেও মহিলা ছাহাবীদের হায়েয আসত কিন্তু তাদেরকে কুরআন তিলাওয়াত করা থেকে নিষেধ করা হয়েছে এরকম কোন প্রমাণ নেই। যেমন যিকির-আযকার ও দু‘আ থেকে নিষেধ করা হয়নি, তেমনি কুরআন তিলাওয়াত থেকেও নিষেধ করা হয়নি। বরং রাসূল (ﷺ)-এর যুগে ঋতুবতী মহিলাগণ ঈদের খুত্ববাহ ও দু‘আয় শরীক হতেন। উম্মু আত্বিয়্যাহ (রাযিয়াল্লাহু আনহা) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, দুই ঈদের দিনে ঋতুবতী মহিলাদেরকে ঈদের মাঠে বের করার জন্য আমাদের আদেশ করা হয়েছে। তবে ঋতুবতী মহিলারা মুছাল্লা থেকে পৃথক থাকবে এবং মুসলিমদের জামা‘আতে ও দু‘আতে শরীক হবে (ছহীহ বুখারী, হা/৩৫১; ছহীহ মুসলিম, হা/৮৯০)। তাছাড়া অপবিত্র অবস্থায় যে কুরআন স্পর্শ করতে নিষেধ করা হয়েছে, তা হল মুছহাফ বা মূল আরবী কুরআন (মাজমূঊল ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ, ২১/৪৬০; মুগনী শারহুল কাবীর, ২/৭৫ পৃ.)।
প্রশ্নকারী : মুহাম্মাদ গোলাম রব্বানী, সাঘাটা, গাইবান্ধা।