উত্তর : মৃত্যু সংবাদ জানানোর জন্য মসজিদে বা বাজারে-গ্রামে যেভাবে মাইকিং করা হয়, তা শরী‘আত সম্মত নয় (তিরমিযী হা/৯৮৬, সনদ হাসান)। অনুরূপ মসজিদের বোর্ডে কারো মৃত্যু সংবাদ লিখে প্রকাশ করাও জায়েয নয়। তবে নিকটাত্মীয় ও স্বজনদেরকে জানানোর জন্য মোবাইল বা অনলাইনে অবহিত করা জায়েয (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৯/১৪২ পৃ.)।
ইসলামের দৃষ্টিতে শোক সংবাদ তিন প্রকারের। যথা-
(১) হারাম শোক সংবাদ : যে প্রচারণা জাহিলী যুগের প্রচারণার ন্যায়। অর্থাৎ সাধারণ বাজার ও গণজমায়েতের স্থানগুলোতে ঘোষণার উদ্দেশ্যে মৃত্যুর সংবাদ জ্ঞাতকরণ করা এবং সেই সাথে মৃত ব্যক্তির বংশীয় গৌরব ও তার কীর্তিগুলো উল্লেখ করা কিংবা ঘোষণার সাথে বিলাপ, হাহাকার, আর্তনাদ ও হাহুতাশ প্রকাশ করা (হাশিয়াতুল জামাল ‘আলা শারহিল মানহাজ, ৩/৬৮৭ পৃ.)।
(২) মাকরূহ শোক সংবাদ : বংশীয় গৌরবগাঁথা কিংবা কীর্তি উল্লেখ না করে ঘোষণার মাধ্যমে মৃত্যু সংবাদ জ্ঞাতকরণ করা ও স্বর উচ্চ করা।
(৩) মুবাহ বা বৈধ শোক সংবাদ : কোন ঘোষণা ব্যতীত শুধু মৃত ব্যক্তির মৃত্যুর সংবাদটা জ্ঞাতকরণ করা। আলেমগণ বলেন, কোন ঘোষণা ব্যতীত শুধু জানাযার ছালাতের সময়কাল জ্ঞাতার্থে মৃত্যুর সংবাদটা জ্ঞাতকরণ করা বৈধ (ফাৎহুল ক্বাদীর, ২/১২৭; হাশিয়াতুদ দাসুক্বী, ১/২৪; নিহায়াতুল মুহতাজ, ৩/২০)। ছহীহ সুন্নাহর দলীলগুলো শেষ প্রকারের মৃত্যু সংবাদ বৈধ হওয়ার প্রমাণ বহন করে। যেমন নবী (ﷺ) নাজাশীর ক্ষেত্রে, মুতা যুদ্ধের শহীদদের ক্ষেত্রে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে জানিয়েছিলেন (ছহীহ বুখারী, হা/১৩২৮, ১৩৩৩, ৪৫৮; ছহীহ মুসলিম, হা/৯৫৬)।
কাসানী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, ‘মৃত ব্যক্তির মৃত্যু সংবাদটি তার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদেরকে জ্ঞাপন করাতে কোন আপত্তি নেই, যাতে করে তারা জানাযার ছালাত আদায় করা, দু‘আ করা ও দাফনে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির হক্ব আদায় করতে পারে। আর যেহেতু এই ধরণের সংবাদ দেয়ার মধ্যে নেক কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধকরণ ও প্রস্তুতি নেয়ার প্রতি উৎসাহিতকরণ রয়েছে, তাই এটি নেকী ও তাক্বওয়ার কাজে সহযোগিতা করার অন্তর্ভুক্ত এবং ভাল কাজের মাধ্যম হওয়া ও সন্ধান দেয়ার পর্যায়ভুক্ত হবে’ (বাদায়িউছ ছানায়ী, ৩/২০৭ পৃ.)।
সঊদী আরবের স্থায়ী ফাতাওয়া কমিটির আলেমগণ বলেন, ‘কেউ মারা গেলে তার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদেরকে আহ্বান করা জায়েয, যাতে করে তারা জানাযার ছালাতে অংশগ্রহণ করতে পারে, তার জন্য দু‘আ করতে পারে, তার লাশের সাথে যেতে পারে এবং তার দাফনকর্মে সহযোগিতা করতে পারে। কেননা নাজাশী বাদশাহ যখন মারা গিয়েছিলেন তখন নবী (ﷺ) তাঁর সাথীবর্গকে তার মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করেছিলেন যাতে করে তারা তার জানাযার ছালাত আদায় করতে পারেন (ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়িমাহ, ৮/৪০২ পৃ.)।
দ্বিতীয়তঃ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহ যেমনঃ ফেসবুক, টুইটার ও ওয়াটস্আপ ইত্যাদিতে কিংবা ইমেইলে ও মোবাইল ম্যাসেজে কারো মৃত্যু সংবাদ প্রচার করাতে কোন আপত্তি নেই। এক্ষেত্রে মূল উদ্দেশ্যে হল, যাতে করে মানুষ তার জানাযার ছালাতে উপস্থিত হতে পারে, মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ ও ক্ষমাপ্রার্থনা করতে পারে কিংবা মৃতের পরিবার-পরিজনের প্রতি সহানুভূতি ও সমবেদনা জ্ঞাপন করতে পারে। এ অবহিতকরণ মূলত ঐ সমস্ত নেক কাজের মাধ্যম (ইসলাম সাওয়াল ওয়া জাওয়াব, ফৎওয়া নং-২৩১০২৯)। শায়খ ইবনু বায (রাহিমাহুল্লাহ)-কে পত্র-পত্রিকায় মৃত্যু সংবাদ প্রচার করা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে উত্তরে তিনি বলেন, ‘খবর হিসাবে প্রচার করার ক্ষেত্রে এর মধ্যে কোন আপত্তিকর বিষয় আছে বলে আমাদের মনে হয় না (মাসায়িলুল ইমাম বিন বায, পৃ. ১০৮)।
প্রশ্নকারী : সেলিম, সাতক্ষীরা।